বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু ফিরিয়ে আনা হোক

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু ফিরিয়ে .

বাংলাদেশের পাসপোর্টে 'একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু ফিরিয়ে আনা হোক

লেখা: এস হাবীব

 

বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সব পাসপোর্টে পূর্বে লেখা থাকত- 'দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট ইসরায়েল।' অর্থাৎ এই পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করা যাবে, শুধুমাত্র ইসরাইল ছাড়া। কিন্তু ২০২১ সালে ই-পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু বাদ দেয়া হয় এবং লেখা হয়- 'দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড।  অর্থাৎ এই পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের সকল দেশ ভ্রমণ করা যাবে।

মূলতঃ বাংলাদেশ শুরু থেকেই দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে।  এ কারণে কখন বাংলাদেশ ইসরাইলকে সমর্থন করা তো দূরের কথা, ইসরাইল ভালো কিছু দিতে চাইলে সেটাও গ্রহণ করেনি ।  যেমন- ইতিহাসে লেখা হয়, বাংলাদেশকে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করা রাষ্ট্র ছিলো ইসরাইল। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র ৩৩ দিনের মাথায়, ১৯৭১ সালের ২৮শে এপ্রিল। কিন্তু সেই কঠিন সময়ে ইসরাইলের সেই স্বীকৃতি বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশকে ইসরাইল অস্ত্র সহযোগীতাও দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেই অস্ত্র নিতেও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা রাজী হয়নি। পরবর্তীতে আবারও ১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ তখনও তা গ্রহণ করেনি।

মূলতঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় দখলদার ইসরাইলের বিপক্ষে ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের ভাষণে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা আজ গর্বিত যে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা আরব ভাইদের এবং প্যালেস্টাইনি ভাইদের পাশে রয়েছি।  ইসরাইলিরা তাদের ন্যায্য অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে।  ইসরাইলিরা জাতিসংঘের প্রস্তাব মানে নাই।  তারা দখল করে বসে আছে আরবদের ভূমি। আরব ভাইদের এ কথা বলে দেবার চাই এবং তারা প্রমাণ পেয়েছে যে, বাংলার মানুষ তাদের পিছনে রয়েছে। আরব ভাইদের ন্যায্য দাবির পক্ষে রয়েছে। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে তাদের সাহায্য করবো।’ (মওলানা আবদুল আউয়াল, বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ, আগামী প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা, তৃতীয় মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা-২৭)

১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আরব ভাইদের ওপর যে নিদারুণ অবিচার হয়েছে, অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। অন্যায়ভাবে দখলকৃত আরবভূমি অবশ্যই ছাড়তে হবে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে জেরুজালেমের ওপর। আল্লাহর কৃপায় আমরা এখন আমাদের সম্পদ ও শক্তি এমনভাবে সুসংহত করতে পারি, যাতে আমাদের সবার জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জন করা যায়। এই সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সবার যৌথ প্রচেষ্টা সফল করুন।’ (সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১০, পৃ.-১৪-১৫)

[বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিলিস্তিনের হেবরন শহরে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সড়কও আছে।]

এ কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫ (গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বোচ্চ নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।”

সেই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণেই তাই শুরু থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্টে 'দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড 'একসেপ্ট ইসরায়েল’ কথাটি সংযুক্ত ছিলো। কিন্তু ২০২১ সালে ই-পাসপোর্ট থেকে যে 'একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে তা বঙ্গবন্ধুর তৈরী করা বৈদেশিক নীতির সম্পূর্ণরূপে বিরোধী। যদিও এ সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টকে নাকি আন্তর্জাতিক মানের করতে `একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে। তার কথার উত্তরে বলতে হয়, তবে কি ৫০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মানসম্মত ছিলো না? এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশীরা কি সারা বিশ্ব ভ্রমণ করেনি?

সুতরাং বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু বাদ দেয়া বাংলাদেশের সংবিধান ও বৈদেশিক নীতির সম্পূর্ণরূপ বিরোধী। শুধু তাই নয়, এতদিন যাবত বাংলাদেশ দখলদার ইসরাইলের বিপক্ষে যে শক্ত অবস্থান জানিয়ে আসছিলো, পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু বাদ দেয়ায় তা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ ও ফিকে হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পাসপোর্টে পুনরায় ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ অংশটুকু ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে উচ্চস্বরে দাবী জানাচ্ছি।

 

Comments