প্রসঙ্গ: শিক্ষক ছাত্রীর বাবার মত, অতঃপর শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন, সমাধান জেন্ডার সেপারেশন

প্রসঙ্গ: শিক্ষক ছাত্রীর বাবার মত, অতঃপর শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন, সমাধান জেন্ডার সেপারেশন

 প্রসঙ্গ: শিক্ষক ছাত্রীর বাবার মত, অতঃপর শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়ন, সমাধান জেন্ডার সেপারেশন

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পরীক্ষার সময় পর্দানশীন ছাত্রীদের জোর করে মুখমণ্ডল, কান, গলা উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ দাবী করছে, “শিক্ষক হচ্ছে ছাত্রীদের পিতার সমতূল্য, সুতরাং শিক্ষকের সামনে ছাত্রীর মুখ খোলা রাখতে সমস্যা কোথায়?”

 যারা এ ধরনের চিন্তা লালন করে, তারা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নির্যাতন ও নিপীড়নের খবরাবর নিয়মিত রাখতো, তবে হয়ত এমন চিন্তা করতে পারতো না। আসুন গত কয়েক মাসের কিছু সংবাদ দেখি-

খবর-১ :

“নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম। বিভাগ অফিসে পরামর্শের জন্য গেলে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে ডেকে নেয়। একপর্যায়ে আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রী। গত ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে ক্লাসে ছাত্রীদের দৈহিক সৌন্দর্য, দৈহিক গঠন, ছাত্রীদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বিষয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করলে তার সমর্থক শিক্ষকসহ নম্বর কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়াও আপত্তিকর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ” (তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ২৪ ডট কম, নভেম্বর ২৯, ২০২৩)

এদিকে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করে ঢাবি প্রশাসন। (তথ্যসূত্র: সময় নিউজ, ৩ জানুয়ারি ২০২৪)

 খবর-২:

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক সাবেক ছাত্রীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষকের নাম অমিয় সৃজন সাম্য। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে গত ৮ অক্টোবর বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন।” (তথ্যসূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩)

 খরব-৩:

“নিজ বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীর প্রমোশন তিন বছরের জন্য স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (তথ্যসূত্র: ডেইলি ক্যাম্পাস, ৩১ অক্টোবর ২০২৩)

 গত কয়েক মাসে সংবাদ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা মাত্র ৩টি আসলেও, বাস্তবে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ সবাই অভিযোগ করতে চায় না। সম্প্রতি একটি জরিপে এমন তথ্য দেখা গেছে, “যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছাত্রীই অভিযোগ করেন না। ” (তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩)

 তার মানে দেখা যাচ্ছে, “শিক্ষক পিতার সমতুল্য, তাই শিক্ষকের সামনে পর্দা করার দরকার নেই”- এ কথাটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ কতিপয় শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীরা ঠিকই নির্যাতন বা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সুতরাং পুরুষ শিক্ষকের সামনে পর্দা করার গুরুত্ব কিছুতেই হ্রাস করার সুযোগ নেই।

 আমি জানি, যতই পর্দার গুরুত্ব থাকুক, তারপরও কিছু কিছু লোক বলবে “বোরকা পরলে অমুক সমস্যা, নেকাব পরলে তমুক সমস্যা। আসলে বোরকা নেকাবে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে কো-এডুকেশন সিস্টেমে, পুরুষ-মহিলা একত্রীকরণে। পুরুষ-মহিলা আলাদা থাকলে তো মহিলাদের বোরকা পরার দরকার নাই। সে বোরকা-নেকাব ছাড়াই থাকতে পারবে তখন। কিন্তু যে গোষ্ঠীটি পুরুষ-মহিলা একত্রিত করেছে, তাদেরই এখন বোরকা-নেকাবে চুলকানি দেখা দিয়েছে।

 আসলে পুরুষ-মহিলা একত্র হলেই সব সমস্যার উদ্রেগ। কিন্তু পুরুষ-মহিলা যদি আলাদা থাকে, জেন্ডার সেপারেশন হয়, তবে সব সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যায়। যেমন- মহিলাদের জন্য পৃথক শিক্ষাকেন্দ্র, পৃথক বাস, পৃথক ট্রেনের বগি, পৃথক হাসপাতাল, পৃথক শপিং কমপ্লেক্স, পৃথক কাঁচাবাজার ইত্যাদি। এসব স্থানে সবাই থাকবে মহিলা, পুরুষ প্রবেশ হবে নিষিদ্ধ। আমি নিশ্চিত এমন হলে মহিলাদের জন্য অনেক ভালো হবে। এসব স্থানে মহিলাদের আলাদা বোরকা, হিজাব বা নেকাব পরারও দরকার নেই, মহিলারা সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

 বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষা সেক্টরে প্রচুর মহিলা শিক্ষিকা ও স্টাফ রয়েছে। সুতরাং শিক্ষা সেক্টরে পুরুষ মহিলা আলাদা করা কোন ব্যাপার নয়। বাংলাদেশে গার্লস স্কুল আছে, গার্লস কলেজ আছে, কিন্তু গার্লস ইউনিভার্সিটি নেই বললেই চলে। আবার গালর্স স্কুল বা কলেজ আছে, কিন্তু সেখানে শিক্ষক ও স্টাফ পুরুষ। এটা বড় সমস্যা। গার্লস স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটিতে শিক্ষক-স্টাফও মহিলা হতে হবে। পুরুষ প্রবেশ করানো যাবে না।

 যদি মহিলা ইউনির্ভাসিটি চালু করা যায়, সেখানে মহিলাদের কর্মক্ষেত্র উপযোগী স্পেশালাইড সাবজেক্ট থাকতে পারে, যেখান থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে বের হলে মহিলা বিষয়ক কর্মক্ষেত্রে খুব সহজেই মহিলারা প্রবেশ করতে পারবে, কেউ বেকার থাকবে না।

 এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মহিলা। মহিলা বিষয়ক অনেক কর্মক্ষেত্র আছে, যেখানে মহিলারাই ভালো পারফর্ম করতে পারে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলা এক করে বাস্তবে মহিলাদের পুরুষের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। মহিলাদের স্থান পুরুষ দিয়ে দখল করানো হচ্ছে। মহিলাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রাপ্য অধিকার থেকে। কর্মক্ষেত্রেও যদি জেন্ডার সেপারেশন বা পুরুষ-মহিলা আলাদা হতো, তবে মহিলাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক বেশি সহজ ও সুবিধাজনক হতো। মহিলাদের প্রকৃত উন্নয়নের জন্যই আসলে জেন্ডার সেপারেশনের বিকল্প নেই।

Comments