পাঠ্যবইয়ে সাইন্স হ্রাস ও আর্টস বৃদ্ধির কারণ

পাঠ্যবইয়ে সাইন্স হ্রাস ও আর্টস বৃদ্ধির কারণ

পাঠ্যবইয়ে সাইন্স হ্রাস ও আর্টস বৃদ্ধির কারণ

-ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

 আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে ধর্মবিদ্বেষী লেখিকা তসলিমা নাসরিন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলো। স্ট্যাটাসটি ছিলো এমন- “সায়েন্স পড় সায়েন্স পড় বলে বলে মানুষকে র‍্যাশনাল (যুক্তি নির্ভর) হওয়ার উৎসাহ দিয়েছি জীবনভর। লাভ হয়নি। সায়েন্সে পড়া মানুষগুলোমানে ওই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারগুলোফিজিক্স কেমেস্ট্রির পন্ডিতগুলোবেশির ভাগই দেখি ধর্মের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। ধর্মের আজগুবি গপ্প নিয়ে সন্দেহ করেপ্রশ্ন করে,বা ধর্ম থেকে সরে আসে যারাতারা অধিকাংশই আর্টসের সাব্জেক্ট নিয়ে লেখাপড়া করেছেসাহিত্য বা দর্শন পড়েছেআর্ট কলেজে পড়েছে ,ফিল্ম নিয়ে পড়েছে। তাহলে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার জন্য বিজ্ঞান মুখস্ত করার দরকার হয় নাবিজ্ঞান পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ারও দরকার হয় না!!” (তসলিমা নাসরিক ফেসবুক স্ট্যাটাস, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮)

  এ স্ট্যাটাস থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ধর্মবিদ্বেষী দলরা জানে, সাইন্স বা বিজ্ঞান পড়লে মানুষ এক সময় ধার্মীক হয়। অপরদিকে আর্টসের পড়ুয়াদের মধ্যে কেউ কেউ ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়। এজন্য দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাইন্স ফ্যাকাল্টিতে ধার্মীকদের পরিমাণ বেশি। অপরদিকে আর্টস ফ্যাকাল্টিতে সাইন্স ফ্যাকাল্টির তুলনায় ধর্মহীনদের পরিমাণ বেশি।

 বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে পাঠ্যবইগুলোতে সাইন্স-আর্টস-কমার্স এক করে সাইন্স পাঠকে শিকেয় তোলা হয়েছে। সাইন্স পাঠ কতটুকু হ্রাস করা হয়েছে, ড. জাফর ইকবাল প্রণীত নবম দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইটি পড়লে তা বুঝা সম্ভব। যেমন আগে, পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান আলাদা আলাদা বই ছিলো। কিন্তু এখন একটি মাত্র বইয়ের মধ্যে ৩টি বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে।

 ১৯৯৬ সালে প্রণীত কারিকুলামে ৯ম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ে মোট ‍পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ৩৫৪টি।

অপরদিকে, ২০২৪ সালে নতুন কারিকুলামে ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ এ পদার্থ বিজ্ঞান শেখানো হয়েছে মাত্র ৫৮টি পৃষ্ঠার মাধ্যমে। ৩৫৪ পাতার শিক্ষা মাত্র ৫৮ পাতায় কিভাবে দেয়া হবে, কেউ বলতে পারবেন ?

 ১৯৯৬ সালে প্রণীত কারিকুলামে (সর্বশেষ ২০১২) রসায়ন বিজ্ঞান বইয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ২২৮টি। অপরদিকে ২০২৪ সালে ড. জাফর ইকবাল প্রণীত ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’-এ রসায়ন পাঠ মাত্র ৪৯ পৃষ্ঠা। ২২৮ পাতার রসায়ন শিক্ষা কিভাবে মাত্র ৪৯ পাতায় শেখানো হবে ?

 ১৯৯৬ সালের কারিকুলামে (সর্বশেষ ছাপা ২০১২) ৯ম শ্রেণীর জীব বিজ্ঞান বইয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ২৬৮টি। অপরদিকে ২০২৪ সালে ড. জাফর ইকবাল প্রণীত ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’- এ জীব বিজ্ঞান শেখাতে পৃষ্ঠা সংখ্যা মাত্র ৭৬ পাতা। ২৬৮ পাতার জীব বিজ্ঞান শিক্ষা কি মাত্র ৭৬ পাতা শিক্ষা দিয়ে পূরণ করা যাবে ?

 সাইন্স হ্রাস করা হলেও পাঠ্যবইগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আর্টসের সাবজেক্ট। যেমন- নাচ, গান, খেলাধূলা, নাটক, আকা, মূর্তি বানানোতে বেশি ঝুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে, স্কুলের প্রতিটি ক্লাস যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এক একটি শাখাতে রূপান্তরিত হয়েছে।

 লক্ষণীয়, বর্তমান পাঠবই প্রণয়নকারী বলছে, এ কারিকুলামের মূল উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে তৈরী করা। অথচ বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানমনষ্ক – কিন্তু এক নয়। বিজ্ঞানমনষ্কতা হচ্ছে এক ধরনের দার্শনিকতা, যা বিজ্ঞানের মত পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় নয়। বিজ্ঞানমনষ্কতা বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে আসলে কলাবিজ্ঞান মনষ্কতা। অর্থাৎ দেখলে মনে হবে সাইন্স, কিন্তু বাস্তবে তা এক প্রকার দর্শন, যা প্রমাণিত কিছু নয়। সুতরাং এই কলাবিজ্ঞান পড়িয়ে আমাদের বাচ্চারা কিভাবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে কিংবা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অগ্রসর হবে, তা খুব চিন্তার বিষয়।

التعليقات