দেশে কনসার্ট ও মিউজিক শো : নীতি-নৈতিকতার স্থান কোথায়?

দেশে কনসার্ট ও মিউজিক শো : নীতি-নৈতিকতার স্থান কোথায়?

 দেশে কনসার্ট ও মিউজিক শো : নীতি-নৈতিকতার স্থান কোথায়?

-মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

 গত ১০ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো ‘কোক স্টুডিও কনসার্ট’। স্টেডিয়ামে জড়ো হয় প্রায় ৬০-৭০ হাজার লোক। অনেকে ঢুকতে না পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক জনাকীর্ণ হয়ে যায়। মহাখালী, বনানী, উত্তরা, বিমানবন্ধর সড়ক ঘন্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ, তীব্র যানজটে ছুটির দিনেও ঢাকা শহর পরিণত হয় অচল নগরীতে, কষ্ট পায় লাখ লাখ মানুষ।

 ঢাকা শহর এখন কনসার্টের শহর হয়ে গেছে। গত ২০ অক্টোবরও ছিলো আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্ট, নাম- ‘চলো বাংলাদেশ কনসার্ট’। ২১শে অক্টোবর ন্যাশনাল লাইব্রেরি মিলনায়তনে ছিলো, ‘রক ইন দ্য সিটি কনসার্ট’, ২৬ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘দ্য নাইট অব প্রীতম হাসান কনসার্ট’। ঢাকার মত একটি জনবহুল শহরে কিভাবে এত এত কনসার্টের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ তা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়। কারণ আপনি একটা ধর্মীয় মাহফিল করতে যান অনুমতি পাবেন না, কোরবানী হাট বসাতে যান, অনুমতি পাবেন না। বলবে- যানজট হবে, মানুষের কষ্ট হবে। কিন্তু কনসার্টের ক্ষেত্রে কেন তা হয় না?

 যাই হোক, ফিরে আসি কোক স্টুডিও কনসার্ট নিয়ে আলোচনায়। সেই ১০ নভেম্বর ‘কোক স্টুডিও কনসার্ট’ থেকে ফিরে অনেকেই মতামত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস ও ছবি শেয়ার করেছে। তারা বর্ণনা করেছে, কিভাবে উক্ত কনসার্টে নারী-পুরুষের প্রকাশ্যে অবৈধ মেলামেশা, নোংরামি ঘটনা ঘটে। অশ্লীলতা সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। নারীদেরকে পুরুষের কাধে চড়ে নাচতে থাকে। এছাড়া ইয়াবা, গাজা, সীসাসহ তাবৎ নেশার রাজ্য হয়ে উঠে কনসার্ট প্রাঙ্গন। অনেকে অবশ্য এগুলো তারুণ্যের উচ্ছ্বাস বলে উৎসাহ দিতে চায়। কিন্তু তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর নোংরামি এক না। নোংরামি নোংরা লোকের কাজ। জাতির ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মের নামে কখনো সেই নোংরামি চলতে পারে না। আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও আইনও কখনও এমন নোংরামিতে সায় দেয় না, সুতরাং কনসার্টের নামে যে নোংরামি ও অশ্লীলতা চলে, তা ঘৃণাই করতে হবে।

 আসলে বর্তমানে সময়ে তরুণ প্রজন্মের নামধারী একটা শ্রেণী আছে, যাদের নোংরামি ও নেশা করার জন্য একটা উপলক্ষ খোঁজে। কনসার্ট, মিউজিক শো, থার্টি ফাস্ট, হ্যালোইন, সাকরাইন, ভ্যালেন্টাইন ডে হচ্ছে তাদের সেই নোংরামোর উপলক্ষ। কিছু লোক সেই নোংরামিকে সুযোগ দিয়ে ব্যবসা করে, কনসার্ট আর মিউজিক শোর টিকিট বিক্রি করে টাকা কামায়।

 তবে এসব কনসার্ট ও মিউজিক শোগুলোতে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন অপসংস্কৃতির আমদানি ঘটে, যা খুবই ভয়ঙ্কর। যেমন গত ২০শে অক্টোবর রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ‘মেসকিউরেড পার্টি ও মিউজিক্যাল শো’। মেসকিউরেড পার্টি মানে যেখানে আগতরা এক ধরনের ফেস মাস্ক পরে যেন কেউ কাউকে চিনতে না পারে। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের মেসকিউরেড পার্টির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন অনৈতিক নোংরা কাজ করে। বাংলাদেশেও কনসার্ট ও মিউজিক শোর নামে সেই অপংস্কৃতি চলে এসেছে।

 আসলে কনসার্ট বা মিউজিক শোগুলোতে নীতি নৈতিকতাকে থোরাই কেয়ার করা হয়। হয়ত পাশেই হাসপাতাল আছে, অসুস্থ রোগী আছে সেগুলো তাদের কাছে দেখার কোন বিষয় না। হয়ত পাশেই মসজিদে আজান হচ্ছে, নামাজ হচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যেই তাদের উচ্চ আওয়াজের গান-বাদ্য-বাজনা চলছে, বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ নেই। গত ৩০ শে অক্টোবর, টাঙ্গাইলের পৌর উদ্যানে এক মিউজিক শোর আয়োজন হয়, তার পাশেই ছিলো মসজিদ। মাগরিবের আজান বা নামাজের সময় অতি উচ্চস্বরে গান বাজনা চলমান থাকে, যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

 বর্তমানে আমাদের দেশে কনসার্ট বা মিউজিক শো যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা আমাদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুব আশঙ্কার কথা। কারণ এক একটা কনসার্ট বা মিউজিক শোর মাধ্যমে নিত্যনতুন নোংরামির আমদানি করা হয় এবং উচ্ছৃঙ্খলতার ট্রেনিং দেয়া হয়। এই উচ্ছৃঙ্খতা শুধু সেই কনসার্ট প্রাঙ্গনেই যে সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়, বরং পরবর্তীতে সারা দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে।

সুতরাং বাংলাদেশে এসব কনসার্ট ও মিউজিক শো নিষিদ্ধ করা উচিত, নয়ত অপসংস্কৃতি ভয়াল থাবায় আমরা বা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, কেউ বাঁচতে পারবো না।

Comments
Mohammad Nasir Uddin Ummiyyi 21 w

১০০% সঠিক, এ নোংরামি এখন দেশের প্রতিটা অঞ্চলে চড়িয়ে পড়েছে, গান বাজনার মাঝে ইয়াং ছেলে মেয়েরা অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত হচ্ছে, এর প্রভাবে লিপ্ত হচ্ছে ভ্যাবিচারে