প্রসঙ্গ: ভোট-নির্বাচন
পবিত্র দ্বীন ইসলামে খলিফা মনোনয়ন ও গণতন্ত্রে শাসক নির্বাচনে পদ্ধতিগত পার্থক্য
ভোট হয়ে গেলো দেশে। দাবী করা হয়, ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। আর সেই জনপ্রতিনিধি সংসদে গিয়ে জনগণের পক্ষে আইন পাশ করবে। অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে জনগণের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে।
কিন্তু বাস্তবে জনগণের আইনের শাসন কতটুকু প্রতিষ্ঠা পায় তা প্রশ্নের বিষয়। কারণ বর্তমানে সংসদে যে সমস্ত আইন পাশ হয়, তাতে জনগণের চিন্তাধারা থাকে না, বরং রাজনৈতিক বা সরকার দলীয় চিন্তাধারা থাকে। অর্থাৎ নতুন আইন পাশে ক্ষমতাসীন দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই এমপিকে ঐ আইনের পক্ষে থাকতে হবে। কিন্তু ঐ আসনের জনগণ উক্ত আইনের পক্ষ না বিপক্ষে আছেন, সেই কথা যাচাইয়ের সুযোগ নেই।
আসলে যে সাধারণ জনগণ ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করে, সে নিজেও কতটুকু বুঝে একজন এমপির কাজ কি? সে শুধু এতটুকু বুঝে, ঐ এমপি ক্ষমতায় গেলে তার এলাকার কথা সংসদে বলবে, আর তাতেই সরকার রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, সেতু বানাবে অর্থাৎ ইট-বালু-সিমেন্টের উন্নয়ন ছাড়া মানুষ আর কিছু বুঝে না।
কিন্তু একজন এমপির কাজ যে আইনও প্রণয়ন করা, সেটা কিন্তু সাধারণ জনগণ জানে না। এমপি অর্থ পার্লামেন্ট মেম্বার বা সংসদ সদস্য। সংসদ হচ্ছে এমন স্থান যেখানে আইন প্রণয়ন করা হয়। আর সংসদ সদস্য হচ্ছে ‘যিনি আইন প্রণয়ন করে’। তার মানে জনগণ কোন প্রার্থীকে এ কারণেও ভোট দেয় যে, সে তার প্রতিনিধি হয়ে সংসদে গিয়ে জনগণের পক্ষে আইন প্রণয়ন করবে।
এখানে আসলেই সমস্যা। যারা ভোট দিচ্ছে তার অধিকাংশই জানে না, একজন জনপ্রতিনিধি বা এমপির কাজ কি কি? দেখা যাবে, ১০০০ জনের মধ্যে ৯৯০ জন বিষয়টি জানে না। হতে পারে মাত্র ১০ জন জানেন। কিন্তু ভোট-নির্বাচন পদ্ধতিতে সেই ৯৯০ জনের প্রত্যেকের ভোটের মান ১। আবার ১০ জন যারা জানেন, তাদের প্রত্যেকের ভোটের মানও ১। অর্থাৎ নির্বাচনে মূর্খ-শিক্ষিত সবার ভোটের মান সমান। এজন্য কেউ যদি এমপি পদে নির্বাচিত হতে চায়, তবে সেই ৯৯০ জন মূর্খের অধিকাংশের ভোট পেলেই হবে, ১০ জন শিক্ষিতের ভোট না পেলেও চলবে। এজন্য গণতন্ত্রকে বলা হয় মূর্খের শাসন। কারণ যে যত বেশি মূর্খের ভোট পাবে, সে তত বেশি ক্ষমতায় যাবে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রকৃত আইনের শাসন নয়, বরং মূর্খের তৈরী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
এজন্য দেখবেন, মূর্খ মানুষরা যাদেরকে বেশি চিনে, মানে খেলোয়াড়, নায়ক, নায়িকা, গায়ক, গায়িকা, টিকটকার সব নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাকেরকে মানুষ চিনে বেশি, টেলিভিশন, সিনেমা, টিকটকে দেখে বেশি। তারা ভালো খেলতে পারে, তারা ভালো গান গাইতে পারে, তারা ভালো অভিনয় করতে পারে। কিন্তু তারা ভালো আইন প্রণয়ন করতে পারবে কি না, জনগণের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা তাদের আছে কি না, সেটা অধিকাংশ জনগণেরই জানা নাই। তাকে টেলিভিশন বা টিকটকে দেখছে, এটাই তার যোগ্যতা।
পবিত্র দ্বীন ইসলামে শাসন পদ্ধতি বা খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়াতে তাই এমন ভোট বা নির্বাচন পদ্ধতি নেই। দ্বীন ইসলামে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণই ঠিক করেন, কে শরীয়ত অনুসারে খিলাফত পরিচালনা করতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে খলিফা নিজেই পরবর্তী খলিফা কে হবেন, তা মনোনিত করে যান। কারণ খলিফা নিজেই সর্বাধিক এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হোন।
এ বিষয়টি আমরা হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে দেখতে পাই। দ্বীন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম উনাকে কিন্তু সব সাহাবীগণ মিলে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন নাই। বরং উক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কয়েকজন সাহাবী আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার হাদীস শরীফ সমূহকে অনুসরণ করে উনাকে ১ম খলিফা হিসেবে মনোনয়ন করেছেন। আবার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনিও একইভাবে মনোনিত হয়েছেন। সকল মানুষের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি হন নাই, বরং প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে ২য় খলিফা হিসেবে মনোনিত করেছেন। কারণ খলিফা হিসেবে তিনি সবচেয়ে বেশি প্রজ্ঞাবান ও উক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
এখানেই আসলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য। গণতন্ত্রে মূর্খদের সিদ্ধান্তে শাসক নির্বাচিত হয়, অপরদিকে পবিত্র দ্বীন ইসলামে খলিফা মনোনিত হোন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা প্রজ্ঞা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের সিদ্ধান্তে। পার্থক্যটা সেখানেই।