রাজধানীতে এবার পূজার মণ্ডপ ২৪৪টি, অথচ কুরবানীর হাট ছিলো মাত্র ১৬টি

পূজার মণ্ডপ ২৪৪টি, অথচ কোরবানীর হাট ছিলো মাত্র ১৬টি

রাজধানীতে এবার পূজার মণ্ডপ ২৪৪টি, অথচ কোরবানীর হাট ছিলো মাত্র ১৬টি

লেখা: ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান

 

এ বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা পূজায় রাজধানীতে মণ্ডপ হচ্ছে ২৪৪টি। অপরদিকে এ বছর কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে রাজধানীতে পশুর হাট ছিলো মাত্র ১৬টি।  শতকরা ৯৮% মুসলমানের জন্য কোরবানীর হাটের সংখ্যা সরকার বাড়াতে চায় না, কিন্তু মাত্র ১.৫% হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মণ্ডপ সংখ্যা বছর বছর ঠিকই বৃদ্ধি পায়।

সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা মণ্ডপগুলোতে অনুদান দেয়। যেমন, মণ্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি করে সরকারী চাল দেয়া হয়, এভাবে দেশে ৩৩ হাজার মণ্ডপে সাড়ে ১৬ লক্ষ কেজি করে চাল দেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি মণ্ডপে এসে লক্ষ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেয়। এছাড়া পূজার মণ্ডপে বিদ্যুৎ সরবারহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারী উদ্যোগে জেনারেটরের তেলের খরচ দেয়া হয়, যেন বিদ্যুৎ চলে গেলে মণ্ডপ অন্ধকার না হয়। এছাড়া প্রত্যেক মণ্ডপে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ বাহিনীর সদস্য থাকে। অর্থাৎ পুলিশী নিরাপত্তায় হিন্দুদের পূজা করার সুযোগ করে দেয় রাষ্ট্র।

অপরাদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কোরবানীর ঈদ পালন করতে গেলে নানা উপায়ে বাধা তৈরী করা হয়। যেমন- হাটের জন্য সরকারী মাঠগুলো সিটি কর্পোরেশন ফ্রি দেয় না, টাকার বিনিময়ে ইজারা দেয়। অতঃপর কোরবানীর গরু কিনতে গেলে প্রত্যেক পশু ক্রয়ের পর ৫ শতাংশ করে হাসিল নামক চাদা দিতে হয়। দেখা যায় প্রতি বছর কোরবানীর ঈদ আসলে কোরবানী দাতাদের থেকে ইজারাদাররা হাজার হাজার কোটি টাকা হাসিল নামক চাঁদা সংগ্রহ করে।

আবার, পূজার মণ্ডপগুলো হয় শহরের মাঝে। অনেক এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে মণ্ডপ করা হয়। কিন্তু মুসলমানদের কোরবানীর পশুর হাটগুলোকে শহর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়, বলা হয়- হাট নাকি যানজট তৈরী করে। এছাড়া হাটগুলোতে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যেন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কোন গুরুত্ব নেই।

আবার কোরবানী পশু জবাই পরিবেশ দূষণ করে এমন দাবী তুলে কোরবানীর স্পট সীমিত করার দাবী করা হয়। কিন্তু দূর্গাপূজার মূর্তি পানিতে ঢুবালে নদী-পুকুর দূষণ হয়, সেই কথা কেউ বলে না।

ছুটির ক্ষেত্রে মুসলমানরা বৈষম্যের স্বীকার হয়। দেখা যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজার সময় সাধারণ ও ঐচ্ছিক মিলিয়ে ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৫ দিন ছুটি পায়। অপরদিকে মুসলমানরা ঈদের সাধারণ ও নির্বাহী ছুটি মিলিয়ে মোট ছুটি পায় মাত্র ৩ দিন। এই সামান্য ছুটিতে বাড়ি ফিরতে লাগে তীব্র যানজট, অনেকক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ে।

এভাবেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা প্রতিনিয়ত ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে। অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সামান্য জনসংখ্যা হওয়ার পরও অধিক সুযোগ সুবিধা লাভ করছে।

এক্ষেত্রে মুসলমানদের উচিত সচেতন হওয়া, রাষ্ট্রের কাছে তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবী করা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে গুটি কয়েক হিন্দু এত সুযোগ সুবিধা পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কেন বঞ্চিত হবে, কেন তাদের ধর্ম পালনে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে না- এ দাবীতে সোচ্চার হতে হবে। কথায় বলে- ‘না কানলে মাও নাকি দুধ দেয় না।’ মুসলমানরা সোচ্চার হলেই কেবল সরকার-রাষ্ট্রের টনক নড়বে, সেই দিকে দৃষ্টিপাত যাবে, এর আগে না।

Comments