প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ও প্রক্সি সমস্যা, সমাধান কি?

Comments · 1411 Views

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ও প্রক্সি সমস্যা, সমাধান কি?

 প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস ও প্রক্সি সমস্যা, সমাধান কি?

-ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

 সম্প্রতি শেষ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৩। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, এ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, ডিভাইস ব্যবহার ও প্রক্সি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো প্রচুর। যার কারণে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

 প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষার হলে ডিভাইস ব্যবহার বলতে কি বুঝি?

পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে ডিভাইস বলতে বলতে বোঝায়, এক ধরনের ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ব্যবহার। যা কানের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি দিয়ে কথা বলা ও শোনা যায়। এ ডিভাইসটি ব্লু-টুথের মাধ্যমে কোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকে। এই সব ডিভাইসের সাহায্যে বাইরে থেকে কেউ পরীক্ষার্থীকে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করতে পারে।

 পরীক্ষার হলে প্রক্সি বলতে কি বুঝি?

পরীক্ষার হলে প্রক্সি বলতে বোঝায়, চেহারা বা মুখচ্ছবির মিল থাকায় একজনের বদলে অন্যজন পরীক্ষা দেয়া।

 পরীক্ষার হলে ডিভাইস সমস্যার সমাধান কোথায়?

ডিভাইস সমস্যার সমাধান হচ্ছে নেটওয়ার্ক জ্যামার প্রযুক্তি ব্যবহার করা। নেটওয়ার্ক জ্যামার হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র, যা ব্যবহার করলে কোন ধরনের নেটওয়ার্ক সেখানে কাজ করবে না। ফলে কোন ডিভাইস তার শরীরে লুকানো থাকলেও সেটা ব্যবহার করতে পারবে না। দেখা যায়, ডিভাইসের কথা বলে, অনেক সময় বোরকা পরা ছাত্রীদের নেকাব খুলতে, কান-ঘাড় উন্মুক্ত রাখতে বাধ্য করে শিক্ষকরা। এটা মোটেও ঠিক না। এতে একদিকে ঐ শিক্ষার্থীর ধর্মীয় অধিকার যেমন লঙ্ঘিত হয়, তেমনি তার প্রাইভেসীর অধিকার লঙ্ঘিত হয়। একজন মানুষ তার নিজের চেহারা কাউকে দেখাবে কি, দেখাবে না, এটা সম্পূর্ণ তার প্রাইভেসীর অধিকার। সে অন্যকে নিজের ঘাড়, মাথা, চেহারা, গান, গলা দেখাতে মোটেও বাধ্য না। কিন্তু এখন দেখা যায়, কোন ছাত্রী বোরকা-নেকাব পরলে তার সাথে পশুর মত ব্যবহার করা হচ্ছে, জোর করে তার নেকাব খুলে পুরো পরীক্ষার সময় শত শত মানুষের সামনে কান, গলা, ঘাড় উন্মুক্ত রাখতে হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং ভুল পদ্ধতি। একজন শিক্ষার্থী শুধু নেকাবেই ডিভাইস লুকাতে পারে না, বরং শরীরের অনেক অংশেই ডিভাইস লুকাতে পারে। কিছুদিন আগে একজন ছাত্র গ্রেফতার হয়েছিলো যার আন্ডারপ্যান্টের ভেতর ডিভাইস পাওয়া যায়। সে শিক্ষকের অগোচরে তা বের করে ব্যবহার করছিলো। বিষয়টি এমন হয়েছে যে, ডিভাইসমুক্ত পরীক্ষার হল তৈরী করতে হলে সবার সব পোশাক খুলে বিবস্ত্র করে রাখতে হবে, নয়ত পরীক্ষার্থী প্রতি একজন করে গার্ড প্রয়োজন হবে, যা কখনই সম্ভব না। এজন্য পোশাকের সাথে ডিভাইসের কোন সম্পর্ক নাই। ডিভাইস ব্যবহার রোধ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পরীক্ষার হলে নেটওয়ার্ক জ্যামার প্রযুক্তি ব্যবহার করা, যার দরুণ শিক্ষার্থীরা যতই ডিভাইস নিয়ে আসুক, সেটার ব্যবহার করতে পারবে না।

 একই সাথে বলতে হয়, এ ধরনের ডিভাইসগুলো এক ধরনের স্পাই ডিভাইস, যা গোয়েন্দা কাজে ব্যবহার হয়। এসব ডিভাইস দেশে উন্মুক্ত স্থানে উন্মুক্তভাবে বিক্রি হয়, যা মোটেও ভালো কিছু নয়। কারণ এসব ডিভাইস ব্যবহার করে অনেক ধরনের অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত হয়। সরকারের উচিত এসব ডিভাইস বিক্রির উপর নজরদারি করা এবং যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ করা। ডিভাইস বিক্রির উপর নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা দিলে ডিভাইসের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

 এরপর আসি, পরীক্ষায় প্রক্সি’র সমাধান কি?

পরীক্ষা বা ক্লাসরুম, অফিস-আদালতে সর্বত্র প্রক্সির একমাত্র সমাধান হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্তকরণ। কারণ দুইজন মানুষের চেহারা, মুখচ্ছবি একরকম হতেই পারে কিংবা মিল থাকতে পারে। ছবি দেখে যা যাচাই করা কখনই সম্ভব না। কিন্তু দুইজন মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট কখনো এক হয় না। এমনকি দুইজন জমজের ফিঙ্গারপ্রিন্টও কখনো এক হয় না। বর্তমানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন খুব সহজলভ্য ও সুলভ হয়েছে। অনেক অফিস, ক্লাসে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে পরীক্ষার হলে কেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে নির্ভুল পদ্ধতিতে পরিচয় যাচাই না করে, ত্রুটিপূর্ণ ছবি-চেহারা দেখে পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে? কেন দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে? পরীক্ষার হলসহ সর্বত্র প্রক্সি বন্ধে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের কোন বিকল্প নাই।

 অর্থাৎ নিয়োগ পরীক্ষাসহ যে কোন পরীক্ষা দুর্নীতিমুক্ত রাখতে নেটওয়ার্ক জ্যামার ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার এখন সময়ের দাবী।

 

Comments