‘কমফোর্ট জোন’ বা ‘ স্বাচ্ছন্দের গণ্ডি’

‘কমফোর্ট জোন’ বা ‘ স্বাচ্ছন্দের গণ্ডি’

 ‘কমফোর্ট জোন’ বা ‘ স্বাচ্ছন্দের গণ্ডি’

 ‘কমফোর্ট জোন’ বলতে কী বোঝায়? নিশ্চিন্ত থাকা, নাকি শান্তির যায়গা?

আসলে কমফোর্ট জোন মূলত একটি আচরণগত অবস্থা, যেখানকার পরিবেশ আমাদের পরিচিত; নির্দিষ্ট একটা গণ্ডি, যেখানে কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এবং ফলাফল অনেকটাই নিশ্চিত। অর্থাৎ কাজও আমাদের জানা, ফলাফলও জানা।

 কমফোর্ট জোনের বাংলা অনুবাদ করলে হবে সুবিধাজনক স্থান বা স্বাচ্ছন্দ্যের গণ্ডি। মানুষমাত্রই এই গণ্ডির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। কারণ কমফোর্ট জোনের ভেতর থাকলে আমাদের মস্তিষ্ককে নতুন করে চিন্তা করতে হয় না। এতে আমাদের উপর চাপ অনুভব হয় না। কিন্তু যখনই আমরা কমফোর্ট জোন ছেড়ে বাইরে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ককে নতুন চিন্তা করতে হয়। কি পরিস্থিতি হবে, কিভাবে কাজটা হবে, নতুন কি ফলাফল আসবে, এগুলো নিয়ে মস্তিষ্ক চিন্তিত হয়ে পড়ে। এতে আমরা এক ধরনের চাপ অনুভব করি। সেই চাপের ভয়ে আমরা নতুন কিছু করতে চাই না, কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে চাই না। তবে কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে মস্তিষ্ক অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি অনুভব করলেও, সেটা যদি করা যায়, তবে সাথে সাথে সাথে খুলে যায় নতুন সুযোগ আর প্রাপ্তির দ্বার, যা থেকে এতদিন আমরা বঞ্চিত ছিলাম।

 আমরা মুসলমানরা অনেকেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহী, মুসলমানদের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনতে আশাবাদী, কিন্তু কমফোর্ট জোন বা স্বাচ্ছন্দের গণ্ডি থেকে থেকে বের হতে আগ্রহী না। চাপ নিতে আগ্রহী না, কিন্তু কমফোর্ট জোন থেকে বের না হলে মুসলমানদের সেই আশা কখনই পূরণ হবে না। কারণ কমফোর্ট জোনে থেকে যদি কাজ হতোই, তবে এতদিনে কাজ হতো। কিন্তু কাজ তো হচ্ছেই না, বরং মুসলমানরা আজ পিছিয়ে পড়ছে। এর মূল কারণ, আমরা কমফোর্ট জোনে আটকা পড়েছি।

 আবার শক্তি বা প্রভাব মূলত মানুষের ৩টি জিনিসের মধ্য দিয়ে আসে। ১. সময় (টাইম), ২. জ্ঞান (নলেজ), ৩. অর্থ (মানি)। অর্থাৎ যেখানে যত বেশি টাইম-নলেজ-মানি ব্যবহার করা যাবে, তত বেশি প্রভাব বা শক্তি তৈরী হবে। কিন্তু কাফির-মুশরিকদের দ্বারা প্রভাবিত বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা আমাদের এই টাইম-নলেজ-মানি ব্যবহারের একটা গণ্ডি বা সীমানা তৈরী করে দিয়েছে। যার বাইরে আমরা টাইম-নলেজ-মানি ব্যয় করার কথা চিন্তা করতে পারি না। যারা তাদের সীমানার মধ্যে যত বেশি টাইম-নলেজ-মানি ব্যয় করবে, সমাজ তাকে তত বেশি ‘গুড বয়’ বা ‘ভদ্র লোক’ বলবে। কিন্তু একজন তথাকথিত ‘গুড বয়’ বা ‘ভদ্র লোক’ কখন দ্বীন ইসলাম বা মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে নতুন কিছু করতেই পারে না। কারণ তারা তো কাফির-মুশরিকদের দ্বারা প্রভাবিত গণ্ডির বাইরে চিন্তাই করতে পারেনা, কাজ করা তো পরের বিষয়।

 এজন্য আমরা যদি দ্বীন ইসলাম বা মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করতে চাই, তবে তাদের তৈরী করে দেয়া গণ্ডির মধ্যে টাইম-নলেজ-মানি খরচ করলে হবে না। গণ্ডি ভেঙ্গে কাজ করতে হবে। গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে হবে, তবে আসবে সাফল্য।

Comments