প্রসঙ্গ: ট্রান্সজেন্ডার, যা জানা প্রয়োজন
-শেখ মুহম্মদ রাফসানযানি
সাম্প্রাতিক সময়ে হোচিমিন নামক এক ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতে না পারার ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। এর আগে স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি পাঠ্য করেছিলো এনসিটিবি, যদিও পরে সমালোচনার কারণে বাদ দেয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার কোটা চালু করা কিংবা মিডিয়ায় ট্রান্সজেন্ডার সংবাদ পাঠিকা অন্তর্ভূক্তি করার ঘটনায় ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ইস্যুটি বার বার সামনে আসছে। যেহেতু এটা একটি নতুন ধরনের ফিতনা, তাই অধিকাংশ মানুষ তা সম্পর্কে বুঝতে পারে না। তবে আমাদের নিজেদের এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বিপথ থেকে রক্ষা করার জন্য ‘ট্রান্সজেন্ডার’ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের ভালোভাবে জানা দরকার।
প্রথমেই বলে রাখি, অনেকে ট্রান্সজেন্ডার মানে ‘হিজরা’ মনে করেন। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার আর হিজরা এক না। হিজরা হচ্ছে এক ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধী। অপরদিকে ট্রান্সজেন্ডার কোন শারীরিক সমস্যা না, বরং এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা বা কুরুচি। একজন পুরুষ সম্পূর্ণ পুরুষ শরীর থাকার পরও যদি মনে মনে নিজেকে নারী মনে করে, অথবা একজন নারী পরিপূর্ণ নারী শরীর থাকার পরও যদি মনে মনে নিজেকে পুরুষ মনে করে, তবে তাদের দাবী হচ্ছে- ঐ ব্যক্তি একজন ট্রান্সজেন্ডার। বাস্তবে ট্রান্সজেন্ডার বলে আসলে কিছু নেই, বাস্তবে এরা নকল পুরুষ (FAKE MAN) বা নকল মহিলা (FAKE WOMAN )। এ ধরনের মানসিক অসুস্থতা বা কুরুচির চিকিৎসা আছে। চিকিৎসায় এ ধরনের মানসিক রোগ থেকে সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সম্প্রতি একটি গোষ্ঠী বের হয়েছে, তারা এ ধরনের মানসিক অসুস্থতা বা কুরুচিকে স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃতি চায়। সমাজে পাকাপোক্ত অবস্থান চায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক হিজরাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার নামক মানসিক অসুস্থদের স্বীকৃতি দেয়নি।
মূলতঃ এসব মানসিক অসুস্থ লোকের দাবী, তারা শরীরে যাই হোক, সে মনে মনে নিজেকে যাই মনে করবে, তাকে সে হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের মানসিক অসুস্থ লোকের অভাব নেই। যেমন, এ ধরনের মানসিক অসুস্থ শ্রেণীর এক দলের দাবী হচ্ছে, শরীরে মানুষ হলেও তারা মনে মনে যদি নিজেদের কুকুর মনে করে, তাবে তারা কুকুর (Canine Beings )। সুতরাং তাদের কুকুর হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে । এরা নিজেদের ট্রান্সস্পেসিস দাবী করে। কুকুর ছাড়াও কেউ নিজেকে ড্রাগন মনে করে, কেই হরিণ, কেউ সাপ। এদের মধ্যে অনেকে আবার প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে শরীরের গঠন পরিবর্তন করে ঐ পশুর আকৃতিও ধারণ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রান্সজেন্ডার ফেতনা বড় হওয়ার একটা বড় কারণ, এর মাধ্যমে একদল পুরুষ মহিলাদের মত সাজগোজ করে মহিলাদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। যেমন, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন মারফত জানা যায়, জারা রহমান নামক একজন ট্রান্স মহিলা (আসলে পুরুষ) রাজধানীর নীলক্ষেত্রে কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে সিট পেয়েছে। আমেরিকা-ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিশ্বে এসব ট্রান্সজেন্ডার নামক নকল পুরুষ-মহিলার উৎপাত অনেক পুরাতন। দেখা যায়, এদের অনেকে নারীবেশ ধারণ করে নারীদের মধ্যে ঢুকে পড়ে প্রকৃত নারীদের উপর নিপীড়ন চালায়, অনৈতিক কাজ করে। এদের মধ্যে অনেকে মেয়ে শিশুদের উপর নির্যাতন চালাতে গিয়ে গ্রেফতারের উদাহরণও আছে। ইউরোপ-আমেরিকার সংবাদপত্রে এমন প্রচুর সংবাদ আছে।
আসলে মানুষের জেন্ডার একটি বড় পরিচয়। যা দিয়ে মানুষের অনেক স্বভাব-চরিত্রের সীমা নির্ধারণ সম্ভব। কিন্তু একজন মানুষ যখন নিজের জেন্ডার পরিচয়কে গোপন করতে চায় কিংবা ধোকা দিতে চায়, তখন তার পেছনে কোন অপরাধমূলক চিন্তা থাকা স্বাভাবিক। হতে পারে সে কোন আইনবহির্ভূত কাজ করতে চায়, যার কারণে সে নিজের জেন্ডার পরিচয় নিয়ে সবাইকে ধোকা দিতে আগ্রহী।
গত ২১ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এক বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, কোন ট্রান্সজেন্ডার মহিলা ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কারণ হিসেবে তারা বলে, ট্রান্সজেন্ডাররা ক্রিকেটে ঢুকলে মহিলা ক্রিকেটের মর্যাদা, নিরাপত্তা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
কথা হচ্ছে, মহিলা ক্রিকেটে ট্র্যান্সজেন্ডার ঢুকলে যদি মহিলা ক্রিকেটের মর্যাদা, নিরাপত্তা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে অন্য সেক্টরে ট্রান্সজেন্ডার ঢুকলে কি নারীদের এ বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে না ? বিষয়টি আসলেই ভাববার বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে মহিলা হোস্টেলসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যে ট্রান্সজেন্ডার নামক মহিলাবেশী পুরুষ ঢুকছে এতে অন্য মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিককালে সমকামীরা আন্দোলন করছে, যার নাম তারা দিয়েছে LGBTQ+ আন্দোলন। এখানে T অক্ষর দিয়ে বুঝানো হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার। অর্থাৎ ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু বৃদ্ধির পেছনে দেশে সমকামীতা বিস্তার একটি বড় উদ্দেশ্য। নাউযুবিল্লাহ। উল্লেখ্য মহান আল্লাহ পাক হযরত লুত আলাইহিস সালাম উনার কওমকে ধ্বংস করেছিলেন সমকামীতা নামক এ জঘন্য অপকর্মটি করার জন্য। বাংলাদেশের আইনেও দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামীতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এরপরও সমাজে পিছিয়ে থাকা শ্রেণীর দোহাই দিয়ে সর্বসেক্টরে এ ট্রান্সজেন্ডার ঢোকানো হচ্ছে, যা দেশের সর্বত্র নীতি নৈতিকতা ধ্বংস করে দেশে কওমে লুত আলাইহিস সালামের মত গজব আসার জন্য যথেষ্ট। বিষয়টি কতটুকু ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌছেছে যে, পাঠ্যবইয়েও তা ঢুকানো হয়েছিলো। নাউযুবিল্লাহ।
তাই আসুন, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের নীতি নৈতিকতা সমুন্নত রাখার জন্য, খোদায়ী গজব থেকে বাচতে সমাজকে এসব বিকৃত রূচির লোক থেকে দূরে রাখার জন্য যচেষ্ট হই।