শিল্প উৎপাদিত ভোজ্য তেল কতটুকু নিরাপদ ?
লেখক- শেখ মুহম্মদ রাফসানযানি
দৈনন্দিন জীবনে আমরা কয়েক প্রকার ভোজ্য তেল খেয়ে থাকি। এর মধ্যে সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্র্যান, পাম তেল ইত্যাদি অন্যতম। ভোজ্য তেল উদ্ভিদের বীজ বা অংশ থেকে দুটি প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়।
১. পেষণ পদ্ধতি, যাকে আমরা ঘানি ভাঙ্গা তেল বলি।
২. দ্রাবক নিষ্কাশন। যা শিল্পক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে তেল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়।
আমরা বাজারে সাধারণত যে সুন্দর, প্যাকেটজাত, চকচকে, পরিষ্কার তেল পাই, তার সবটাই শিল্প উৎপাদন তথা দ্রাবক নিষ্কাষন পদ্ধতির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে দ্রাবক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে হেক্সেন নামক একটি জৈব যৌগ, যা পেট্রোলিয়াম থেকে প্রাপ্ত, গন্ধহীন তরল। এজন্য প্রথমে উদ্ভিত বীজ বা অংশকে হেক্সেনে মিশিয়ে পরবর্তীতে সেখান থেকে বিভিন্ন ধাপে তেল নিষ্কাষণ করা হয়। যদিও বলা হয়, বিভিন্ন পদ্ধতিতে হেক্সেনকে সম্পূর্ণ রূপে পৃথক করে বিশুদ্ধ তেল পাওয়া যায়, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটে না। সামান্য কিছুটা হলেও হেক্সেন তেলে মিশ্রিত থেকে যায়। দেখা যায়, হেক্সেন দিয়ে নিষ্কাশিত পরিশোধিত ভোজ্য তেলে প্রতি কিলোগ্রামে আনুমানিক ০.৮ মিলিগ্রাম অবশিষ্ট হেক্সেন থাকে।
উল্লেখ্য হেক্সেন একটি বিষাক্ত জৈব যৌগ। এটি মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসলে বিষক্রিয়া তৈরী করতে পারে। যেহেতু নিষ্কাষিত তেলে খুব সামান্য পরিমাণে হেক্সেন অবশিষ্ট থাকে, তাই হয়ত তাৎক্ষণিক বড় কোন বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে না, কিন্তু সামান্য পরিমাণে হলেও পরিপাক প্রণালীতে সমস্যা তৈরী হওয়ার বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যা দীর্ঘমেয়াদে বড় ক্ষতি করতে পারে।
এছাড়া নিষ্কাষনের পরে বিভিন্ন ধাপে ভোজ্যতেলকে ডিগামিং, নিউট্রালাইজিং, বিচিং, ডিওয়াক্সিং এবং সবশেষ ডিওডোরাইজিং করতে ফসফরিক এসিড, কস্টিক সোডা, সাইট্রিক এসিড, বিচিং আর্থ, টনসিল, অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, ফিল্টার এইড ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। যদিও দাবী করা হয়, এসব রাসায়নিক দ্রব্য কোনটাই অবশিষ্ট থাকে না, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ সে সম্পর্কে কতটুকু নিশ্চিত হতে পারি ?
বর্তমানে শিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে তৈরী ভোজ্য তেল খাওয়ার ফলে অনেকেরই গ্যাস্ট্রিকসহ নানান পেটের অসুখ বিসুখ হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কি কারণে হচ্ছে তা স্পষ্ট হচ্ছে না। কেউ তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণাও করছে না, মিডিয়াও তা নিয়ে নিউজ করে না। এর একটি প্রধান কারণ সম্ভবত গবেষণা সেক্টর ও মিডিয়া সেক্টর উভয়ই বড় বড় কর্পোরেটদের টাকায় চলে। কর্পোরেটদের ব্যবসার বিরুদ্ধে যাবে বিধায় সম্ভবত গবেষকরা গবেষণাও করে না। আর মিডিয়াও সেটা নিয়ে নিউজ করে না। এছাড়া তথাকথিত পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সাথেও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর গোপন যোগসাজসের কথা শোনা যায়। যেহেতু এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। তাই হয়ত পরিবেশবাদী বা নিরাপদ খাদ্যের লোকেরা ভুলে বলে না, “হেক্সেন নামক একটি বিষ দিয়ে কেন ভোজ্য তেল নিষ্কাষণ করতে হবে ?”
শিল্প উৎপাদিত ভোজ্য তেলের কারণে পেটের অসুখের বিষয়টির প্রমাণ আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত। আমরা চাই, ঠিক কি কারণে এই অসুখ-বিসুখের ঘটনা ঘটছে তার বাস্তব কারণ উৎঘাটিত হোক। তার আগে সবাই আপাতত শিল্প উৎপাদিত ভোজ্য তেল না খেয়ে ঘানি ভাঙ্গা বা পেষণ পদ্ধতিতে পাওয়া ভোজ্য তেলে অভ্যস্ত হই, এমনটাই আহবান থাকবে সবার জন্য।