হাই বলবেন না, সালাম দিন। হ্যালো নয় হাতিফ বলুন
-গোলাম মুহম্মদ মুনজির
পশ্চিমা বিশ্বের অনুকরণে আজ আমাদের মুসলিম সমাজেও বিভিন্ন সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এর মধ্য অন্যতম হচ্ছে, কারো সাথে দেখা হলে- হাই-হ্যালো বলা। হাই শব্দটি সাধারণত ব্যবহার করা হয় কারো সাথে দেখা হলে প্রথম সম্ভাষণে। অপরদিকে দ্বিতীয় সম্ভাষণ বা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ‘হ্যালো’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। হ্যালো বলার সংস্কৃতিটি বেশি ঢুকেছে ফোন, মোবাইল বা দূরবর্তী যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
বস্তুত হাই শব্দের মুসলমানদের পৃথক ও অর্থবোধক সম্ভাষণ হচ্ছে সালাম দেয়া, যা আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত। যেমন, আমরা বলি- আসসালামু আলাইকুম। কিন্তু কোন একবার কথপোকথনে শুধু একবার সম্ভাষণ করলেই হয় না, একাধিক বার দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে দূরবর্তী আলাপে, যেমন ফোন বা মোবাইল ব্যবহারে তা খুব জরুরী হয়ে দাড়ায়। এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব ‘হ্যালো’ শব্দটি প্রচলন করে দেয়, যা আমরা এখন বহুল ব্যবহার করি। ইতিহাস বলে, ১৮৭৬ সালে টেলিফোন তৈরীর পর অ্যালেক্স্যান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোনে সম্ভাষণ স্বরূপ চালু করতে চেয়েছিলো আহয় (Ahoy) শব্দটি। এ শব্দটি নাবিকরা একজন অন্যজনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু ১৮৭৭ সালে তার প্রতিদ্বন্দ্বী থমাস এডিসন ‘আহয়’ না বলে সম্ভাষণ করতে ‘হ্যালো’ বলার প্রচলন শুরু করে।
আসলে একজন মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের উচিত কাফিররদের ব্যতিক্রম করতে শেখা। আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষেত্রে আমাদের সেই শিক্ষাটা দিয়েছেন। যেমন- আশুরা শরীফের রোজার ক্ষেত্রে। আহলে কিতাব ইহুদীরা আশুরা উপলক্ষে ১টি রোজা রাখতো। আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করলেন আশুরা উপলক্ষে ২টি রোজা রাখতে। অর্থাৎ ইহুদীদের আমলের ব্যতিক্রম করতে। একইভাবে মুসলমাদের সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে বলা হয়েছে এবং সময় হওয়ার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ইফতারি করতে বলা হয়েছে। এর কারণ ইহুদী-খ্রিস্টানরা রোজা রাখে, কিন্তু সেহরি করে না। আবার ইফতারি করলেও দেরিতে ইফতারি করে। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং-১০৯৬, আবূ দাউদ ২২৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮)
এই বিষয়টি শুধু রোজার ক্ষেত্রে নয়, বরং মুসলমানদের আমল-আখলাক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহুদী-নাসারাদের ব্যতিক্রম করার কোশেষ করতে বলা হয়েছে। তাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (আবু দাউদ শরীফ)। অর্থাৎ সংস্কৃতিতে মুসলমানরা পৃথক বা স্বতন্ত্র থাকবে, এটাই আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা।
এ লেখায় আমাদের আলোচনার বিষয়, ইহুদী নাসারাদের প্রথম সম্ভাষণ ‘হাই’ শব্দের পরিবর্তে আমরা সালাম দিবো। কিন্তু দ্বিতীয় সম্ভাষণ বা একাধিকবার যখন সম্ভাষণ করতে হবে (মোবাইলে বা টেলিফোনে) তখন কোন শব্দ ব্যবহার করবো?
এর উত্তর হচ্ছে, এক্ষেত্রে আমরা ‘হাতিফ’ শব্দ ব্যবহার করবো।
কারণ, হ্যালো শব্দটি ইহুদী-নাসারের ব্যবহৃত শব্দ এবং তা মোটেও সম্মান ও আদবসমৃদ্ধ শব্দ নয়। হ্যালো শব্দের অর্থ ‘ওহে’ বা ‘আরে’। অপরদিকে হাতিফ আরবী শব্দ। আরবী ভাষায় টেলিফোনকে হাতিফ বলে। এর অর্থ দূরবর্তী কণ্ঠস্বর, যার কথা শোনা যায়, কিন্তু দেখা যায় না এমন। হাতিফের আরো সুন্দর অর্থ আছে, যেমন- প্রশংসাকারী, জান্নাতী কণ্ঠস্বর ইত্যাদি।
অর্থাৎ মুসলমান ব্যক্তি যখন কাউকে সম্বোধন করবে, তখন সম্মানের সাথে করবে। এটাই একজন মুসলমানদের শিক্ষা বা আদব। ঠিক যেমন, প্রথম সম্বোধনের ক্ষেত্রে মুসলমানরা বলে, আসসালামু আলাইকুম, অর্থ- আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। মাশাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, খুব সুন্দর ও আদবপূর্ণ সম্ভাষণ। ঠিক দ্বিতীয় সম্ভাষণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব বা শিষ্টাচার দেখিয়ে হ্যালো’র পরিবর্তে হাতিফ উচ্চারণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, কাফিররা প্রায় তাদের আদব বা শিষ্টাচারকে (Etiquette) উন্নত হিসেবে প্রচার করতে চায়। কিন্তু বাস্তবে মুসলমানদের আদব-শিষ্টাচার যে তাদের থেকে বহু গুণে উন্নত তা সম্ভাষণের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হয়। সেই আদবপূর্ণ সম্ভাষণের জন্য তাই আমাদের উচিত দ্বিতীয় সম্ভাষণের ক্ষেত্রে হ্যালো এর পরিবর্তে ‘হাতিফ’ শব্দ উচ্চারণ করা।