প্যারেন্টিং : বাচ্চাকে অভাব শেখাবেন নাকি প্রাচুর্য?

প্যারেন্টিং : বাচ্চাকে অভাব শেখাবেন নাকি প্রাচুর্য?

 প্যারেন্টিং : বাচ্চাকে অভাব শেখাবেন নাকি প্রাচুর্য?

-মুহম্মদ মহিউদ্দিন রাহাত

 সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাচ্চাকে অভাব শেখাবো নাকি প্রাচুর্য শেখাবো’ বিষয়টি নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। কেউ বলছেন, বাচ্চাকে অভাব শেখানো উচিত, নয়ত বাচ্চা বেশি পেয়ে বখে যাবে। আবার কেউ বলছেন, বাচ্চাকে প্রার্চুর্য শেখানো উচিত। নয়ত সে সংকীর্ণমনা হয়ে যেতে পারে।

 আসলে কোন বাচ্চাকে কৃত্তিম অভাব শেখানো কিংবা কৃত্তিম প্রাচুর্য শেখানো কোনটাই ঠিক হবে না। বরং একটি বাচ্চাকে সর্বদা শেখানো উচিত, “কোন কিছুই চাইলেই পাওয়া যায় না, বরং অর্জন করে নিতে হয়। ” মানে, সে হয়ত কোন কিছু চাইছে, আপনার সামর্থ আছে তাকে তা দেয়ার। কিন্তু তাকে যদি আপনি একটি শর্ত জুড়ে দেন যে, “অমুক ভালো কাজটা করলে তুমি জিনিসটা পাবে। ” তখন সে ঐ ভালো কাজটা করার বিনিময়ে জিনিসটা লাভ করার চেষ্টা করবে। এতে তার ৩টি উপকার হবে-

 ১. দুনিয়াতে কোন কিছু ফ্রি নয়, সব কিছুই অর্জন করে নিতে হয়, এ বোধ তার মধ্যে জন্ম নিবে।

২. কোন কিছু অর্জন করে নিলে জিনিসটির প্রতি তার ভালোবাসা জন্মাবে, অপচয় বা নষ্ট করবে না।

৩. অবাস্তব চিন্তা বাদ দিয়ে বাস্তববাদী হবে।

 উদাহরণস্বরূপ-

আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলন আছে, “সন্তান বাবার টাকার মূল্য দেয় না, ইচ্ছামত উড়ায়। কিন্তু নিজে যখন টাকা কামাই করে, তখন সে টাকার মূল্য দেয়। ” এর মূল কারণ, সে নিজে যখন টাকা কামাই করে, তখন সেটা কষ্ট করে অর্জন করতে হয়। এই যে কষ্ট করে অর্জন করার বিষয়টি, ছোট বেলা থেকেই আপনার সন্তানকে শিক্ষা দিলে সে দ্রুতই বাস্তব জীবনে পদার্পন করবে। বড় হয়ে চাকুরী বা ঘর সংসার করে যে দায়িত্ববোধ জন্ম নেয়, তা ছোটবেলা থেকেই তা মধ্যে তা জন্ম নিবে। সব কিছুর প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আসবে।

 বাচ্চাকে মানি ম্যানেজমেন্ট শেখান:

আমাদের প্রজন্মের অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার জন্য অঢেল সম্পত্তি রেখে যাওয়ার চিন্তা করেন। ভাবেন, অধিক সম্পত্তি হয়ত সন্তানকে ভবিষ্যত নিরাপত্তা দিবে। কিন্তু আসলেই কি অঢেল সম্পত্তি সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে পারে ? এমনও হতে পারে, রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার জন্য কাল হচ্ছে। বাবার সম্পত্তি থাকায় সে কোন কাজ করছে না, আর বসে খেলে তো রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায়। আবার হয়ত, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি খারাপ কাজে ব্যয় করছে, নিজের চরিত্র নষ্ট করছে। অর্থাৎ ক্ষেত্র বিশেষে বাবার রেখে যাওয়ার সম্পত্তি সন্তানের জীবনকে ভালো করার পরিবর্তে নষ্ট করে তুলছে। ইহকাল-পরকাল ধ্বংস করছে। তারমানে দাড়াচ্ছে, সন্তানের জন্য সম্পত্তি রেখে যাওয়া সবকিছু নয়।

 এজন্য আসলে সন্তানের জন্য সম্পত্তি রেখে যাওয়ার থেকে বেশি প্রয়োজন, সে কিভাবে আয় করবে আর কিভাবে ব্যয় করবে তা শিখিয়ে যাওয়া। যাকে বলা হচ্ছে মানি ম্যানেজমেন্ট। সে যদি আয় করার পদ্ধতি শিখে যায়, তবে তার অনেক সম্পত্তি না হলেও চলবে। আয়ের পদ্ধতি শেখা থাকায় প্রয়োজন অনুসারে সময়মত সে ইনকাম করে নিতে পারবে। পাশাপাশি সে অসৎ পথে আয় করার চেষ্টা করবে না। অন্যদিকে সন্তানকে আয়ের পাশাপাশি শেখাতে হবে, কিভাবে ব্যয় করতে হয়। এতে সন্তান অপচয় করবে না। খারাপ যায়গায় ব্যয় করা বাদ দিবে। আর একটা মানুষ যখন অপচয় না করে, তখন আসলে তার আয়ও খুব বেশি লাগে না। ফলে স্বল্প আয় করেও সে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবে। প্রয়োজন যত কম হবে, সে তত সুখি। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের যোগান দিতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ অনৈতিক আয়ের দিকে ঝুকে যায়, সেটাও তার জীবনে হবে না।

 

মূলতঃ নতুন প্রজন্মকে মানি ম্যানেজমেন্ট বা আয়-ব্যয়ের হিসেব না শেখানোতে আমাদের নিজের জীবনটাও চলে যায়, শুধু আয় আর ব্যয় করতে, আর সন্তানের জন্য সম্পদ জমাতে। কিন্তু জীবনটা শুধু আয়-ব্যয় আর জমানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মহান আল্লাহ পাক আমাদের শুধু আয় আর ব্যয় আর জমানোর জন্য সৃষ্টি করেননি। একজন মানুষ হিসেবে আপনার জীবনে দ্বীন-ইসলাম চর্চার প্রয়োজন। পরকালের জন্য আমল করার প্রয়োজন। আপনি যদি আয়-ব্যয়ের দিকে বেশি ব্যস্ত হয়ে যান, সন্তানের জন্য অঢেল সম্পত্তি রাখার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে যান, তবে পরকালের জন্য আমল করবেন কখন?

 আবার একজন মুসলিম হিসেবে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আপনার দায়িত্ব কর্তব্য আছে। সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা নির্যাতিত। কাফিররা মুসলমানদের শারীরিক নির্যাতন যেমন করছে, তেমনি ঈমানী নির্যাতন করে মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। এ কঠিন সময় উত্তরণ করে কিভাবে পুনরায় মুসলমানদের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনা যায়, সেই জন্যও আপনাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি শুধু নিজের আয়-ব্যয় কিংবা সন্তানের জন্য অঢেল সম্পত্তি রেখে যাওয়ার জন্য সবটুকু সময় শেষ করে ফেলেন, তবে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করবেন কখন ?

 ভুলে গেলে চলবে না, প্রত্যেক মানুষের সময় সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাকে সকলের হক্ব আদায় করতে হবে। আল্লাহ পাক উনার হক যেমন আদায় করতে হবে, মুসলিম উম্মাহের হক আদায় করতে হবে, তেমনি পরিবার-পরিজনের হকও আদায় করতে হবে। কিন্তু সবটাই সম্ভব হবে, যখন সুন্দর পদ্ধতি অনুসরণে আপনি কাজগুলো করতে পারবেন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সেই সহিহ সমঝ দান করুন। আমিন।

Comments