হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ নয়, বরং লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন

হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ নয়, বরং লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন

 

হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ নয়, বরং লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন

-মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

 হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু হিজরা কি নারী-পুরুষ ব্যতিত নতুন কোন লিঙ্গ ?

আসলে হিজরা বলতে বুঝায় এক ধরনের প্রতিবন্ধীকে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী বিদ্যমান। কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী, যাকে আমরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলি (Intellectual disability)। আবার কিছু শিশু জন্ম নেয় শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভিন্ন রকম নিয়ে। যাদেরকে আমরা শারীরীক প্রতিবন্ধী বলি (Physical disability)। যেমন- কারো হয়ত হাত, পা, চোখ, ইত্যাদি নেই বা অপূর্ণাঙ্গ।

ঠিক তেমনি কিছু শিশু জন্ম নেয়, যাদের লিঙ্গ অস্বাভাবিক বা অপূর্ণাঙ্গ। এরা হচ্ছে এক ধরনের লিঙ্গ প্রতিবন্ধী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয়, ডিজঅর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলমেন্ট (ডিএসডি)।

সাধারণত এ ধরনের শিশুর লিঙ্গ ছোট, বড় অথবা অবিন্যস্ত থাকে। অনেক সময় দুই লিঙ্গের সংমিশ্রণও হয়। জন্মের পর পরই এগুলো চিহ্নিত করা যায়। বিষয়টি সন্তানের বাবা-মা বুঝতে পারলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অথবা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে শিশু জন্মের সময় কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ বিষয়টি দেখে এটি চিহ্নিত করতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, তার লিঙ্গ স্বাভাবিক না। বাহ্যিক বিষয়টি দেখার পর চিকিৎসকরা শিশুটির ক্রমোজমাল অ্যানালাইসিস করেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, বাইরের অংশ যেমনই হোক, শিশুটির ক্রোমোজম ছেলের মত নাকি মেয়ের মত। এরপর শিশুটির অস্ত্রোপচার বা অপরেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রয়োজনে শিশুটিকে হরমোন থেরাপিও দেয়া হয়। এর মাধ্যমে শিশুটি ভেতর-বাহিরে একই ধরনের অর্থাৎ নারী অথবা পুরুষ হয়ে বেড়ে উঠবে। বর্তমানে রাজধানীর পিজি হাসপাতালে এই সমস্যার চিকিৎসা দেয়া হয়। এমনকি কোন রোগী যদি দরিদ্র হয়, তবে তাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশে এ ধরনের চিকিৎসার সফলতার উদাহরণও আছে।

 হিজরাকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সমস্যা কোথায় ?

প্রতিটি প্রাণীর স্বাভাবিক দুটি রূপ থাকে। একটি নর, অপরটি নারী। প্রতিটি মানুষের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যেমন তার মানবাধিকার। তেমনি, সে নর অথবা নারী সে স্বীকৃতি পাওয়াও তার মানবাধিকার। কিন্তু একজন মানুষকে যখন নর-নারী ভিন্ন তৃতীয় কোন জিনিস বলে দাবী করা হয়, তখন সে তার মানবাধিকার হারায়। এজন্য হিজরাদের তৃতীয় লিঙ্গ দাবী করা তার মানবাধিকার হরণের নামান্তর।

আবার হিজরা হচ্ছে এক ধরনের অসুস্থতা। একজন মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা না দিয়ে যদি সেই অসুস্থতাকেই স্বাভাবিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটাতো তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারকে হরণ করার সামিল। এতে অসুস্থ ব্যক্তি আর কখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না। বরং তাকে চিরজীবন অসুস্থই থাকতে হবে। একজন শিশু লিঙ্গে অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্ম নিলে, তার ভবিষ্যতে সমাজে চলতে কষ্ট হবে, বিয়ে-শাদী বংশ বিস্তার করতে সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করাই তার জন্য প্রকৃত ইনসাফ। কিন্তু সেটা না করে তাকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তার চিকিৎসার দ্বারই বন্ধ হয়ে যায়।

 

হিজরাদের পূজি করে ভিন্ন রকম ব্যবসা:

বর্তমানে বাংলাদেশে হিজরা গোষ্ঠী রাস্তায় রাস্তায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে, অনেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান করে টাকা নেয়। নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করলে হিজরাদের অবধারিতভাবে চাদা দিতে হয়, নয়ত ঝামেলা করে। এভাবে করে হিজরা কমিউনিটিগুলো প্রচুর টাকা কামাই করে। তবে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও তারা আইনী ঝামেলায় পড়ে না, কারণ তাদের প্রতি অনেকের সমীহ কাজ করে। এ পরিস্থিতিতে অনেক সুযোগ সন্ধানী পুরুষ, বেশ-ভূষা পরিবর্তন করে হিজরা সাজে। যদিও বাস্তবে তারা হিজরা নয়। আবার সমাজে এমন কিছু পুরুষ মানুষ থাকে যারা স্বভাবে একটু মেয়েলী। তবে বাহ্যিক আচরণ যেমন হোক তারা প্রকৃতপক্ষে পুরুষ। বিয়ে-শাদী করে বউ-বাচ্চাও আছে। কিন্তু এই ধরনের পুরুষ পেলেই তাদের প্রতি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর চোখ পড়ে। তারা এদের অপহরণ করে কিংবা ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় অজ্ঞান করে অথবা অর্থের লোভ দেখিয়ে লিঙ্গ কর্তন করে, হরমোন প্রয়োগ করে কৃত্রিম হিজরা বানায়, এরপর তাদের বিভিন্ন হিজরা কমিউনিটিতে সংযুক্ত করে চাঁদাবাজি করায়। বাংলাদেশের লিঙ্গ কর্তন করা সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ, তারপরও বিভিন্ন ক্লিনিকে গোপনে কাজটি চলছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় বহু খবর প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু তা কিছুতেই থামছে না। বাংলাদেশে আমরা রাস্তা-ঘাটে যে হিজরাদের দেখি, বাস্তবে এরা কয়জন প্রাকৃতিক হিজরা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

 হিজরাদের আড়ালে পশ্চিমা সমকামী কালচারের অনুপ্রবেশ

বর্তমানে হিজরা বিষয়টিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমাদের সমকামী কালচারের অনুপ্রবেশ ঘটছে। সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা আসলে বিকৃতমনা বা কুরুচি সম্পন্ন। এরা নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক পছন্দ করে না, বরং পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারীতে আসক্ত। এরা তাই পুরুষ হয়েও নারীর বেশ ধরে পুরুষের সাথে সম্পর্ক করে। আবার কেউ নারী হয়ে পুরুষের বেশ ধরে নারীর সাথে সম্পর্ক করে। দৃশ্যত এদেরকে দেখলে হিজরা মনে হয়, কিন্তু এরা হিজরা নয়, এরা নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী বা নন-বায়নারি দাবী করে। বাস্তবে এরা হলো নকল পুরুষ (Fake Man), নকল মহিলা (Fake Woman)। এদের শারীরিক কোন সমস্যা নেই, এদের মূল সমস্যা রুচিতে। তারা তাদের কুরুচির (perversion) স্বীকৃতি চায়। বর্তমানে পাঠ্যবই, মিডিয়া, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক আলোচনা ছড়ানো হচ্ছে, যার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে কুরুচিসম্পন্ন সমকামীতা বৈধ করা।

 তাহলে কি হিজরাদের সামাজিক অধিকার থাকবে না?

হিজরাদের অবশ্যই সামাজিক অধিকার থাকবে। তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে, কিন্তু সেটা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে নয়, বরং প্রতিবন্ধী হিসেবে। একজন মানুষকে অধিকার দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনের অধিকার দেয়া। হিজরাদের যদি প্রতিবন্ধী হিসেবে গণ্য করা হয়, তখন তাদের চিকিৎসার বিষয়টি সামনে আসবে। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গ বললে তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতার বিষয়টি এড়িয়ে যাবে। এছাড়া প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে সে যদি চিকিৎসায় সুস্থ নাও হয়, তবে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন, ২০০১’ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মত সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ, সুবিধা ও অধিকার পাবে, প্রতিবন্ধীদের মত নিয়মিত ভাতা পাবে। তখন তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।

আসলে লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিজরারা সমাজে অধিকার পাক, সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু প্রতিবন্ধী হিজরাদের পূজি করে চাদাবাজ কিংবা সমকামী গোষ্ঠীগুলো যেন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে, সমাজে কুরুচি ও বিশৃঙ্খলতা অনুপ্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

Comments