গরুর গোশতের দাম হ্রাস এবং অন্য ব্যবসায়ীদের শিক্ষা

গরুর গোশতের দাম হ্রাস এবং অন্য ব্যবসায়ীদের শিক্ষা

গরুর গোশতের দাম হ্রাস এবং অন্য ব্যবসায়ীদের শিক্ষা

 হঠাৎ করে কমে গেছে গরুর গোশতের দাম। কোন কোন দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬০০ টাকা কেজি। দেড়-দুইশ’ টাকা দাম কমে যাওয়ায় গরুর গোশতের দোকানে হচ্ছে প্রচুর ভীড়। কিন্তু কেন হঠাৎ কমলো গরুর গোশতের দাম? রহস্য কি? তাছাড়া সব দোকানেও কমেনি। কমেছে কিছু কিছু দোকানে। আর সেসব দোকানেই ভীড় করছে প্রচুর ক্রেতা।

 

গরুর গোশতের হঠাৎ দাম কমার জন্য কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য-

 

১. বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে গরু উৎপাদন।

২. কোরবানীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোরবানী না হওয়া এবং প্রচুর গরু রয়ে যাওয়া।

৩. গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানীতে অবিক্রিত গরুর পালা ব্যয়সাপেক্ষ।

৪. খামারী কম দামে গরু ছেড়ে দেয়া। কসাইরা কম দামে গরু কিনতে পারা।

৫. সাধারণত গোশতের পাইকারী রেট ও খুচরা রেট ভিন্ন থাকে। কিন্তু বর্তমানে কসাইরা পাইকারী রেট ও খুচরা রেট এক করে গোশত বিক্রি করছে। কেউ ১০০ কেজি নিলেও যে দাম, ১ কেজি নিলেও সে দাম।

৬. কোরবানীর সময় সব গোশত মিক্সড করে বিলি হয়, বর্তমানে কসাইরা সেভাবে বিক্রি করছে। এতে গোশত-চর্বি-হাড় মিলিত সবার ভাগে পড়ছে। কিছু কিছু কসাই এ বিষয়টি নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ালেও ক্রেতারা এতে সন্তুষ্ট, তাদের কোন সমস্যা নেই। কারণ চর্বি কিছু থাকলেও গরুর গোশতের কোয়ালিটি আগের থেকে ভালো। জবাই হচ্ছে বড় ও ভালো মানের গরু।

 

আসলে মূল্যস্ফীতির কারণে সব কিছু দাম বাড়ায় ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছিলো। অনেকে স্বল্প বাজার করে সংসার চালাচ্ছে। ক্রেতাদের দোকানমুখী করতে তাই কিছু কসাই স্বল্প লাভে বিক্রি করার উদ্যোগ নেয়। অর্থাৎ লাভ কম, কিন্তু বিক্রি বেশি। এতে এমন অবস্থা হয়, যে দোকানে দিনে ২-৩টি গরু জবাই হতো, সেখানে ৯০-১০০টি গরু জবাই হয়। ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে তার মূলধনকে অধিকবার রোলিং করতে পারে। এতে তাদের পরিশ্রম বাড়ে, কিন্তু মোটের উপর লাভ থেকে যায়।

 

আমার মনে হয়, কয়েকজন গোশত ব্যবসায়ী (কসাই) এর এই ব্যবসা পলিসি অনেক ব্যবসায়ীকেই অনুপ্রাণিত করবে। যেহেতু মূল্যস্ফীতিতে সব কিছুর দাম উর্ধ্বমূখী, সাধারণ মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। তাই ক্রেতাকে আবার দোকানে ফিরিয়ে আনতে হলে সকল ব্যবসায়ীকে তাদের অনুসরণ করা দরকার। স্বল্প লাভে পণ্য ছাড়তে হবে, সর্বোচ্চ বিক্রি করতে হবে, মূলধন অধিক রোলিং করতে হবে। তখন মোটের উপর বেশি লাভ করতে পারবে ব্যবসায়ীরা।

 

তবে এটা করা একটু কঠিন। কারণ প্রতি পণ্য ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট বা সমিতি থাকে। কেউ সেই সিন্ডিকেট বা সমিতির নিয়ম ভেঙ্গে কিছু করতে গেলে অন্যরা বাধা দেয়। যেমন গরু গোশত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিছু ব্যবসায়ী যখন কম দামে গরু গোশত ছাড়ছে, তখন অন্যরা বাধা দিচ্ছে। তাকে হেনস্তা করতে চাচ্ছে। আমার মনে হয়, ব্যবসায়ীদের এ ধরনের মানসিকতা থেকে সরে আসা উচিত। ঐ ব্যবসায়ী কিভাবে কম দামে ছেড়ে লাভবান হচ্ছে, আর অন্যরা কেন লাভবান হচ্ছে না, সেই জ্ঞান অন্যদেরও বুঝতে হবে। সেই পলিসি ধরতে হবে। একজন কম দামে ছাড়তে পারছে বলে, অন্যরাও তাকে বাধা দিবে, এটা তো ঠিক না। বরং অন্যদেরও ব্যবসায়ীক পলিসি আপডেট করতে হবে। তখন দেখা যাবে, সব কিছুর সমাধান হবে। যাতে স্বল্প দামে পেয়ে কাস্টমারও সন্তুষ্ট হবে, আবার ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে। 

Comments