নেশা ও পেশাকে এক করো

নেশা ও পেশাকে এক করো

নেশা ও পেশাকে এক করো

-মুহম্মদ গোলাম সামদানী

 বর্তমান মুসলমানদের অধিকাংশের বক্তব্য হচ্ছে, “পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার খুব ইচ্ছা কিন্তু চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এত ব্যস্ত থাকা হয় যে, দ্বীনের কাজ করার জন্য সময় বের করা যায় না

 আসলে পবিত্র দ্বীনের কাজকে যদি আমরা নেশা ধরি,

এবং হালাল রিজিক তালাশের জন্য চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যকে যদি পেশা ধরি,

তবে বর্তমানে মুসলমানরা নেশা ও পেশাকে আলাদা করে রেখেছে,

নেশা ও পেশা আলাদা থাকায় মুসলমানরা দ্বীনের জন্য কাজ করতে পারছে না,

মুসলমানরা যদি নেশা ও পেশাকে এক করতে পারতো, তবে অবশ্যই তা করা সম্ভব ছিলো

 কাফিররা কিন্তু এ কাজটি করে। অর্থাৎ পেশার মধ্যে তাদের নেশা ঢুকিয়ে নেয়। যেমন, ধরুন ইহুদীবাদীদের একটা ধর্ম বা নেশা হচ্ছে মুসলমানদের ঈমান ও আমল ধ্বংস করা। ইহুদীবাদী কোম্পানি কোকাকোলা। কোকাকোলার মধ্যে (সামান্য পরিমাণ) অ্যালকোহল আছে বলে প্রমাণিত। সুতরাং একজন মুসলমান যখন এই কোকোকোলা খাবে, তখন সে অ্যালেকোহল সেবন করে হারাম কাজ করবে এবং দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে। অর্থাৎ কোকাকোলা বিক্রি করে ইহুদীবাদীরা টাকাও কামাচ্ছে আবার মুসলমানদের ঈমান-আমলও ধ্বংস করছে।

 আবার ধরুন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশে ব্যবসা করে প্রচুর টাকা কামাচ্ছে আবার ‘লাক্স ফটো সুন্দরী প্রতিযোগীতা’র আয়োজন করে মুসলিম মেয়েদের বেপর্দা করছে। অর্থাৎ একদিকে তার পেশা সারছে, অন্যদিকে তার নেশা মানে মুসলমানদের ঈমান-আকিদ্বাও ধ্বংস করছে।

 একইভাবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের কোন প্রজেক্টে ঋণ দিলে সুদে আসলে সেই ঋণ পুরোপুরি ফেরত নেয়। কিন্তু ঋণ দেয়ার শুরুতে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয়, যেই শর্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে যেন তাদের নিয়ম-নীতি ও শরীয়ত বিরোধী কার্যক্রম জারি হয়।

 আবার অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকেও দেখেছি, কোন চাকরি বা ব্যবসার কোন সেক্টরে ঢুকলে সেখানে অন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সেখানে সুযোগ দেয়া যায় কি না, সেই চেষ্টা করে। কোন একটি কোম্পানিতে ১ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী চাকুরি পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে দেখা যায়, সেখানে কয়েক ডজন ঐ ধর্মের লোক ঢুকে গেছে। অর্থাৎ একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মের জন্য যেখানেই প্রবেশ করুক, সেখানে তার জাতি ভাইদের প্রবেশ করিয়ে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা করে এবং সেই সেক্টরে তাদের একটি ধর্মীয় গ্রুপ বা সিন্ডিকেট তৈরী করে।

 অর্থাৎ অন্যধর্মের লোকের নেশা ও পেশাকে এক করায় সর্বত্র তাদের নিয়ম-প্রথা ও কর্তৃত্বকে সহজে প্রবাহিত করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলমানরা তাদের নেশা ও পেশাকে এখনও এক করতে পারেনি। পেশাকে আলাদা রেখেছে, দ্বীন বা নেশাকে আলাদা রেখেছে। ভেবেছে, সারাদিন কর্ম শেষ করে বাসায় এসে দ্বীন-ধর্ম পালন করবো। এভাবে করে মুসলমানরা ঘরের গোপন প্রোকষ্ঠে দ্বীন ইসলামকে আবদ্ধ করে ফেলেছে, সমাজে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলাম শুধু ঘরের গোপন প্রোকোষ্ঠের কোন দ্বীন নয়, বরং সবচেয়ে সামাজিক দ্বীন, গণমানুষের দ্বীন, একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত হবে তার পেশার সাথে দ্বীন পালনকে একীভূত করা। এ বিষয়টি করার জন্য একটি বিষয় মনে রাখতে হবে-

 মানুষ তার জীবনে কিছু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে তার জীবিকা নির্বাহ করে। যেমন- কেউ ডাক্তার হয়, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আইনজীবি, কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সাংবাদিক, কেউ শিক্ষক, কেউবা আমলা। কিন্তু এই জ্ঞান ও দক্ষতার পুরোটাই সে ব্যয় করে অর্থ উপার্জনের জন্য। কিন্তু এই জ্ঞান ও দক্ষতা কি তিনি কখনও দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন? উত্তর- করেনি। প্রায় সবাই পেশা ও ধর্মকে আলাদা করে রেখেছেন। হয়ত কেউ কেউ পেশা থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন। এই অর্থ দানকেই তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় দায়িত্ব বলে মনে করেছেন। কিন্ত বাস্তবে মানুষ অর্থ দেয় সেই ফিল্ডে, যেই ফিল্ডে তার দ্বীন ইসলামের পক্ষে কাজ করার সামর্থ নাই। সে অর্থ দিয়ে অন্যকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যে ফিল্ডে তার পেশাগত জীবন, সেই ফিন্ডে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থে কাজ করাবে কে?

 লক্ষ্য করে দেখবেন, ইহুদীরা ব্যবসাগত কোন সমস্যায় পড়লে ইহুদী ব্যবসায়ীরা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়, হিন্দুরা কোন আইনী সমস্যায় পড়লে হিন্দু আইনজীবিরা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়, খ্রিস্টানরা ক্ষমতা নিয়ে সমস্যায় পড়লে খ্রিস্টান রাজনীতিবিদরা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। এটা হচ্ছে পেশাগত সাহায্য। কিন্তু আশ্চর্যজনক হচ্ছে, মুসলিমরা কোন সমস্যায় পড়লে মুসলিমরা পেশাগতভাবে এগিয়ে আসে না। আসে বিচ্ছিন্নভাবে, রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করে। কিন্তু এই রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী কাজ হতো, যদি মুসলিম পেশাজীবিরা তাদের পেশার পক্ষ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে এগিয়ে আসতো।

 মুসলিম পেশাজীবিদের চিন্তা করতে হবে, সারা জীবন পেশাকে ব্যবহার করে শুধু টাকা ও স্টাটাস কামাই করলেন, কিন্তু পেশাকে কি তিনি কখনো পরকালের নেকি কামাই করার জন্য ব্যবহার করেছেন? টাকা ও স্ট্যাটাস তো দুনিয়াতেই শেষ, পরকালে তো নেকী একমাত্র ভরসা। পরকালে যদি আল্লাহ পাক প্রশ্ন করেন, “তোমাকে তো পেশাগত জীবনে অনেক জ্ঞান, দক্ষতা, ক্ষমতা ও নেটওয়ার্ক দিয়েছিলাম, সেই শক্তিগুলো তুমি পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের কোন স্বার্থে ব্যবহার করেছিলো?” উত্তরে তিনি তখন কি বলবেন?

 এজন্য প্রতিটি মুসলিম ভাইকে বলবো, আপনার নেশা ও পেশাকে এক করুন। পেশার মধ্যে পবিত্র দ্বীন পালনকে নিয়ে আসুন। আপনার পেশার ভেতরে যদি দ্বীন বহির্ভূত কিছু থাকে, তবে সেটা দূর করার চেষ্টা করুন। একা না পারলে অন্যদের বোঝান। সমমনা দল তৈরী করে সবাই মিলে চেষ্টা করুন, অবশ্যই সফল হবেন। পাশাপাশি, পেশাগত জীবন থেকে এক বা একধিক জন মিলে পেশা দিয়ে পবিত্র দ্বীন ইসলামের পক্ষে কাজ করুন, বিপক্ষের কাজ প্রতিহত করুন। মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করুন, মুসলিম উম্মাহর স্বার্থবিরোধী কাজ প্রতিহত করুন। আইনজীবিরা আইনী পেশা দিয়ে, শিক্ষকতরা শিক্ষকতা পেশা দিয়ে, ডাক্তাররা ডাক্তারী পেশা দিয়ে, প্রকৌশলীরা প্রোকৌশল পেশা দিয়ে, রাজনীতিবিদরা রাজনীতি পেশা দিয়ে, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পেশা দিয়ে, এভাবে যে যার পেশা থেকে পেশাগত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসুন।

 এভাবে করে, ব্যক্তিগত জীবনের পাশপাশি সবাই যখন পেশাগত অবস্থান থেকেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে কাজ করবে, তখন এর দ্বারা সমাজে দ্বীন ইসলাম খুব সহজেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তখন দ্বীনের কাজ করতে আলাদা সময় বের করার প্রয়োজন নেই, বরং কর্মক্ষেত্রেই হয়ে উঠবে আপনার দ্বীন পালনের উত্তম স্থান।

Comments