পাঠ্যবই : স্বাস্থ্য শিক্ষার নাম দিয়ে ছোট বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে ‘এসো লজ্জা ভাঙ্গি’
-মুহম্মদ গোলাম সামদানি
বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ের ক্লাস ৬ এ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ে বয়ঃসন্ধির শিক্ষার নাম দিয়ে শেখানো হচ্ছে অ্যাডাল্ট শিক্ষা। বয়ঃসন্ধী কালে নারী-পুরুষের দেহের পরিবর্তন, নারী-পুরুষের শরীর থেকে কি নির্গত হয়, কিসের আকার পরিবর্তন হয়, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ, ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ ইত্যাদি শেখানো হচ্ছে।
আসলে ক্লাস ৬-এ একটা বাচ্চার বয়স কত হয়? ১১ থেকে ১৩ বছর। এই বয়সে সব শিশু বয়ঃসন্ধিতেও পৌছায় না। কিন্তু সেই বয়সেই এ ধরনের শিক্ষা বাচ্চার মনে ভয়াবহ কুপ্রভাব ফেলতে পারে। সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, ক্লাসে পাঠ্য এই বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপ ডিসকাশন করতে হয়, গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়, সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর পেতে হয়। কিন্তু এ বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে লজ্জার বাঁধন থাকে, সেটা উঠে যায়। বিশেষ করে, এই শিক্ষা নিয়ে ক্লাস রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা যখন গ্রুপ ডিসকাশন করবে, তখন তারা যে অনৈতিক কোন কথা বা কাজ করে বসবে না তার নিশ্চয়তা কি? তাছাড়া বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব পড়ানোর নাম করে শিক্ষকরা যে শিক্ষার্থী থেকে কোন অনৈতিক সুযোগ নিতে চাইবে না, তার নিশ্চয়তা গার্ডিয়ান কোথায় পাবে?
হাদীস শরীফে আছে, লজ্জা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ। যার লজ্জা নেই তার ঈমান নেই।
হাদীস শরীফ অনুযায়ী ক্লাসে এসব পড়িয়ে আমাদের বাচ্চাদের ঈমানহারা করা হচ্ছে।
কেউ কেউ বলে, এসব শিক্ষার অভাবে নাকি বাচ্চারা সমস্যায় পড়ে। ধরে নিচ্ছি, এসব শিক্ষা না নিলে বাচ্চাদের কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এসব শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে কোন বাচ্চা যদি অনৈতিক কিছু করে বসে, তখন তার কতটুকু ক্ষতি হবে? দুই ক্ষতির তুলনা করলে কোনটা বেশি ভয়াবহ?
মূলত ইহুদীদের চলমান সংস্কৃতি ধ্বংসকারী (কাউন্টার কালচার) প্রজেক্টের অংশ হিসেবে অনেক দেশেই বাচ্চাদের পাঠ্যবইয়ে যৌন শিক্ষা (SEX EDUCATION) ঢুকানো হয়েছে। যার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশের অভিভাবকরা ব্যাপক আন্দোলন-বিক্ষোভ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে এই শিক্ষা যৌন শিক্ষা (SEX EDUCATION) নামে আসেনি, এসেছে স্বাস্থ্য শিক্ষার নামে।
আসলে মানুষ মাত্রই বড় হবে, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছাবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। আজকে যারা মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানীরা, খালা-মামারাও এক সময় এই বয়সে ছিলো। তারা এক সময় প্রয়োজনের সমাধানও পেয়েছেন। কিন্তু তারা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বয়ঃসন্ধির শিক্ষা নেননি বলে তাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে এমনটা নয়। বরং আজকের যুগে অভিভাভকরা আরো ভয়ের মধ্যে থাকে, না জানি তার সন্তান কি ভুল করে বসে। তার মধ্যে এই শিক্ষা অনেকটা নতুন প্রজন্মকে আরো উস্কে দেয়ার নামান্তর। বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধীকালীন শিক্ষাটা নারী-পুরুষের জন্য পৃথক। সে জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের একজন অন্যজনেরটা জানার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাঠ্যবই ও ক্লাসে একসাথে ছেলে-মেয়েদের তা শেখানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী।
স্বাস্থ্য শিক্ষা মূলত দুই ধরনের হয়।
এক- পাবলিক, যা জনসম্মুক্ষে বলা ও প্রয়োগ করা যায়।
দুই- গোপন বা প্রাইভেট। যা শেখা ও প্রয়োগের জন্য প্রাইভেসী দরকার।
বয়ঃসন্ধীকালীন শিক্ষার নাম দিয়ে যা শেখানো হচ্ছে, তা এক ধরনের প্রাইভেট শিক্ষা, যা শেখা ও প্রয়োগের জন্য প্রাইভেসীর দরকার। আমরা এই শিক্ষার বিরুদ্ধে নই। এই শিক্ষার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা জনসম্মুক্ষে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নয়, বরং প্রাইভেসী বা গোপনীয়তা রক্ষা করে শেখানো উচিত।
এখানে একটি বিষয় বুঝতে হবে, একটি শিশুর যখন দাঁত জন্মায়, তখন সে কামড় বসিয়ে তার ব্যবহার করতে চায়। একটি শিশু যখন হাঁটার শক্তি পায়, তখন বার বার হেঁটে তার ব্যবহার করতে চায়। ঠিক তেমনি একটি শিশু বয়ঃসন্ধিকালে যে নতুন ক্ষমতা পায়, তারও যথেচ্ছ ব্যবহার সে করতে চাইতে পারে। এজন্য বয়ঃসন্ধিকাল একটি সেনসিটিভ সময়। এর নিয়ন্ত্রণও সেনসিটিভলি করা উচিত। বর্তমান পাঠ্যবইয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তাতে শিশুটি ভুল বুঝে বেপরোয়াও হয়ে যেতে পারে, যা খুব ভয়ঙ্কর বিষয়।
আসলে এসব শিক্ষা প্রাইভেসীর সাথে অভিভাবকরা যেন বাসাতেই দিতে পারেন, সেজন্য অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করা দরকার, প্রয়োজনে তাদেরকে দিক নির্দেশনা সমৃদ্ধ লিফলেট বা বই দেয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রতি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের গাইড করার জন্য একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক থাকেন, যিনি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। ঐ শিক্ষককের সাথে শিক্ষার্থীদের বন্ধুর মত সম্পর্ক থাকে, যেন তারা মন খুলে তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত শ্রেণীতে যদি গাইড শিক্ষকরা বিষয়টি একটু খেয়াল রাখেন, তবে কোন শিক্ষার্থী যদি বাসায় পর্যাপ্ত শিক্ষা নাও পায়, তবে গাইড শিক্ষক সেই শূণ্যতা পূরণ করে দিতে পারেন। অর্থাৎ পুরো বিষয়টির জন্য এত ঢাক-ঢোল পেটানোর প্রয়োজন নেই, বরং সুন্দর ও স্বাভাবিক নিয়মে প্রাইভেসীর সাথে শিক্ষাটি দান করা সম্ভব।
আসলে বিশ্বজুড়ে বাচ্চাদের বইয়ে যারা এসব এডাল্ট বিষয় প্রবেশ করিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নয়, বরং তাদের লজ্জাশীলতা ধ্বংস করে বেপরোয়া করা। এটা মূলত ইহুদীদের কাউন্টার কালচার প্রজেক্টের বৈশ্বিক কার্যক্রম, যার মাধ্যমে কোন একটি দেশের সামাজিক নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হয়।
মূলতঃ বৈদেশিক চাপে বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে এ বিষয়গুলো প্রবেশ করানো হয়েছে। তাই অভিভাবকদের উচিত এ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং পাঠ্যবই থেকে তা বাদ দেয়ার জন্য জোর দাবী তোলা।
মনে রাখতে হবে, একজন অভিভাবক তার সন্তানকে কি পড়াবেন আর কি পড়াবেন না- এ বিষয়ে কথা বলার পূর্ণ অধিকার আছে রয়েছে। সুতরাং অভিভাবক মহলকেই এ বিষয়ে সোচ্চার হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।