পরিবেশবাদ ও ধোঁকা

পরিবেশবাদ ও ধোঁকা

 পরিবেশবাদ ও ধোঁকা

গত ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে দুবাই শুরু হয়েছে কপ-২৮ সম্মেলন। এ সম্মেলন চলবে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। পৃথিবীর প্রায় ২০০টি দেশ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এ তহবিলের নাম গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড। সংগৃহিত এ ফান্ড আবার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী কার্যক্রমে খরচ হবে। মূলতঃ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নামক এজেন্ডার ১৩ নম্বর লক্ষ্য ‘ক্লাইমেট এ্যাকশন’ অর্জনের কাজ এটি।

 

প্রথমেই বলে রাখি, পরিবেশবাদীরা ক্লাইমেট পরিবর্তনে যে সমস্ত দাবী করে থাকে তার প্রায় সবগুলো আমার কাছে ভুয়া মনে হয়। বিশেষ করে তারা দাবী করে, কার্বন নিঃসরনের কারণে নাকি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এজন্য তারা ১০০-১৫০ বছরে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন একটি হিসেবও প্রকাশ করে। আসলে পৃথিবীর ক্লাইমেট বোঝার জন্য এক-দেড়শ’ বছর কোন সময় না। যদি ৫-১০ হাজার বছরের ক্লাইমেট ডাটা পর্যবেক্ষণ করা যেতো, তখন দেখা যেতো ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এক-দেড় ডিগ্রি এদিকে-ওদিক হওয়া খুব সাধারণ বিষয়। এবং নির্দ্দিষ্ট সময় পর পর তা উঠানামা করে। এর সাথে কার্বন নির্গমন বা পরিবেশবাদী বয়ানের কোন সম্পর্ক নেই। বরং স্বাভাবিক নিয়মেই তা উঠানামা করে।

 

আসলে পরিবেশবাদ বলে কিছু নেই, সব হইলো পরিবেশের কথা বলে কারো ব্যবসা উন্নতি করা, আর কারো ব্যবসার পতন ঘটানো। যেমন এবার কপ-২৮ এর কথাই ধরেন। জীবাষ্ম জ্বালানি মানে তেল, গ্যাস, কয়লা ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। কারণ এগুলোর মাধ্যমে নাকি কার্বণ নিঃসরণ ঘটে পরিবেশ দূষণ হবে। এজন্য বলা হচ্ছে, কার্বন দূষণ থেকে বাচতে পরমাণু বিদ্যুতের দিতে ঝুকতে হবে। এবারের সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পারমাণবিক শক্তির তিনগুণ বৃদ্ধি চেয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে ২০টিরও বেশি দেশ। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩)

 

প্রশ্ন হচ্ছে, তেল, গ্যাস, কয়লাতেই শুধু পরিবশে দূষণ হয়? পরমাণু জ্বালানিতে কি পরিবেশ দূষণ হয় না?

অবশ্যই হয়। এবং পরমাণু বর্জ্যে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় দুষণের সম্ভবনা থাকে। তাহলে কেন পরিবেশ দূষণের কথা বলে জীবাষ্ম জ্বালানিকে নিরুৎসাহিত এবং পরমাণু জ্বালানিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে?

এটাই হলো পরিবেশবাদ। কারণ তেল, গ্যাস, কয়লার বদলে পরমাণু জ্বালানির দিকে যাওয়া মানে জ্বালানি ব্যবসা এক হাত থেকে অন্য হাতে নিয়ে যাওয়া।

 

সত্যিই বলতে জ্বীবাষ্ম জ্বালানি ব্যবহার কার্বন দূষণের যে তত্ত্ব প্রচার করা হয়, সেটাও আমার কাছে ভুয়া মনে হয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক অতিরিক্ত কার্বন দমন করার জন্য ‘কার্বন সাইকেল’ নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি পরিবেশে এমনিতেই চালু রেখেছেন। যে পদ্ধতিতে কার্বন ঘুরে ফিরে আবার স্ব-স্থানে ফিরে আসে। কার্বন নিঃসরণে কার্বন বেড়ে যাচ্ছে বলে যে গাল-গল্প শোনা যায়, কার্বন সাইকেলের ক্ষমতার সামনে তা কিছুই না।

 

বাংলাদেশেও পরিবেশবাদীদের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে একই বিষয় দৃশ্যমান হয়। যেমন-

 

পরিবেশবাদীরা নদী ড্রেজিং এর বিরোধীতা করে। কিন্তু দেখা যায় ড্রেজিং না করলে নদীগুলো ভরাট হয়ে নদীপথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়ক পথের দরকার হয়। তখন সড়কের জন্য সেতু, রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। প্রচুর গাড়ি আমদানি করতে হয়। পরিবেশবাদের নাম দিয়ে সড়ক, সেতু নির্মাণকারী এবং গাড়ি নির্মাণকারী ব্যবসায়ীদের বিপুল লাভ করিয়ে দেয়া হয়।

 

আবার পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর বিরোধীতার কারণে সিলেটের নদী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। বলা হয়, নদী থেকে পাথর উত্তোলন করলে নাকি পরিবেশ নষ্ট হয়। এরপর সেই পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এতে ভারতের পাথর রফতানিকারকদের লাভ হয়। পাশাপাশি আমদানির নামে প্রচুর পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়। অথচ পাথর উত্তোলন বন্ধ করায় নদীগুলোর ক্ষতি হয়। যেমন- কয়েক বছর আগে সিলেট-সুনামগঞ্জে যে ভয়াবহ বন্যায় হয়ে গেলো, তার মূল কারণ ছিলো সিলেটের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। আর সেই ভরাট হয়েছিলো ভারত থেকে ভেসে আসা পাথর দিয়ে। পাথর উত্তোলন করলে নদীগুলো ভরাট হওয়ার সম্ভবনা ছিলো না।

 

একইভাবে পরিবেশবাদীদের চাপে বাংলাদেশে বিপুল কয়লার মজুদ থাকলেও তা উত্তোলন করা যাচ্ছে না, বরং বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করলে বাইরের কোম্পানিগুলোর যেমন লাভ, তেমনি আমদানির মাধ্যমে টাকা পাচার করতে সুবিধা। আর এগুলো সব হচ্ছে পরিবেশবাদী বয়ানের নামে।

 

দেখা যায়, জাতিসংঘ যে ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ ফান্ড সংগ্রহ করে, বাংলাদেশেও সেখান থেকে কিছু ফান্ড আসে। কিন্তু এসব ফান্ড পেলেও সমস্যা। কারণ এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘বেলা’র মত পরিবেশবাদী এনজিওগুলো সক্রিয় হয়। যাদের কার্যক্রমে দেশী শিল্প ধ্বংস হয় এবং বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়।

 

এ কারণে পরিবেশবাদী ও তাদের ধোকাবাজি কাযক্রম সম্পর্কে আমাদের সকলের সচেতন থাকা জরুরী।

Comments