নাস্তিকতা বৃদ্ধির পেছনে সালাফিজম ?
লেখা: এস হাবীব
উসমানীয় সম্রাজ্যের শেষ শায়খুল ইসলাম ইমাম মুহম্মদ জাহেদ কাউসারী সাহেবের একটা বইয়ের শিরোনাম - Anti-Madhabism: A Bridge to Irreligion অর্থ “লা মাহজাব : নাস্তিকতা যাওয়ার একটি রাস্তা।” ইমাম মুহম্মদ জাহেদ কাউসারী সাহেব বইটির মধ্যে দেখিয়েছেন, কীভাবে লা-মাজহাব বা সালাফিজম মতবাদ মানুষকে ধাপে ধাপে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যায়।
আসলে ঈমানদার শব্দের অর্থ হচ্ছে বিশ্বাসী। মহান আল্লাহ পাক ঈমানদারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সূরা বাক্বারার ৩ নং আয়াত শরীফে বলেছেন, ঈমানদারগণ হচ্ছেন অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপনকারী।
এই অদৃশ্যের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত যেমন আছে, তেমনি উনার ক্ষমতাবলে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মু’জেজা, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু ও ওলীআল্লাহগণের কারামতও আছে, যা পবিত্র কুরআন শরীফেও বর্ণিত আছে। কিন্তু ওলীআল্লাহ উনাদের কারামতের বিষয়টি এড়ানোর জন্য আহলে হাদীস বা সালাফিদের মধ্যে সব সময় একটা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে আহলে হাদীস বা সালাফিরা একটা বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে ওলীআল্লাহ উনাদের কারামতকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ অতি সম্প্রতি দুটি ঘটনা উল্লেখ করবো-
অতি সম্প্রতি কোন একজন মুসলমানের লাশ বেশ কয়েক বছর পর কবর থেকে উত্তোলনের পর অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইউটিউবে সেই বিশেষ দলের এক বক্তা বললো- “লাশ অক্ষত থাকা মানে বুজুর্গী নাও হতে পারে। বিভিন্ন খাদ্য থেকে ফরমালিন মানব শরীরে জমা হওয়ায় আজিমপুর কবরাস্থানের অনেক লাশই এখন পচে না, অক্ষত থাকে।
যদিও সাইন্সের নামে পিউর ভুয়া কথা, কিন্তু এই বক্তার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু তাদের শ্রোতাদের সাইন্স শেখানো নয়, বরং তার স্বভাবসিদ্ধ উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের কারামতকে অস্বীকার করা।
কিছুদিন আগে ঝিনাহদহ সদরে একটি কবর নিয়ে নিউজ হয়, যে কবরটি মূলত অনেক বহু পুরাতন। কবরটি পশ্চিমে-পূর্বে বাঁকা। কবরে শায়িত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের বক্তব্য হচ্ছে, কবরটি দুইবার উত্তর-দক্ষিণ ঠিক মত করা হয়েছিলো, কিন্তু দুইবারই বেঁকে যায়। পরবর্তীকালে তারা স্বপ্নে দেখেন, কবরে শায়িত ব্যক্তি বলছেন, “উনার পায়ের দিকে একজন বুজুর্গ ব্যক্তির কবর আছে। তিনি আদবের কারণে সেই দিকে পা দিতে চাচ্ছেন না, এজন্য কবর বার বার ঘুরে যাচ্ছে। কবরটি যেন আর মেরামত না করা হয়, যেমন পশ্চিম-পূর্বে আছে, তেমনই যেন থাকে।” সেই কথা অনুসারে তার কবর আর মেরামত করা হয় না।
ফেসবুকে এ ধরনের পোস্টের নিচে আমি বহু সালাফি বা আহলে হাদীসের কমেন্ট দেখলাম, যারা এই ঘটনাকে অস্বীকার করে ব্যঙ্গ করছে।
মূলতঃ ওলী আল্লাহ উনাদের অদৃশ্য শক্তি বা কারামতকে অস্বীকার করতে গিয়ে আহলে হাদীস বা সালাফিরা অদৃশ্য বিষয়গুলোর একটা বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করে। এবং এক পর্যায়ে তা নবী রাসূলগণের মুজেজা শরীফ এবং আল্লাহ পাক উনার কুদরতের অদৃশ্য বিষয়াদীকে অস্বীকার করা পর্যন্ত পৌছে যায়। এবং অস্বীকার করতে করতে এক পর্যায়ে ঐ ব্যক্তি অস্বীকারকারী বা নাস্তিক হয়ে যায়।
বর্তমান সমাজে নাস্তিকতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে লা-মাহযাবী বা সালাফিজমের প্রচার প্রসার। মূলত তাদের শেখানো অদৃশ্য শক্তিকে অস্বীকার করা বা বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করতে গিয়ে একজন মানুষ নাস্তিকতার দিকে পা বাড়ায়, যা আজ থেকে শত বছর আগেই উসমানীয় সম্রাজ্যের শেষ শায়খুল ইসলাম ইমাম মুহম্মদ জাহেদ কাউসারী সাহেব বলে গেছেন।