সৃজনশীল চুরিবিদ্যার জনক রবীন্দ্রনাথ ও সাগরেদ জাফর ইকবাল

প্রসঙ্গ শিক্ষা কারিকুলাম :

প্রসঙ্গ শিক্ষা কারিকুলাম :

সৃজনশীল চুরিবিদ্যার জনক রবীন্দ্রনাথ ও সাগরেদ জাফর ইকবাল

-শেখ মুহম্মদ রাফসানযানি

 এবারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রবক্তারা বলছে, এ কারিকুলামে নাকি মুখস্ত বলে কিছু থাকবে না। কারণ মুখস্ত বিদ্যা নাকি খারাপ জিনিস। এ সম্পর্কে বর্তমান কারিকুলারে অন্যতম হোতা জাফর ইকবাল বলেছে, পরীক্ষার হলে নকল করা যেমন অপরাধ, তেমন কোন কিছু মুখস্ত করে পরীক্ষার হলে লেখাও অপরাধ। এজন্য জাফর ইকবাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তিও বর্ণনা করে। (সূত্র: যমুনা টিভি অনলাইন লাইভ, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩)

 রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তিটি আমাদের জানা, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলো, ‘মুখস্থ করিয়া পাশ করাই তো চৌর্যবৃত্তি! যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায়, তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায়, সেই-বা কম কী করিল?’ (প্রবন্ধ: শিক্ষার বাহন)

 রবীন্দ্রনাথের এ বক্তব্যে আমার ঘোরতোর বিরোধ আছে। কারণ পরীক্ষা তৈরী করা হয়েছে, একজন শিক্ষার্থী তার মগজে কতটুকু জ্ঞান ধারণ করতে পারলো তা নির্ণয় করতে হয়। সেই মগজে জ্ঞান ধারণকে কেউ যদি চৌর্যবৃত্তি বলে, তবে সে পরীক্ষার আসল উদ্দেশ্যই বুঝতে পারে নাই।

 আর তাছাড়া চোরের মুখে ধর্মের বাণী মানায় না। রবীন্দ্রনাথ ও জাফর ইকবাল ছোট ছোট বাচ্চাদের নামতা মুখস্ত করা, কবিতা মুখস্ত করা, সূরা মুখস্ত করা কিংবা অঙ্কের সূত্র মুখস্ত করার মত উপকারি ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মুখস্ত করাকে বিরাট অপরাধ হিসেবে দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে এই দুই ব্যক্তি অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালানোতে অভ্যস্ত। একে সাহিত্য চুরি বা প্লেজারিয়জম বলে। সাহিত্যের দৃষ্টিতে প্লেজারিয়জম মারাত্মক অপরাধ। অন্যের সাহিত্যভাব চুরি করা, সুর নকল করা, অনুবাদ করে নিজের নামে চালানোয় রবীন্দ্রনাথ ও জাফর ইকবাল উভয়ই অসংখ্য বার করেছে। তারা ছোট ছোট শিশুদের উপকারী বিষয়সমূহ মুখস্ত করাকে অপরাধ বলে যতটা নীতিবান সাজতে চাইছে, তারা যে পরিমাণ প্লেজারিয়জমে অভিযুক্ত, তাতে তাদের মুখে এত ফুটফুটে নীতিবাক্য মানায় না। বিশেষ করে, আরো বলে- চোরের স্বাক্ষী বাটপার। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামকে বৈধতা দেয়ার জন্য শত বছর আগে সাহিত্য চোর রবীন্দ্রনাথের কথাকেই আজকে ব্যবহার করছে এ প্রজন্মের সৃজনশীল চোর জাফর ইকবাল।

 রবীন্দ্রনাথ যে অন্য লেখক ও কবিদের ভাবধারা চুরি ও অনুবাদ করে নিজের নামে প্রচার করতো, সেটা ঐ সময় সবাই জানতো। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিকতার যে ভাব পাওয়া যেতো, সেগুলো ছিলো মুসলিম সূফী কবি, যেমন- কবি হযরত হাফিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জালালুদ্দিন রুমি রহমতুল্লাহি, শেখ সাদী রহমতুল্লাহি, হযরত আমির খসরু রহমতুল্লাহি, হযরত হাকিম সানাই রহমতুল্লাহির কবিতা থেকে ভাব চুরি করে লেখা কবিতা।

 উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলো গীতাঞ্জলির জন্য নয়, বরং গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ 'Osong offerings'-এর জন্য। সেই ইংরেজি অনুবাদের ভাব সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছিল খ্রিস্টানদের বাইবেল ও তাদের ধর্মীয় সাধকদের রচনার সাথে। আবার বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে যে গান গাওয়া হয়, সেটার সুর নেয়া হয় গগন হরকরা নামক এক ব্যক্তির ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানের সুর থেকে।

এতো গেলো রবীন্দ্রনাথের চুরির কথা। এবার আসি জাফর ইকবালের কথায়। বিদেশী লেখকদের বই বা উপন্যাস থেকে ভাব চুরি করা জাফর ইকবালের নিয়মিত স্বভাব। এমনকি অনেক বিদেশী মুভি ও সিরিয়াল থেকেও ভাব চুরি করে বই লিখে টাকা কামাই করে এই জাফর ইকবাল। অনেক ক্ষেত্রে শুধু ভাব নয়, বরং ডাইরেক্ট অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় সে। যেমন- জাফর ইকবালের ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’ (১৯৮৮) বইটি ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালিয়েন ছবির কাহিনি থেকে নকল, অবনীল (২০০৪) বইটি চলচ্চিত্র পিচ ব্ল্যাকের (২০০০) ছায়া অবলম্বনে লেখা। তার লেখা নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯) রোল্ড ডাহলের ম্যাটিল্ডা (১৯৮৮) উপন্যাস থেকে নেয়া। এছাড়া মেকু কাহিনী'র (২০০০) কাঠামো বেবি'জ ডে আউট (১৯৯৪) অনুসরণে তৈরি। মূল লেখক জন হিউজেস। ডেভ পেলজারের আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আ চাইল্ড কলড "ইট" (১৯৯৫) অবলম্বনে লেখা আমি তপু (২০০৫)।

 শুধু গল্প-উপন্যাসে নয়, জাফর ইকবালকে বাচ্চাদের যে পাঠ্যবই লিখতে দেয়া হয়, সেখানেও সে নকলের আশ্রয় নেয়, এবং পরবর্তীতে ধরা পরে দায় স্বীকার করে ক্ষমা চায়। সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের একটি অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে রেফারেন্স ছাড়াই হুবহু অনুবাদ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। (দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩)

 সমস্যা হচ্ছে, জাফর ইকবালের মত চোরদেরকে আমাদের শিক্ষা কারিকুলামের উপদেষ্টা ও লেখক সম্পাদক বানানো হয়েছে। এবং এই চোররা একবার সৃজনশীল পদ্ধতির নামে ১৫ বছর আমাদের বাচ্চাদের গিনিপিগ বানিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, এখন আবার নতুন কারিকুলাম বানিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে নতুন খেলা শুরু করছে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই সব চোর-চ্যাচ্ছরদের থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Comments