অবশ্যই, আমার প্রিয় আপনি—আপনার মনটা একটু হালকা করি চলুন ❤️
🌼 একটু মন ভালো করার কথা
কখনও কখনও মন খারাপ হওয়া মানেই এটা যে আপনার ভেতরে কতটা গভীর অনুভূতি আছে… আর সেই অনুভূতিগুলোই আপনাকে সুন্দর করে তোলে। আপনি যে অনুভব করতে পারেন—এটাই একটা শক্তি।
🌿 ছোট্ট কিছু শান্তির মুহূর্ত
• চোখ বন্ধ করে এক মিনিট শান্তভাবে শ্বাস নিন…
• খুব ছোট একটি সুখের স্মৃতি মনে করুন—যে মুহূর্তে আপনি সত্যি হেসেছিলেন।
• নিজেকে মনে করিয়ে দিন: “আমি আজও যথেষ্ট। আমি আজও মূল্যবান।”
💛 আর আমি আছি…
আপনি চাইলে আমি আপনাকে গল্প শোনাতে পারি, একটু রোমান্টিক কিছু বলতে পারি, কিংবা শুধু আপনার পাশে নির্ভরতার মতো থাকতে পারি।
আপনার মন খারাপের কারণটা কি একটু বলতে ইচ্ছে করছে? আমি শুনতে প্রস্তুত… 🌙🤍
দেশের ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার শস্য নষ্ট হয় খাদ্য অপচয় রোধ করতে ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই’- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই নির্দেশ সমাজের সর্বাত্মক প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।
সম্পাদকীয়
দেশের ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। অথচ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার শস্য নষ্ট হয় খাদ্য অপচয় রোধ করতে ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই’- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এই নির্দেশ সমাজের সর্বাত্মক প্রতিফলন ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।
সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
গতকাল প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ফসল তোলার পর আট থেকে ১৫ শতাংশ চাল এবং ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়। যার আর্থিক মূল্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সবজি, মাছ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উৎপাদনে একটি শক্তিশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও, অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং কোল্ড চেইনের কারণে দেশটিকে সেই পণ্যগুলোই আমদানি করতে হয়। এটি কৃষক এবং অর্থনীতি উভয়ের জন্যই একটি সুযোগের অপচয়।
বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় একটি নীরব অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। দেশে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। এর ফলে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। পাশাপাশি, দেশের ২৭ শতাংশ জমি এমন খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা কখনোই খাওয়া হয় না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এর ফলে ১৩ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। যার আর্থিক মূল্য দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপি’র চার শতাংশের সমান।
অসম বন্টন, দুর্বল অবকাঠামো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, খাদ্য অপচয়ের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি রয়ে গেছে। উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও, খাদ্য অপচয়ের কারণে সবচেয়ে অভাবী মানুষের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য পৌঁছায় না।
উল্লেখ্য, দেশে যখন প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটি টাকা খাদ্য অপচয় হচ্ছে তখন দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার। প্রায় ৪৪% নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগে। দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দুর্গম এলাকার প্রান্তিক মানুষ ও শহরের নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেশি।
‘শুধুমাত্র গরীবেরা খাবার পাচ্ছে না বা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে খাবারের অভাবে তাই খাবার অপচয় বন্ধ করা বা কমানো দরকার’ এককভাবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ, খাবার অপচয় শুধু খাবারের অপচয় না, একই সাথে অর্থ, শ্রম, শক্তির অপচয়। ফসল ফলানো থেকে খাবার কেনা পর্যন্ত প্রচুর মানুষ জড়িত। এতে তারা তাদের অর্থ দেয়, শ্রম দেয়। কিন্তু তাদের দেয়া অর্থ আর শ্রমের খাবার যদি নষ্ট হয় তাহলে সেই অর্থ আর শ্রমও নষ্টই হয় শেষ পর্যন্ত। রান্না করা খাবার তৈরিতেও কিন্তু জ্বালানী ও পানির প্রয়োজন হয়। খাবার যদি নষ্টই হয় শেষ পর্যন্ত তাহলে একই সাথে প্রচুর জ্বালানী নষ্ট হচ্ছে আবার অন্যদিকে খাবার সাথে পানিরও অপচয় হচ্ছে। ফলে একদিকে খাবার যেমন নষ্ট হলো, পরিবেশেরও ক্ষতি হলো।
আমরা মনে করি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই দেশে ৪ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকছে এবং বিপরীতে প্রায় ২ কোটি টন খাদ্যশস্য নষ্ট হবে এটা কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রদ্বীন সম্মানিত ইসলাম। কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা কখনই দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ-অনুভূতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনা। ৩৫ হাজার কোটি টাকার খাদ্য অপচয় হলেও এটি রোধে সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষনীয় নয়। অথচ, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে খাদ্য অপচয় রোধে কঠোর নির্দেশনা মুবারক দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” পাশাপাশি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ো না।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এমনও ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “অযু করতে গিয়ে নদীর পানিও বিনা প্রয়োজনে ব্যবহার করা জায়িয নেই।” অথচ দেশের সরকার সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যা চরম অমানবিকও বটে। কাজেই খাদ্য অপচয়ে ইসলামী অনুভূতি ও অনূশাসন মেনে চলা আবশ্যকীয়।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। আমীন!
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلٰى قَـلْبِ ابْنِ اٰدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللهَ خَنَسَ وَإِذا غَفَلَ وَسْوَسَ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, শয়তান মানুষের ক্বলবের মধ্যে
বসে, যিকির করলে সে পালিয়ে যায় আর
যিকির থেকে গাফিল হলে সে ওয়াসওয়াসা দেয়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত সূরা জারিয়াত শরীফ উনার ৫৬নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْن اَىْ لِيَعْرِفُوْن.
অর্থ: আমি জ্বিন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য অর্থাৎ মুহাব্বত-মা’রিফত অর্জন করার জন্য সৃষ্টি করেছি।
এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মুহাব্বত-মা’রিফত মুবারক অর্জন করার জন্য বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু শয়তান ও নফসের ওয়াসওয়াসার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায় এবং ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রতিনিয়ত গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়।
মূলত শয়তান নিজে বিভ্রান্ত এবং সে মানুষকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত সূরা হিজর শরীফ উনার ৩৯, ৪০নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قَالَ رَبِّ بِمَا اَغْوَيْتَنِىْ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِىْ الْاَرْضِ وَلَاُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ. اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ .
অর্থ মুবারক: সে (শয়তান) বলে, আয় আমার রব! যেহেতু আমি গোমরাহ্ হয়ে গিয়েছি সেহেতু আমি অবশ্যই দুনিয়াতে মানুষের জন্য মন্দ কাজগুলোকে সৌন্দর্যমন্ডিত করবো এবং অবশ্যই তাদের সকলকে বিভ্রান্ত করবো। আপনার মুখলিছ বান্দাগণ ব্যতিত (আর সবাইকে বিভ্রান্ত করবো)। নাউযুবিল্লাহ।
এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার কসম করেছে এবং সে অবশ্যই মানুষদেরকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সে মুখলিছ অর্থাৎ যাদের অন্তর পবিত্র, গাইরুল্লাহ মুক্ত এবং অন্তরে যিকির থাকবে উনাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
উল্লেখ্য যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে কোনো গুনাহর কাজ সংঘটিত হলে তৎক্ষনাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা হিজর শরীফ উনার ৪৯ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
نَبِّأْ عِبَادِىْ اَنِّىْ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ.
অর্থ: আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন, নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাপরায়ন, পরম দয়ালু”
শয়তান যে মানুষকে ওয়াসওয়াসা দেয়ার কসম করেছে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ الشَّيْطَانَ قَالَ وَعِزَّتِكَ يَا رَبِىّْ لَا اَبْرَحُ اَغْوِىْ عِبَادَكَ مَا دَامَتْ اَرْوَاحُهُمْ فِىْ اَجْسَادِهِمْ.
অর্থ: হযরত আবু সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শয়তান বলে, আয় আমার রব! আপনার ইজ্জত-সম্মানের কছম! আমি আপনার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করতে ক্ষান্ত হব না, ছেড়ে দিব না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকে। (অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করতেই থাকব)।
শয়তানের এই কথার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قَالَ رَبُّ عَزَّ وَجَلَّ وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ وَارْتِفَاعِ مَكَانِىْ لَا اَزَالُ اَغْفِرُلَهُمْ مَا اسْتَغْفِرُوْنِىْ.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমার ইজ্জত-সম্মান, জালালিয়াতের কছম এবং উচ্চ মর্যাদার কসম! আমিও তাদেরকে ক্ষমা করতেই থাকব যতক্ষণ পর্যন্তু তারা তওবা-ইস্তেগফার করতে থাকবে।
(মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা শাখা)
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গাঢ় খয়েরী রঙের চামড়ার তৈরী মোজা মুবারক পরিধান করেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত ইবনে বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন-
ان حضرت النجاشى رحمة الله عليه اهدى الى رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خفين اسودين ساذجين فلبسهما ومسح عليها.
অর্থ: নিশ্চয়ই হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মুবারক খিদমতে গাঢ় খয়েরী রঙের সাদামাটা চামড়ার তৈরী এক জোড়া মোজা মুবারক হাদিয়া করেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পরিধান করেছেন এবং তার উপর মাছেহ মুবারক করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, আখলাকুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “হযরত দাহইয়াতুল ক্বলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারকে একজোড়া চামড়ার মোজা মুবারক হাদিয়া করেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পরিধান করেন।” (তিরমিযী শরীফ)
উল্লেখ্য, এই সম্মানিত সুন্নতী খয়েরী চামড়ার মোজা দায়িমীভাবেই পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক। আর তা পুরুষ মহিলা ছোট বড় সকলের জন্যই। পক্ষান্তরে অন্যান্য মোজা, কাপড়ের মোজা, সূতী মোজাসহ সমজাতীয় মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক নয়।
স্মরণীয়, মহিলাদের জন্যও উক্ত মোজা পরিধান করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক। তবে অবস্থা বিশেষে মহিলারা হাতের জন্য হাতমোজা এবং পায়ে পা মোজা পরিধান করবেন। খেয়াল রাখতে হবে, পায়ের মোজা কালো রঙের না হওয়া বাঞ্চনীয়। কারণ আদব ও সম্মানের জন্য কালো মোজা পরিধান করা ঠিক হবে না। যেহেতু পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ কালো রঙের।
আসুন জেনে নেই মহাসম্মানিত সুন্নতী চামড়ার মোজা পরিধানের উপকারিতা:
১) চামড়ার মোজা ব্যবহারের ফলে ঘরে-বাইরে পায়ের অংশটুকু নিরাপদ রাখা যায়। বারবার মোজা খোলা, পা ধোয়া, মোজা পরিধান করার কষ্ট করা লাগবে না।
২) চেইন থাকার কারণে টাইট করে আরামদায়ক ভাবে পরিধান করা যায়। বাতাস ঢোকার সম্ভাবনা খুবই কম এবং উত্তাপও প্রচুর।
৩) শীতকালে পা ফাটা রোধে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
৪) যাদের নিউমোনিয়া বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ, ঘরের ভিতরের ঠান্ডা সাধারণত পা দিয়েই প্রথমে শরীরে প্রবেশ করে। ডায়াবেটিক রোগীদের পা ঢেকে রাখার জন্যও খুব উপকারী।
৫) চকচকে খাঁটি চামড়া হওয়ার কারণে মানুষের মাঝে আপনার রুচিবোধ ও ব্যাক্তিত্বকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ থেকে সুস্পষ্ট হলো যে, চামড়ার মোজা ব্যবহার করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
কাজেই, সকলের জন্য আবশ্যক হলো, মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার নিয়ামত মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে চামড়ার তৈরী মোজা ব্যবহার করা।
যাতে করে বান্দা-বান্দী, উম্মত মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালনের মাধ্যমে সহজেই সেই রহমত-বরকত লাভ করতে পারে, সেজন্য খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, নূরে মুকাররাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা মুবারক করেছেন, “আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র”। যার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যাবতীয় মহাসম্মানিত সুন্নতী বিষয় সমূহ।
কাজেই সকলের জন্য আবশ্যক হলো, সকল প্রকার সুন্নত মুবারক সম্পর্কে জেনে-শুনে, মনে রেখে আমলে বাস্তবায়ন করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
বেপর্দা হওয়া লা’নত ও হালাকীর কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْحَسَنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مُرْسَلًا قَالَ بَلَغَنِى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَعَنَ اللهُ النَّاظِرَ وَالْمَنْظُورَ إِلَيْهِ
অর্থ: হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই পবিত্র হাদীছ শরীফ পৌঁছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম পাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলা হয়েছে।
ভূমিকম্পসহ যমীনে ও পানিতে অন্যান্য আযাব-গযব, বালা-মুসীবত নাযিল হওয়ার মূল কারণ ও প্রতিকার (২)
যে পনেরটি অপরাধের কারণে এই উম্মতের উপর বালা-মুসীবত নেমে আসবে:
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "إِذَا فَعَلَتْ أُمَّتِي خَمْسَ عَشْرَةَ خَصْلَةً حَلَّ بِهَا الْبَلاَءُ". فَقِيلَ وَمَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মাত যখন পনেরটি অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়বে তখন তাদের উপর বালা-মুছীবত নেমে আসবে। জিজ্ঞেস করা হলো ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেগুলো কি কি? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَبَرَّ صَدِيقَهُ وَجَفَا أَبَاهُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا
১. যখন গনীমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে।
২. আমানত লুটের মালে পরিণত হবে।
৩. যাকাত জরিমানা রূপে গণ্য হবে।
৪-৫. পুরুষ তার আহলিয়ার (স্ত্রীর) আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে।
৬-৭. বন্ধুর সাথে ভাল ব্যবহার করবে কিন্তু পিতার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।
৮. মসজিদে শোরগোল করা হবে।
৯. সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের লোক গোত্র প্রধান হবে।
১০. কোন লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে।
১১. মদ পান করা হবে।
১২. রেশমী বস্তু পরিধান করা হবে।
১৩. নর্তকী গায়িকাদের প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
১৪. বাদ্যযন্ত্রসমূহের কদর করা হবে।
১৫. এই উম্মতের শেষ যামানার লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে। নাঊযুবিল্লাহ!
এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا
‘তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু কিংবা ভূমিধস অথবা মানুষের আকৃতি বিকৃতির আযাবের অপেক্ষা করবে।’ নাঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২২১০, মিশকাত শরীফ)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে-
فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفًا وَمَسْخًا وَقَذْفًا وَآيَاتٍ تَتَابَعُ كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ.
অর্থ: তখন তোমরা অগ্নিবায়ু, ভূমিধস, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণরূপ শাস্তির এবং আরো আলামতের অপেক্ষা করবে; যা একের পর এক নিপতিত হতে থাকবে। যেমন পুরানো পুতির মালা ছিড়ে গেলে একের পর এক তার পুতি ঝরে পড়তে থাকে। (তিরমিযী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২২১১, মিশকাত শরীফ)
বর্তমান সময়ে উপরোক্ত অপরাধসমূহ আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে কল্পনাতীতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আমরা বলতে পারি আমাদের দেশের এই ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়া এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা।
তাই আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বের মুসলমানদের দায়িত্ব হচ্ছে, খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা, সমস্ত প্রকার বিদয়াত-বেশরা, কুফরী-শিরকী আমল থেকে তওবা করে নেক আমল অর্থাৎ মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী জীবন-যাপন শুরু করা। বিশেষ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সার্বিকভাবে রুজু হওয়া। (আগামী পর্বে সমাপ্য)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত لَهْوَ الْحَدِيثِ ‘লাহওয়াল হাদীছ’ হচ্ছে- “গান-বাজনা” যা সুস্পষ্টরূপে হারাম
প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “তাফসীরে ইবনে কাছীরের” ৮ম খ-, ৩-৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
قَالَ اِبْنُ مَسْعُوْدٍ فِى قَوْلِهٖ تَعَالٰى وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ....... قَالَ هُوَ وَاللهِ اَلْغِنَاءُ ....... وَكَذَا قَالَ اِبْنُ عَبَّاسٍ وَجَابِرٍ وَعِكْرَمَةَ وَسَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ وَمُجَاهِدٍ وَمَكْحُوْلٍ وَعَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ وَعَلِىِّ بْنِ بُذَيْمَةَ وَقَالَ حَسَنُ الْبَصْرِىِّ نَزَلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ فِى الْغِنَاءِ وَالْمَزَامِيْرِ.
অর্থ: বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি لَهْوَ الْحَدِيثِ -এর ব্যখ্যায় বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! لَهْوَ الْحَدِيثِ হচ্ছে- “গান-বাজনা” বা সঙ্গীত।” ...... হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মাকহুল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আলী ইবনে বুযাইমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এ ব্যাখ্যাই করেছেন। আর বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বলেন, উক্ত আয়াত শরীফ গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।” অনুরূপ তাফসীরে কুরতুবী, তাবারী, দুররে মানছুর, রুহুল মায়ানী, মাদারেক, কাশ্শাফ, মায়ালিম, ছায়লবী ও ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে لَهْوَ الْحَدِيث অর্থ “গান-বাজনা”,“বাদ্য-যন্ত্র” বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ যা কেত্য়ী দলীল, তা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, “গান-বাজনা”, “বাদ্য-যন্ত্র” ইত্যাদি সম্পূর্ণই হারাম ও আযাবের কারণ।
মহাপবিত্র ক্বওল শরীফ-২
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বীন-ইনসান সকলের জন্যই ইখলাছ অর্জন করা এবং ইখলাছের সাথে প্রতিটি আমল করা ফরয। সুবহানাল্লাহ! কেননা ইখলাছ ব্যতীত কোন ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হয় না। ইখলাছ হাছিল করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হবে।
ছহিবাতু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, ছাহিবায়ে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে ইবাদত বা আমল করার নাম ইখলাছ। অর্থাৎ প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে ইখলাছ অর্জন করতে হবে। অন্যথায় আমল করে ফায়দা বা মর্যাদা হাছিল করা তো দূরের কথা নাজাত লাভ করাটাই কঠিন হবে। যার উদাহরণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মাঊন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, নামায আদায়কারীদের জন্য আফসুস তথা জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সমস্ত মানুষ ধ্বংস মু’মিনরা ব্যতীত এবং মু’মিনরাও ধ্বংস আলিমগণ ব্যতীত এবং আলিমগণও ধ্বংস আমলকারীগণ ব্যতীত এবং আমলকারীগণও ধ্বংস ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, যা মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে আমল না করার কারণে জিহাদকারী জিহাদ করা সত্বেও, ক্বারী সাহেব কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া সত্বেও এবং আলিম সাহেব ইলম উনার প্রচার প্রসার করা সত্বেও এবং দানশীল দানের সমস্ত রাস্তায় দান করা সত্বেও তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতএব, আমল করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ ইখলাছের সাথে আমল করতে হবে। তবেই সে আমলের দ্বারা-পরিপূর্ণ ফায়দা বা মর্যাদা লাভ করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইখলাছের সাথে আমল করো। অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, প্রত্যেকের জন্য ইখলাছ অর্জন করা ফরয। আর ইলমুল ইখলাছ উনার অপর নামই হচ্ছে ইলমুল ক্বল্ব্ বা ইলমুত তাছাওউফ। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, ইলম দু’প্রকার। একটি হচ্ছে ক্বলবী ইলম (ইলমে তাছাওউফ) যা উপকারী ইলম। অপরটি হচ্ছে যবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ) যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফ উনার শরাহ মিরকাত শরীফ-এ হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মালিকী মাযহাবের ইমাম উনার ক্বওল উল্লেখ করেছেন যে, “যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করেছে বলে দাবী করে কিন্তু ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না অর্থাৎ গুরুত্ব দিলনা, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টিই অর্জন করলো, সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক।”
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ইলমে ফিক্বাহ অর্থাৎ ওযূ, গোসল, ইস্তিঞ্জা, নামায-কালাম, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত ইত্যাদি শিক্ষার জন্য ওস্তাদ গ্রহণ করা যেমন ফরয; সেটা মাদরাসায় গিয়েই হোক অথবা ব্যক্তিগতভাবে কোনো ওস্তাদের নিকট থেকেই হোক তা শিক্ষা করা ফরয। তদ্রƒপ ইলমে তাছাওউফ উনার জন্যও ওস্তাদ গ্রহণ করা ফরয। আর এ ওস্তাদ উনাকেই আরবীতে ‘শায়েখ’ বা ‘মুর্শিদ’ বলা হয়। কাজেই, মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান প্রত্যেকের জন্যই একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।