অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনিভূত করবে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিপিএল

অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনিভূত করবে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিপিএল

  অর্থনৈতিক সংকটকে আরো ঘনিভূত করবে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বিপিএল

 বর্তমান দেশে অর্থনৈতিক মন্দার বড় কারণ বৈদেশিক রিজার্ভ বা ডলার সংকট। যে কারণে এলসি খুলতে পারছে না অনেক উদ্যোক্তা। ফলে কাঁচামাল সংকটে বন্ধ হবার উপক্রম অনেক কারখানা। এ পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো ডলারের অপচয় রোধ করা এবং বিশেষ প্রয়োজনে শুধু উৎপাদনশীল খাতে তা ব্যয় করা। কিন্তু দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে দেশের ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগ বিপিএল। যেখানে প্রায় ৫৭ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে নিয়ে আসা হয়েছে। এইসব বিদেশী ক্রিকেট খেলোয়ারকে নিশ্চয়ই ডলারে পেমেন্ট দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির এ কঠিন পরিস্থিতিতে বিদেশী খেলোয়াড়দের এনে ডলার এভাবে অপচয় করা নিঃসন্দেহে জঘন্য কাজ হয়েছে।

 শুধু তাই না, বিপিএল খেলা মানে জুয়ার আসর শুরু। দেশের দোকানে দোকানে ক্লাবে ক্লাবে, পাড়ায় মহল্লায় এখন বিপিএলকে কেন্দ্র করে বসবে জুয়ার আসর। প্রতি বলে কত রান হলো, কত উইকেট পড়লো সেটা নিয়ে জুয়ার বাজি ধরবে। অনলাইনে জুয়ার সাইটগুলো বিপিএল উপলক্ষে পসরা সাজাবে। উল্লেখ্য, দেশের ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার। আর জুয়ার মাধ্যমে দেশের বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।

 এ সংক্রান্ত মিডিয়া সংবাদ বলছে-

ডিবি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার তারেক বিন রশিদ বলেন, “অনলাইনে জুয়ারিদের একটি চক্র দেশের বাইরে থেকে এসব অনলাইন বিজ্ঞাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেইসাথে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের সুযোগ থাকায় কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কারণ এসব বেটিং (জুয়া) অ্যাপ, ওয়েবসাইট বিদেশ থেকে পরিচালিত হয়। তাই এসব টাকা কোন না কোন ভাবে বিভিন্ন হাত ঘুরে দেশের বাইরেই যায়।” (তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। শিরোনাম- বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও অনলাইন জুয়া বাড়ছে)

 উল্লেখ্য বাংলাদেশে আইনত জুয়া নিষিদ্ধ হলেও বিপিএল কৌশলে মানুষকে জুয়ায় আকৃষ্ট করছে। খবরে প্রকাশ-

“বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)—এর নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্দান্ত ঢাকা—এর জার্সিতে দেখা যাচ্ছে একটি জুয়ার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন। ঢাকার ক্রিকেটারদের জার্সিতে বুকে দেখা গেছে একটি খেলার খবর সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন। একই রকম বানানে আছে একাধিক জুয়া বা বেটিং—এর ওয়েবসাইট যেখানে বিপিএল নিয়ে বাজি ধরাসহ অনলাইন ক্যাসিনো, স্লট গেমস টেবিল গেমসসহ অনেক রকম জুয়াতে অংশ নেয়ার সুযোগ। একই বানানের একাধিক বেটিং ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া যায় অনলাইনে সার্চ করলেই। বিপণনের ভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সারোগেট ব্র্যান্ডিং।” (দেশ রূপান্তর, ২০ জানুয়ারি ২০২৪)

 শুধু তাই নয়, আগামী আসর থেকে সরাসরি জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন নেবে এ টুর্নামেন্টটি। এ সম্পর্কে সংবাদ, “আগামী আসর থেকে বিপিএলের স্পন্সর হিসেবে দেখা যেতে পারে কোনো বেটিং সাইটকে এমনটাই জানিয়েছে বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে ইসমাইল হায়দার বলে, ‘বেটিং (জুয়া) সাইটগুলোকে বাইরে রেখে টুর্নামেন্ট চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের স্পন্সরের ভূমিকায় আনা হতে পারে।” (তথ্যসূত্র: ঢাকা পোস্ট, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪)

 অর্থাৎ বিপিএল নিজের আর্থিক সংস্থানের জন্য জুয়া কোম্পানির স্পন্সর দিয়ে দেশব্যাপী আরো ব্যাপকহারে জুয়াকে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। ফলে ঘরে ঘরে ছয়লাব হবে জুয়া খেলা। এমনিতেই স্কুলে পরীক্ষা নেই, পড়ালেখার চাপ নেই। এখন ছেলেপেলেকে ঘরে বসে জুয়া খেলার সুযোগ করে দিলে নগদ-বিকাশ-উপায় ব্যবহার করে সহজেই দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে। উল্লেখ্য, কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবি পরীক্ষার নাম দিয়েছে, ‘অসুস্থ প্রতিযোগীতা’। অথচ ভালো কাজে প্রতিযোগীতা করা অবশ্যই ভালো। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ভালো কাজে প্রতিযোগীতা করতে বলেছেন। যেমন- “তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও।’ (সূরা: বাকারা, ১৪৮), ‘আর তারা সৎকর্মে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে আর এরাই হলো, সৎকর্ম শীল।’ (সূরা: আলে ইমরান, ১১৪)।

 কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তরুণদের ভালো কাজে প্রতিযোগীতা বন্ধ করা দেয়ায়, তারা এখন খারাপ কাজে প্রতিযোগীতার দিকে ঝুকবে। খারাপ প্রতিযোগীতা বা খেলাধূলার তারা আবার নাম দিয়েছে ‘সুস্থ বিনোদন’। আর কথিত সেই ‘সুস্থ বিনোদন’-ই তরুণদের নিয়ে যাচ্ছে জুয়া খেলার দিকে।

 মূল কথা, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপিএল নাম টুর্নামেন্ট চালু করে অর্থনীতিকে আরো ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চালু হলো। সাথে দেশের তরুণ প্রজন্মকে ঠেলে দেয়া হলো জুয়া নামক ধ্বংসের দিকে।

Comments