লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- নং-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- নং-২

 কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ æমাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلة العيدين
অর্থ: æনিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: æহযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, æকোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” æকোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” æকোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে æছূ"দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

‘শবে বরাত’ শব্দের তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ ও ভাষা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনসান তথা মানুষকে সৃষ্টি করে তাদের জীবন যাপন করার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর এই ইনসান তথা মানবজাতিকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে তাদের বসবাসের স্থানও নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
মানবজাতির বিভিন্ন দলভুক্ত এবং বিভিন্ন ভূখ-ে বসবাস করার কারণে তাদের মুখনিঃসৃত বাণী তথা তাদের মুখের ভাষা বা লিখনীও বিভিন্ন ভাষায় হয়ে থাকে। এর সমর্থনে মুহাদ্দিসীনে কিরাম উনারা ‘মিশকাত শরীফে’ বর্ণিত এ হাদীছ শরীফখানা পেশ করেন-
عن عمر بن خطاب رضى الله تعالى ... قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان هذا القران انزل على سبعة احرف
অর্থ: æহযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, পবিত্র কুরআন শরীফ সাত হুরুফ তথা সাত ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
মূলত হাদীছ শরীফখানার ব্যাখ্যার সার সংক্ষেপ হচ্ছে, পৃথিবীতে যত ভাষাভাষীর মানব সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের সকলের জন্য একমাত্র হিদায়েতের মূল হচ্ছে কুরআন শরীফ এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদেশ মুবারক তথা হাদীছ শরীফ। আর উভয়টি হচ্ছে আরবী ভাষায়। এ কারণে আরবী ভাষা সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। তাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
عن عبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى عليه وسلم احبوا العرب لثلاث لأنى عربى والقران عربى وكلام اهل الجنة عربى.
অর্থ: æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা তিন কারণে আরবী ভাষাকে মুহব্বত কর। কেননা আমি স্বয়ং আরবী অর্থাৎ আমার ভাষা মুবারক আরবী। আল্লাহ পাক-উনার কালাম পাকও হচ্ছে আরবী এবং জান্নাতের ভাষাও হচ্ছে আরবী। (তাফসীরে কুরতুবী ১ম খ-)
তাই আরবী ভাষা ব্যবহার করা সুন্নত এবং তা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে।
আরবী তথা কালামুল্লাহ শরীফ-এর ভাষা ব্যবহার করলে প্রতি হরফে দশগুণ ছওয়াব পাওয়া যায়। তবে তাই বলে অন্যান্য ভাষা যে ব্যবহার করা নাজায়িয তা নয়। বরং মূল আক্বীদা ঠিক রেখে যে কোন ভূখ-ের মানুষ যে কোন ভাষায় আল্লাহ পাক-উনাকে এবং আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে ডাকতে ও সন্তুষ্ট করতে পারেন; ছলাতে তথা নামাযে ও তিলাওয়াত ব্যতীত।
কাজেই বুঝা গেল যে, অন্যান্য ভাষা জায়িয তো অবশ্যই বরং এক দিক থেকে সুন্নতও বটে। কেননা, স্ব-স্ব স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য তাদের স্থানীয় তথা মাতৃভাষা ব্যবহার এই দিক থেকে সুন্নত। যেহেতু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় মাতৃভাষাই কথা বলতেন।
তবে আরবী ভাষা যে যে ক্ষেত্রে ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া আছে তা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রেই মূল ভাব ও বিষয় ঠিক রেখে একই বিষয় ও বস্তুকে বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার করাও আল্লাহ পাক-উনার সুন্নত। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এর ভাষা হচ্ছে আরবী। এতে অন্যান্য আজমী ভাষাও উল্লেখ করে আল্লাহ পাক অন্যান্য ভাষার ব্যবহার শিক্ষা দিয়েছেন।
কুরআন শরীফ-এ রয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনার নাম মুবারক যা ছুরইয়ানী ভাষার অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-উনাদের নাম মুবারক যা হিব্রু ভাষার অন্তর্ভুক্ত। এরূপ শব্দ মুবারক যা আরবী নয় বরং অনারবী তথা আরবী ও আজমী’র সংমিশ্রণে পবিত্র কুরআন শরীফ। তবে আরবী সংখ্যাধিক্য হওয়ার কারণে আরবী।
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফেও আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে আরবী ও অনারবী ভাষা ব্যবহার করেছেন। তদ্রুপ আওলিয়ায়ে কিরাম উনারা ওইরূপ ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ ও অঞ্চল ভেদে মূল বিষয় তথা একই বস্তু ও জিনিস এর মূল ভাব ঠিক রেখে একই অর্থে তা বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা জায়িয তো বটেই বরং ক্ষেত্র বিশেষে সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নাতে রসূলুল্লাহ ও সুন্নাতুল আওলিয়া এবং সুন্নতুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন।
এর অসংখ্য ও অগণিত উদাহরণ রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ বর্ণনা করা হলো-
যেমন, ‘ছলাত’ শব্দটি আরবী। যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচবার পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (শর্ত সাপেক্ষে) ফরয। ‘ছলাত’ শব্দটিকে ফারসী ভাষায় বলা হয় ‘নামায।’ উর্দূতেও নামায বা ‘বন্দিগী।’ বাংলায় ‘প্রার্থনা।’ ইংরেজিতে চৎধুবৎ (প্রেয়ার)। আরো অন্যান্য ভাষাভাষীর লোকেরা অন্যান্য ভাষায় ‘ছলাত’ শব্দকে বুঝিয়ে থাকে যার মূল ভাব, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
অনুরূপভাবে ‘রোযা’ শব্দটি ফারসী। আরবীতে বলা হয় ‘ছিয়াম।’ ইংরেজীতে বলে ঋধংঃরহম (ফেসটিং) বাংলায় আমরা বলে থাকি অভূক্ত থাকা, পানাহার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। যার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হলেও সকল ভাষার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ছিয়াম।’
অনুরূপভাবে معراج (মি’রাজ) এর রাত্রিকে আরবীগণ বলে থাকেন, ليلة المعراج (লাইলাতুল মি’রাজ) বা ليلة الاسراء (লাইলাতুল আসরা)
ফরাসীগণ ফারসী ভাষায় এটাকেشب معراج (শবে মি’রাজ) বলে থাকেন। উর্দূতে معراج كى ليل (মি’রাজ কী লাইল) বাংলায় যার অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বগমনের রাত। একইভাবে ক্বদরের রাতকে আরবীতে ليلة القدر ফারসীতে শবে ক্বদর বলা হয়।
তদ্রƒপ ‘শবে বরাত’ ফারসী ভাষায় ব্যবহার হয় যার বাংলায় অর্থ হচ্ছে ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রাত। আরবীতে শবে বরাতের বহু নাম রয়েছে যা বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে এবং সর্বজনমান্য তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবসমূহে উল্লেখ হয়েছে। যেমন-

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবে বর্ণিত ‘শবে বরাত’-এর অন্যান্য নামসমূহ

(১) الليلة المباركة (আল্লাইলাতুল মুবারকাতু) বরকতময় রজনী। (২) ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বানা) অর্ধ শা’বানের রজনী। (৩) ليلة القسمة (লাইলাতুল ক্বিস্মাতি) ভাগ্য রজনী। (৪) ليلة التكفير (লাইলাতুত্ তাকফীরি) গুনাহ্খতা ক্ষমা বা কাফ্ফারার রাত্রি। (৫) ليلة الاجابة (লাইলাতুল ইজাবাতি) দোয়া কবুলের রাত্রি। (৬) ليلة الحياة (লাইলাতুল হায়াতি) হায়াত বা আয়ু বৃদ্ধির রাত্রি। (৭) ليلة عيد الملائكة (লাইলাতু ঈদিল্ মালায়িকাতি) ফেরেশতাগণের ঈদের রাত্রি। (৮) ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাআতি) মুক্তির রাত্রি বা ভাগ্য বন্টনের রাত। (৯) ليلة التجويز (লাইলাতুত্ তাজবীযি) বিধান সাব্যস্ত করার রাত্রি। (১০) ليلة الفيصلة (লাইলাতুল ফায়সালাতি) সিদ্ধান্ত নেয়ার রাত্রি। (১১) ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছক্কি) ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত্রি। (১২) ليلة الجاءزة (লাইলাতুল জায়িযাতি) মহা পুরস্কারের রাত্রি। (১৩) ليلة الرجحان (লাইলার্তু রুজহানি) পরিপূর্ণ প্রতিদানের রাত্রি। (১৪) ليلة التعظيم (লাইলাত্ত্ ুতা’যীমি) সম্মান হাছিলের রাত্রি। (১৫) ليلة التقدير (লাইলাতুত্ তাক্বদীরি) তক্বদীর নির্ধারণের রাত্রি বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত।
(১৬) ليلة الغفران (লাইলাতুল গুফরানি) ক্ষমাপ্রাপ্তির রাত্রি। (১৭) ليلة العتق من النار (লাইলাতুল ইত্ক্বি মিনান্ নীরানি) জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাত্রি। (১৮) ليلة العفو (লাইলাতুল আফবি) অতিশয় ক্ষমা লাভের রাত্রি। (১৯) ليلة الكرام (লাইলাতুল কারামি) অনুগ্রহ হাছিলের রাত্রি। (২০) ليلة التوبة (লাইলাতুত্ তাওবাতি) তওবা কবুলের রাত্রি। (২১) ليلة الندم (লাইলাতুন্ নাদামি) কৃত গুনাহ স্মরণে লজ্জিত হওয়ার রাত্রি।
(২২) ليلة الذكر (লাইলাতুয্ যিকরি) যিকির-আযকার করার রাত্রি। (২৩) ليلة الصلوة (লাইলাতুছ্ ছলাতি) নামায আদায়ের রাত্রি। (২৪) ليلة الصدقة (লাইলাতুছ্ ছদাক্বাতি) দানের রাত্রি। (২৫) ليلة الخيرات (লাইলাতুল খইরাতি) নেক কাজ সম্পাদনের রাত্রি। (২৬) ليلة انزال الرحمة (লাইলাতু ইনযালির রহ্মাতি) রহমত নাযিলের রাত্রি।
(২৭) ليلة صلوة وسلام على سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم
(লাইলাতু ছলাতিন ওয়া সালামিন আলা সাইয়্যিদিল মুরসালীনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠের রাত্রি ইত্যাদি। এছাড়াও ‘শবে বরাতের’ আরো অনেক নাম রয়েছে। যা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।

পাক ভারত উপমহাদেশে উক্ত বরকতময রজনী ‘শবে বরাত’
হিসেবে মশহূর হওয়ার কারণ

স্থান, কাল, পরিবেশ ভেদে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের স্থানান্তরের কারণে এবং তাদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে একই অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলেও প্রাধান্য তথা মাশহুবিয়াত লাভ করে থাকে। যা মূলত একই বিষয় ও বস্তুকে বুঝিয়ে থাকে। যেমন, উল্লিখিত নামসমূহ দ্বারা ليلة النصف من شعبان বা শা’বানের ১৫ তারিখ রাতকে বুঝানো হয়। একে ফারসীতে ‘শবে বরাত’ বাংলায় ‘মুক্তির রাত’ বা ‘ভাগ্য রজনী’ বলে থাকে। আর এই ‘শবে বরাত’ শব্দটি যদিও বাহ্যত আরবী ও ফারসীর সমন্বয়ে গঠিত। তবুও তা ফারসী ভাষা। কেননা, ফারসী ভাষা মূলত আরবী ও ফারসীর সংমিশ্রণে গঠিত। তদ্রƒপ উর্দূ ভাষাও মূলত আরবী উর্দূ এর সংমিশ্রণে গঠিত। যেমন,
افتاب الدين عالمگیر شاه مخدوم شاه كبير. شاه عالم شاه صوفى. فول صراط. غول نور. شب معراد. اب حياة. قدرة خدا. اب زمزم. شب قدر
অনুরূপভাবে شب براءة শব্দটিও আরবী ফারসীর সমন্বয়ে গঠিত। এরূপ আরো কোটি কোটি শব্দ রয়েছে। যা দ্বারা অসংখ্য অগণিত বিশ্বখ্যাত কিতাবও রচিত হয়েছে। তবে আমাদের দেশে ফারসী ও আরবী ভাষার প্রচলন এত ব্যাপক কেন? এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, এদেশের মানুষ ছিল বিভিন্ন বাতিল ধর্মের করাগ্রাসে নিমজ্জিত। আরবী ও ফারসী দেশ থেকে অসংখ্য আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইসলামের মর্মবাণী এদেশের মানুষদের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে কালিমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। ফলে এদেশের মানুষ মুসলমানের মহা সনদ লাভ করেন। বিশেষ করে ফারসী ভাষাভাষী আওলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। উনাদের ছোহবত ও কুরবতের কারণে তাদের ফারসী ভাষাগুলো আমাদের কাছে ক্রিয়া করে মাশহূরিয়াত লাভ করেছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘শবে বরাত।’
উল্লেখ্য, এক ভাষায় অপর ভাষার শব্দের মিশ্রণ মূলত একটি অনিবার্য ঐতিহ্য। প্রায় সব ভাষায়ই এর নিদর্শন রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর নিদর্শন অনেক। এবং এটি প্রায় সব ভাষারই প্রকৃতি। ব্যাকরণের ভাষায় একে বলা হয় মিশ্র শব্দ। প্রতি ভাষায়ই মিশ্র শব্দের ব্যবহার রয়েছে।
কাজেই যারা বলবে যে, অর্ধেক আরবী আর অর্ধেক ফারসী ভাষার শব্দের মিশ্রন গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মূলত শুধু ইসলাম সম্পর্কেই অজ্ঞ নয় বরং দুনিয়াবী জ্ঞানের দিক থেকেও তারা প্রাইমারি স্তরের জ্ঞানও রাখে না।

কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই ‘শবে বরাত’ প্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
(১)
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: æনিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)

উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন

ليلة مباركة দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-
(২)
هى ليلة النصف من شعبان وسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك
অর্থ: æলাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান তথা অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)কে বুঝানো হয়েছে। এবং উহার নামে নামকরণ করা হয়েছে যেমন ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমত) তথা রহমতের রাত, ليلة المباركة (লাইলাতুল মুবারাকাতু) তথা বরকতের রাত। ليلة الصك (লাইলাতুছ ছেক) ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত তথা ভাগ্য রজনী।”
আর ليلة مبارك (বরকতপূর্ণ রাত) দ্বারা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী আয়াত শরীফের يفرق (বণ্টন করা হয়।) শব্দ দ্বারা। কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসীরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (লেখা হয়) يفصل (ফায়ছালা করা হয়) يتجوز (বণ্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) æفيصله‘ (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়ছালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে। কাজেই يفرق শব্দের অর্থ ও তার ব্যাখ্যার দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল যে, ليلة المباركة দ্বারা ليلة النصف من شعبان অর্ধ শা’বানের রাত, বা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বৎসরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্য লিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসে ليلة القدر বা শবে ক্বদরে তা চালু করা হয়। এ জন্য
ليلة النصف من شعبان
অর্ধ শাবানের রাতকে ليلة التجويز (নির্ধারণের বা বৈধকরণের রাত) এবং ليلة القدر কে ليلة التنفيذ (নির্ধারিত ফয়ছালা কার্যকরী করার রাত বা বৈধকরণ বিষয়ের কার্যকরীকরণের রাত) বলা হয়। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীর খাযেন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ও রুহুল বায়ান) ليلة المباركة এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খ-ের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(৩)
قال عكرمة هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيه امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد. روى البغوى عن محمد بن الميسرة بن الاخفس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح و يولد له ولقد اخرج اسمه فى الموتى.
وروى ابو الضحى عن ابن عباس ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: æপ্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা আদ দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত। এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়ছালা করা হয় এবং কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়ছালা করা হয়। অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ কোন প্রকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয় না। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহন করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয়। æতাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ৮ খ-ের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(৪)
انها ليلة النصف من شعبان ... وما روى عن القاسم بن محمد عن ابيه او عمه عن جده عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ينزل الله جل ثناؤه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناه او مشركا بالله.
অর্থ: (অনেকেই বলেছেন ليلة مباركة তথা বরকতপুর্ণ রাতই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত (১৫ই শা’বানের রাত) এবং এ রাতের বুযূর্গী সম্পর্কে হাদীছ শরীফ ও বর্ণিত আছে, হযরত মুহম্মদ ইবনে কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতার মাধ্যমে অথবা উনার চাচার মাধ্যমে। উনার পিতা অথবা চাচা উনার পিতামহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি আবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন অর্ধ শা’বানের (১৫ই শা’বান) রাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। তবে ওই সকল লোকদের ক্ষমা করেন না যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে অর্থাৎ হিংসুকদের এবং আল্লাহ পাক-উনার সাথে শরীককারীদের তথা মুশরিকদেরকে ঐ অর্ধ শাবান তথা শবে বরাতে ক্ষমা করেন না। (তাফসীরে বাগবী)
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ æতাফসীরে মাযহারীর”-এর ১০ম খ-ে উল্লেখ আছে যে
(৫)
قيل (للحسين بن الفضل) فما معنى ليلة القدر قال سوق المقادير الى المواقيت وتنفيذ القضاء المقدر يعنى اطلاع الملائكة الموكلة على الا مور فى تلك الليل ما قدر الله تعالى امر السنة فى عباده وبلاده الى السنة المقبلة و قال عكرمة تقدير المقادير وابرم الامور فى ليلة النصف من شعبان فيها ينسخ الاحياء من الاموات فلا يزداد فيهم ولا ينقص منهم ويؤيده مارواه البغوى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكخ ويولد له ولقد خرج اسمه فى الموتى قبت لعل تقدير المقادير بنحو من الانجاء او بعضها فى ليلة النصف من شعبان وتقديرها كلها وتسليمها الى اربابها انما هو فى ليلة القدر
وروى ابو الضحى عن ابن عباس ان الله يقضى الاقضية ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر كذا ذكر البغوى وقال الزهرى سميت بها للعظمة والشرف قال الله تعالى وما قدرو الله حق قدره اى ما عظموه وقيل لان العمل الصالح فيه يكون ذا قدر عند الله.
অর্থ: æহযরত হাসান ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ক্বদরের রাত তথা শবে ক্বদরের অর্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তার জবাবে বলেন, স্থিরকৃত ফায়ছালাকে তার নির্ধারিত সময়ের দিকে পরিচালনা এবং নির্ধারিত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বা জারি করার রাতই হচ্ছে ক্বদরের রাত। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের আগামী এক বৎসরের যাবতীয় কিছুই ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে নির্ধারণ (বা ফায়ছালা) করেন, আর ক্বদরের রাতে সেই নির্ধারিত বিষয়সমূহকে বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফেরেশতা উাদের হাতে অর্পন করা হয়।
হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, পূর্বে স্থিরকৃত যাবতীয় বিষয়গুলোর যথাসময়ে নির্ধারণ এবং যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা হয়ে থাকে মধ্য শা’বানের তথা ১৫ ই শা’বানের রাতে (শবে বরাতে)। এবং আরো তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এই তালিকা থেকে কোন বৃদ্ধিও করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ ঐ তালিকার কোন পরিবর্তন করা হয় না। ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই উক্তির সমর্থনে হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার একটি বর্ণনা উল্লেখ করা হয় যে, সেখানে হাদীছের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, æএক মধ্য শা’বান হতে পরবর্তী বৎসরের মধ্য শা’বান পর্যন্ত মৃত্যুর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এমনকি ব্যক্তির বিবাহ এবং সেই বৎসর তার কি সন্তান জন্মলাভ করবে এবং সেই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার যাবতীয় তালিকাও প্রস্তুত করা হয় এই শবে বরাতে। নাম থাকে তাদেরও যারা ওই সময়ে বিবাহ করার পর ইন্তিকাল করবে।
গ্রন্থকার বলেন, আমি উভয়ের পূর্ণ বা আংশিক সামঞ্জস্যে বলি, সম্ভবত নির্ধারিত বিষয়ের ন্যূনতম পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয় মধ্য শা’বান তথা ১৫ই শা’বান রাতে। আর ক্বদরের রাতে নিশ্চিতরূপে বাস্তবায়ন করার জন্য তালিকা পেশ করা হয় বাস্তবায়নকারী ফেরেশতা উনাদের হাতে। অর্থাৎ শবে বরাতে সমস্ত কিছু ফায়ছালা করা হয়। আর ক্বদর রাতে জারি বা কার্যকরীকরনের জন্য তালিকা কার্যকরী ফেরেশ্তা উনাদের হাতে অর্পন করা হয়।
কেননা এ প্রসঙ্গে হযরত আবুদ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, অর্ধ শা’বান রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল বিষয়ের ফায়ছালা অর্থাৎ তালিকা প্রস্তুত করেন। আর ক্বদর রাতে তা কার্যকরী করার জন্য ওই তালিকা অর্পণ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতা উনাদের হাতে। এরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন মুফাসসীরকুল শিরোমণি ইমাম হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, লাইলাতুল ক্বদর (মহিমান্বিত রাত) নামকরন করা হয়েছে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা অনুসারে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি (সূরা আনয়াম ৯১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ) বলেন, তারা আল্লাহ পাক উনাকে যথার্থ তা’যীম তথা সম্মান দেয়নি। অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি যেমন মহান মর্যাদা ও মর্তবা পাওয়ার অধিকারী সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। (এখানে ক্বদর অর্থ হল মহত্ত্ব বা মর্যাদা)।
কাজেই যারা বলে থাকে سورة القدر এর মধ্যে যে ليلة القدر শব্দগুলো উল্লেখ আছে তার দ্বারা শুধু ভাগ্যরজনীকে বুঝানো হয়েছে অন্য কোন রাত্রিকে ভাগ্যরজনী হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে না। তাদের এরূপ উক্ত মোটেও শুদ্ধ নয়। বরং চরম জিহালতপূর্ণ কথা। অথচ উল্লিখিত তাফসীরের আলোকে জানা গেল যে, ليلة القدر বলতে এখানে স্মানিত ও মহিমান্বিত রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। যা রমাদ্বান শরীফ-এর শেষের দশদিনের বিজোড় রাত্রিতে নিহিত। তাই সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, সূরা ক্বদরেরليلة القدر লফয দ্বারা ভাগ্যরজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত নয়। বরং মহিমান্বিত বা মর্যাদার রাত) কেন না এই ক্বদর রাতের নেক আ’মল মহান আল্লাহ পাক-উনার কাছে মর্যাদাপূর্ণ।
বিশ্বখ্যাত তাফসীর তাফসীরে মাদিরক-এ ليلة المباركة এ আয়াতাংশের তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(৬-৭)
وهذه الليلة مفرق كل أمر حكيم ومعنى يفرق يفصل ويكتب كل أمر من ارزاق العباد واجالهم وجميع أمورهم من هذه الليلة الى ليلة القدرالتى تجى فى السنة المقبلة
অর্থ: ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকাহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবেবরাত এবং এই মুবারকময় রাতে সকল প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। আয়াত শরীফ-এর يفرق শব্দের অর্থ হচ্ছে يفصل (ইউফাছছালু) তথা ফায়ছালা করা, এবং يكتب (ইউকতাবু) তথা লেখা হয় প্রত্যেক বান্দাদের রিযিক বা জীবিকাসমূহ। তাদের মৃত্যুর সময় সীমাও লেখা হয় এবং সমস্ত বিষয়ের তালিকা লেখা হয় এই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে। আর ক্বদর রাতে তথা মর্যাদাবান রাতে ওই সমস্ত ফায়ছালাকৃত বিষয়গুলো চালু করা হয় তথা কার্যকরী করা হয় যা সামনের এক বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে। (তাফসীরু হাশিয়াতিল খাযিন ৪র্থ খ-,পৃঃ ১১২)
আবা-১৯৬

Comments