সব যায়গায় নারী-পুরুষ এক সাথে, কিন্তু খেলায় নেই কেনো?

সব যায়গায় নারী-পুরুষ এক সাথে, কিন্তু খেলায় নেই কেনো?

 সব যায়গায় নারী-পুরুষ এক সাথে, কিন্তু খেলায় নেই কেনো?

 আমাদের দেশে যারা নারী উন্নয়নের কথা বলে, তারা একটা কথা সব সময় বলে, ‘নারী-পুরুষ এক সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে’। কিন্তু এ বিষয়টি সব সেক্টরে দেখা গেলেও কোন খেলাধূলায় দেখা যায় না। নারী ক্রিকেট, নারী ফুটবল, নারী হকি সবস্থানে নারীরা একা খেলে, কিন্তু নারী-পুরুষ একত্রে খেলে না। টেনিস বা ব্যাটমিনটনে মিক্সড-ডাবল বলে একটা বিষয় আছে, যেখানে একপাশে নারী-পুরুষ একত্রে টিম হয়ে অপরপাশে আরেক নারী-পুরুষ টিমের সাথে খেলে। অর্থাৎ দুইপাশে নারী-পুরুষে ব্যালেন্স থাকে।

 নারী-পুরুষ যে প্রতিযোগী হয়ে খেলা সম্ভব না, এ সম্পর্কে নারী টেনিস খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামের একটা বক্তব্য আছে। এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছিলো,“নারীদের টেনিস ও পুরুষদের টেনিস প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের ক্রীড়া। আমাকে যদি এন্ডি মারে’র (পুরুষ টেনিস খেলোয়ার) বিপক্ষে খেলতে দেয়া হয়তাহলে আমি ৫-১০ মিনিটের ভেতরেই ৬-০ সেটে হেরে যাবো। পুরুষেরা নারীর তুলনায় অনেক ক্ষিপ্রতারা অনেক জোরে সার্ভ করেতারা অনেক জোরে বলে আঘাত করে। আর আমি কেবলমাত্র নারীদের টেনিস খেলতেই ভালোবাসিকারণ আমি সবার সামনে বিব্রত হতে চাইনা!”

 

অর্থাৎ সব সেক্টরে নারীকে পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হলেও খেলাধূলায় নারীকে সরাসরি পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হয় না। কারণ শারীরিক সক্ষমতায় নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশ পিছিয়ে থাকে, যা খেলাধূলার মধ্যে সরাসরি দৃশ্যমান হয়।

 

আসলে খেলাধূলার মত সব সেক্টরেই নারী-পুরুষের মধ্যে পৃথকীকরণ দরকার। কারণ যখনই নারী-পুরুষ একত্রীকরণ হয়, তখনই নারী পুরুষের থেকে পিছিয়ে পড়ে।

 

হয়ত বলতে পারেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তো মেয়েরা অনেক সময় ছেলেদের থেকে ভালো ফলাফল করে।

 

হতে পারে। কিন্তু সেটা থিউরীটিকাল। যখন প্রফেশনাল বা প্র্যাকটিকাল জীবন আসে, তখন ঠিকই সম্মিলিত হিসেব করলে নারী তার শারীরিক সক্ষমতার জন্য পিছিয়ে যায়।

 

এজন্য আসলে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পৃথক সেক্টর দরকার। যেখানে নারী-নারী থাকবে, পুরুষ-পুরুষ থাকবে। নারী-পুরুষের একত্রিত সেক্টর দরকার নাই। প্রফেশনাল সেক্টরে নারী-পুরুষ একত্রিত হলেই অটোমেটিক পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্ব লাভ করবে।

 

এখানে একটি বিষয় বুজতে হবে, জনসংখ্যার দিক থেকে পুরুষ ও মহিলার জনসংখ্যা প্রায় সমান। অর্থাৎ পুরুষের জন্য যে পরিমান কর্মক্ষেত্র দরকার, ঠিক তেমনি মহিলাদের জন্য সমপরিমাণ কর্মক্ষেত্র দরকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যখন আপনি পুরুষ-মহিলা একত্রিত করে দিচ্ছেন, তখন নিচের দিকে পুরুষ-মহিলা সমান শুরু করলেও, একটা পর্যায়ে গিয়ে মহিলার সংখ্যা কমছে, পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে। অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে উপরের পদগুলোতে পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু নারীর সংখ্যা কমছে। অপরদিকে নিচের দিকে নারীর সংখ্যা বেশি, কিন্তু পুরুষের সংখ্যা কম।

 

কিন্তু নারী-পুরুষ যদি আলাদা সেক্টর হতো, তবে নারী সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে উপরের পদগুলো নারীদেরই দখলে থাকতো। এতে পেশাগত জীবনে মহিলাদের সম্মানও বাড়তো, বেতনও বাড়তো। কিন্তু এখন নারীরা বেশি শ্রমিক হচ্ছে, ফলে তাদের দিয়ে কমমূল্যের শ্রম করানো যাচ্ছে। নারী-পুরুষ একত্রিতকরণের মূলে আসলে নারীকে কমমজুরী দিয়ে শ্রম করিয়ে নেয়া।

 

এজন্য শিক্ষা সেক্টর, অফিস, আদালত, কারখানা, পরিবহন সেক্টর, বাজার-দোকান, মার্কেট, হাসপাতাল সবস্থানে পুরুষ-মহিলা পৃথক করে দেয়া উচিত, এবং নারী উন্নয়নের জন্যই তা করা উচিত। এতে বাড়বে নারীর সম্মান, বাড়বে তার মজুরী।

Comments