নতুন শিক্ষাক্রম, এনজিও’র মাঠ কর্মী পয়দা করার মেশিন

নতুন শিক্ষাক্রম, এনজিও’র মাঠ কর্মী পয়দা করার মেশিন

 নতুন শিক্ষাক্রম, এনজিও’র মাঠ কর্মী পয়দা করার মেশিন

-মুহম্মদ এস হাবীব

 জাতিসংঘ এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নামক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এই পরিকল্পনাগুলো তারা বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়ন চায়। কিন্তু কেউ তো নিজ থেকে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে না, মাঠকর্মী তৈরী করে তাদের দিয়ে ফিল্ডে ট্রেনিং দিয়ে আসতে হবে। এজন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন এনজিওকে ফান্ডিং করে এবং সে সব এনজিও কর্মীদের দিয়ে ফিল্ডে গিয়ে জাতিসংঘের পরিকল্পনাগুলো মাঠ পর্যায়ে মানুষকে ট্রেনিং দিয়ে আসে।

 বিদেশী ফান্ডিং এ পরিচালিত এ সমস্ত এনজিওগুলোকে আগে এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে তুলনা করা হতো। কারণ ব্রিটিশরা আসার আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চলে আসে এবং তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এভাবে ১০০ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চলে তাদের আর্থিক ও শাসন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পর ব্রিটিশ সরকারের হাতে সেই ক্ষমতা তুলে দেয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমাদের এ অঞ্চলকে আরো ১০০ বছর শাসন করে। বর্তমানে এনজিওগুলো ঠিক সেইরকমই। তারা জাতিসংঘ নামক ইহুদী সংঘের বেধে দেয়া নিয়মগুলো এ অঞ্চলে জারি করার জন্য ফিল্ড পর্যায়ে কাজ করে, যা সাম্রাজ্যবাদীদের ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়।

 বর্তমান পাঠ্যবইগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে, এ পাঠ্যক্রম অনেকটা এনজিও কর্মী ট্রেনিং এর সাথে যায়, কারণ এনজিও কর্মী হতে তেমন বিজ্ঞান শেখা লাগে না, কোন বিষয়ে বেশি এক্সপার্ট হওয়া লাগে না, সামাজিক কিছু বিষয় জানা লাগে, তাৎক্ষণিক কিছু জ্ঞান লাগে। এছাড়া এনজিও কর্মী হতে যে সব সফট স্কিল লাগে, যেমন- সুন্দর উপস্থাপনা, দলগত কাজ, খুটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা বা জরিপ, তথ্য সাজানো ইত্যাদি; বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এগুলোকেই বেশি জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানের জন্য যে সব সফট স্কিল লাগে (যেমন: গণিত অনুশীলন) সেগুলো কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ শিক্ষা পদ্ধতি অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি, কেউ বলছে এটা কারিগরি ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি। কিন্তু উপর দিয়ে যাই বলা হোক, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক বা কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতির ধারে কাছেও এটা নয়। এটা হচ্ছে এনজিও’র মাঠ কর্মী বানানোর ডিপ্লোমা কোর্স।

 বর্তমান কারিকুলাম নিয়ে সমালোচনার পর কারিকুলাম তৈরীর অন্যতম কারিগর এনসিটিবি কর্মকর্তা প্রফেসর মশিউজ্জামান বিভিন্ন মিডিয়ায় এসে সাক্ষাৎকার দিয়েছে। সাক্ষাৎকার দেখে প্রফেসর মশিউজ্জামান সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হই। একটি ওয়েবসাইটে তার প্রোফাইল জানতে গিয়ে দেখলাম, তিনি বাংলা বিভাগ থেকে লেখাপড়া করে কলেজের লেকচারার হিসেবে কাজ করেছেন, এজন্য নামের সাথে প্রফেসর লাগিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও প্রজেক্টের হয়ে কাজ করছেন, যেমন- UNODC, MGIEP, UNESCO, ASRHR, PVE, UNFPA। বয়ঃসন্ধি শিক্ষা, জেন্ডার ইকুয়েলিটি ইত্যাদি নিয়ে তার কাজ। ভারতের এনজিও আফলতুনের সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ড পরিচালিত একটি প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টরও তিনি।

 আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের মতাদর্শের এনজিওগুলো ফান্ড পাচ্ছে বেশি। যার জন্য হঠাৎ করে বাংলাদেশে প্রজনন শিক্ষা, ট্রান্সজেন্ডার, পরিবেশবাদ, কুকুরপ্রেমী ইত্যাদির দৌরাত্ব হঠাৎ বেড়ে গেছে। এরকম প্রতিটি প্রজেক্টের পেছনে কাজ করছে কোন না কোন বিদেশী ফান্ডিং পরিচালিত এনজিও। বিদেশীরা ফান্ড দিলেও তাদের প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তো মাঠ কর্মী প্রয়োজন। তাই তাদের প্রয়োজন মাফিক কর্মী বানানোর জন্য বাংলাদেশে পাঠ্যক্রমে তাদের মতাদর্শ ঢুকানো হয়েছে এবং তাদের প্রয়োজন মাফিক মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রবেশ করিয়ে দক্ষতাও ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে।

 এজন্য একজন গার্ডিয়ান বা শিক্ষক যখন ভাবছেন, এই কারিকুলাম পাঠে শিক্ষার্থীরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে কি না, তখন তারা হিসেব মেলাতে পারছেন না। কারণ এই কারিকুলাম ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কোন এক্সপার্ট বানানোর জন্য তৈরী করা হয়নি। বরং সামান্য কিছু জ্ঞান ও কিছু সফট স্কিল দিয়ে ছাত্রদের এনজিও’র মাঠ কর্মী বানানোর প্রয়াস নিয়েই তৈরী করা হয়েছে, এর বেশি কিছু না।

Comments