ঈদে মিলাদুন্নবীকে যারা বিদআত বলে
তারা সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী
লেখা: এস হাবীব
যেসব সউদীপন্থীরা ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলকে বিদআত বলে ফতওয়া দিচ্ছে, তারা কিন্তু সউদীর জাতীয় দিবস আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করছে। বাংলাদেশে যারা বিদআত ফতওয়া দিচ্ছে, তারা ১৬ই ডিসেম্বর, ১লা বৈশাখ পালন করছে। সার্টিফিকেট পেয়ে শোকরানা মাহফিল করছে, ফেসবুক ফলোয়ার মিলিয়ন হলে শোকারানা মাহফিল করছে, ভোট-রাজনীতির জন্য মিছিল-মাহফিল করছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে, তারা বলে, “এসব মাহফিল তো দ্বীনের অংশ হিসেবে কেউ করে না। দ্বীনের অংশ মনে করে করলে তখন বিদআত হতো।”
তাদের কথা অনুসারে দাড়াচ্ছে, দ্বীন ও দুনিয়ার আমলের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। দ্বীনের নামে অনেক কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু দুনিয়ার নামে অনেক কিছু করতে পারবেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বীন ও দুনিয়ার আমলের মধ্যে পার্থক্য আছে বলে যে দাবী করা হচ্ছে, এটা শরীয়তে কোথায় আছে ? আমি বলতে চাচ্ছি, দ্বীনের নামে করা যাবে না, কিন্তু দুনিয়ার নামে করতে পারবেন, এমন ফতওয়া ইসলামী শরীয়তে কোথায় আছে ?
সত্যিই বলতে দ্বীন ও দুনিয়ার পার্থক্যের এমন ফতওয়া আমি এখনও দ্বীন-ইসলামে শুনি নাই। কারণ দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কুরআন হাদীস ইজমা ক্বিয়াস দ্বারা পরিপূর্ণ।
তবে হ্যাঁ শুনেছি খ্রিস্টানদের মধ্যে। আমরা এখন যে ‘সেক্যুলারিজম’ তত্ত্বের কথা বলি এটা হচ্ছে সেটাই। ইংরেজি সেক্যুলার শব্দের অর্থ - পার্থিব; ইহজাগতিক; লোকায়ত বা দুনিয়া। সেই অর্থে সেক্যুলারিজমের অর্থ হচ্ছে - ইহজাগতিকতা বা ইহবাদ। ৩১২ খ্রিস্টাব্দে মিলান ঘোষণার মধ্যে দিয়ে চার্চ ও রাষ্ট্র অর্থাৎ দ্বীন ও দুনিয়ার কাজকে আলাদা করা হয়, যার নাম দেয়া হয় সেক্যুলারিজম।
অর্থাৎ খ্রিস্টানরা দ্বীন ও দুনিয়াকে আলাদা করে যে সিস্টেম তৈরী করেছিলো তাকেই বলে সেক্যুলারিজম। কিন্তু ইসলাম দ্বীন ও দুনিয়াকে আলাদা করে নাই। বরং ইসলাম হচ্ছে কমপ্লিট কোড অব লাইভ। কেয়ামত পর্যন্ত সব কিছু দ্বীন ইসলামে পাওয়া যাবে। এজন্য কুরআন হাদীছের ভিত্তিতে ইজমা-ক্বিয়াস দ্বার খোলা রাখা হয়েছে।
কিন্তু যারা “কুরআন হাদীছে নাই, তাই সেটা বিদআত, তাই মানবো না” বলে ফতওয়া দেয়, অথচ নিজেদের প্রয়োজনে দ্বীন-দুনিয়া পার্থক্য করে আমল করে তারা আসলে খ্রিস্টানদের সেক্যুলারিজম তত্ত্বে বিশ্বাসী, সেটা তারা মানুক, চাই না মানুক।