সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ <br> <br>নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ

নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

লেখা: এস হাবীব

প্রশ্ন-১

দুই ঈদে নামাজ আছে, ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে নামাজ কোথায় ?

 

উত্তর: ১

আছে। নামাজের আরবী শব্দ ছলাত। ঈদে মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মুমীনগণ ছলাত-সালাম বা মিলাদ শরীফ পাঠ করেন, যা এই দিবসের ছলাত।

 প্রশ্ন-২

আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃথিবীতে আগমনের তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিক ও জোর্তিবিদদের মধ্যে মত পার্থক্য আছে।

 উত্তর: ২

গোটা কয়েক ঐতিহাসিক ও জোর্তিবিদদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও সহিহ হাদীছের মধ্যে মত পার্থক্য নেই। সহিহ হাদীছেই আছে নবীজির আগমের তারিখ ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ। (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)

 প্রশ্ন-৩

১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ তো নবীজির বিদায় দিবসও। ছাহাবীগণ ঐ দিন কেঁদেছিলেন। আমরা কেন খুশি করবো ?

 উত্তর-৩

১১ হিজরী সনে নবীজির বিদায়ের বছর ছাহাবীগণ কেঁদেছিলেন। কিন্তু তারপরে বাৎসরিকভাবে কি কেঁদেছিলেন? কাঁদেননি। কারণ কুরআন শরীফ (সূরা বাক্বারা : ২৩৪) এবং হাদীছ শরীফ (বুখারি: ৫৩৪২) অনুসারে কেউ বিদায় নিলে শোক ৩ দিন এবং স্বামীর জন্য স্ত্রীর শোক ৪ মাস ১০ দিন। এর বেশি দিন শোক পালন করা যায় না।

 প্রশ্ন-৪

নবীজি সোমবার জন্মদিন পালন করেছেন। বাৎসরিক তো পালন করেননি। তাহলে ১২ই রবিউল আউয়াল কেন পালন করবো ?

 উত্তর:৪

নবীজির বিলাদত সংশ্লিষ্ট সময়ের ধাপ হলো ৩টি।

তারিখ - ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।

বার - সোমবার।

দৈনিক সময় - সুবহে ছাদিকের সময়।

নবীজি সোমবার শরীফ পালন করে আমাদের শিক্ষা দিলেন যে উনার বিদালত (জন্ম) সময়কে উপলক্ষ গ্রহণ করা জায়েজ। তিনি সাপ্তাহিক বার গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তারিখ বা দৈনিক সময় তো নিষেধ করেননি। যেহেতু উনার বিলাদত শরীফের উপলক্ষ গ্রহণ করা জায়েজ। তাই সময়ের অন্য ধাপ গ্রহণ করতে সমস্যা নেই।

 প্রশ্ন-৫

নবীজি উনার বিলাদত (জন্ম) শরীফ উপলক্ষে রোজা রেখেছেন। আপনিও রোজা রাখেন।

 উত্তর:৫

এ বিষয়টি বুঝতে হলে আক্বল খাটাতে হবে। যেমন- বাবার জন্মদিন বাবা যেভাবে পালন করবে, সন্তানও কি বাবার জন্মদিন সেভাবে পালন করে ? সন্তান নিজের জন্মদিন যেভাবে পালন করে, পিতা কি সন্তানের জন্মদিন একইভাবে পালন করে ? নিজ ও অপর কর্তৃক জন্মদিন পালনের পার্থক্যটা বুঝতে হবে। নবীজি নিজের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখেছেন। কিন্তু আমি আপনি উনাকে পেয়ে আনন্দিত হয়েছি, শুকরিয়া করছি, সবাইকে মেহমানদারি করাচ্ছি এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম।

 প্রশ্ন- ৬

১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ মিলাদুন্নবী নয়, সিরাতুন্নবী বলতে হবে।

 উত্তর-৬

মিলাদুন্নবী অর্থ নবীজির বিলাদত বা আগমন। এই বিষয়টির সাথে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ জড়িত। অপরদিকে সিরাত শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ জীবনী। সিরাতের সাথে কোন তারিখ সম্পৃক্ত নয়, বরং সারা বছর ধরেই করা যায়। ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ তারিখে তাই মিলাদুন্নবী পালন করতে হবে, সিরাতুন্নবী নয়। যারা ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে সিরাতুন্নবী পালন করতে বলে, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি তৈরী করার জন্য তা করে।

 প্রশ্ন- ৭

মিলাদুন্নবী পালন শিয়াদের থেকে আসছে।

 উত্তর-৭

ভুল কথা। শিয়ারা নবীজির বিলাদত তারিখ ১৭ রবিউল আউয়াল মনে করে। শিয়াদের অনুসরণে সুন্নীরা যদি মিলাদুন্নবী পালন করতো, তবে ১৭ রবিউল আউয়াল পালন করতো, ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ নয়।

 প্রশ্ন-৮

মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনেকে ঢোল-তবলা, ডেক সেট বাজিয়ে হারাম কাজ করে। তাই মিলাদুন্নবী পালন করা যাবে না।

 উত্তর-৮

মাথা ব্যথার সমাধান কখন মাথা কাটা নয়। মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কেউ যদি হারাম কাজ করে, তবে তার হারাম কাজ বন্ধ করে দিন। মিলাদুন্নবী পালনে নিষেধ করবেন কেন ?

Comments