পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার বইয়ে কল্পনার বিজ্ঞানীর ছবি অঙ্কন -এ আবার কেমন বিজ্ঞান শিক্ষা !

পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার বইয়ে কল্পনার বিজ্ঞানীর ছবি অঙ্কন -এ আবার কেমন বিজ্ঞান শিক্ষা !

পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার বইয়ে কল্পনার বিজ্ঞানীর ছবি অঙ্কন -এ আবার কেমন বিজ্ঞান শিক্ষা !

-মুহম্মদ শফিউর রহমান

 

ড. জাফর ইকবাল সম্পাদিত ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ‘আমাদের জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ অধ্যায়ের ১৭ পৃষ্ঠায় একটি বিজ্ঞান অনুশীলনে বলা হয়েছে, “চল একে ফেলি আমাদের যার যার কল্পনার বিজ্ঞানীকে!”।

 প্রশ্ন হচ্ছে, কল্পনার বিজ্ঞানীর ছবি অঙ্কন আবার কেমন বিজ্ঞান শিক্ষা?

 আমরা তো জানি, কল্পনার ছবি অঙ্কন করা সাইন্সের বিষয় নয়, বরং আর্টস বা মানবিক বিভাগের বিষয়।

কিন্তু আর্টস বা মানবিক বিভাগের বিষয়কে পাঠ্যবইয়ে সাইন্স হিসেবে পড়ানো হচ্ছে কেন? রহস্য কি?

 শুধু এই বইয়ে নয়, বরং নতুন পাঠ্যবইগুলোতে গণিত বা সাইন্সের অনুশীলন অঙ্কগুলো রহস্যজনকভাবে কমিয়ে ফেলা হয়েছে, এর বদলে সেখানে গল্প বা কাহিনী জুড়ে দেয়া হয়েছে। মানে সাইন্সের মধ্যে সাহিত্য ঢোকানো হয়েছে। অথচ সাহিত্য আর্টস বা মানবিক বিভাগের বিষয়।

 আবার সাইন্স বা বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু বা চাপ্টারকেও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। অপরদিকে বৃদ্ধি করা হয়েছে আর্টস বা মানবিকের বিষয়, যেমন- চারু-কারু, গান, নাটক, অঙ্কন, খেলাধূলা ইত্যাদি। লক্ষণ দৃষ্টিতে অনুমান হচ্ছে, কোন অদৃশ্য কারণে পাঠ্যবইগুলো সাইন্সকে হেয় করা হচ্ছে এবং তার বদলে সেখানে আর্টসের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে।

 লক্ষ্য করলে দেখবেন, যারা নতুন পাঠ্যবই সম্পর্কে মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় বিবৃতি দেয়, তারা প্রায়শই বলে, এ পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞানমনষ্ক হবে।

 পাঠক! বিজ্ঞানমনষ্ক আর বিজ্ঞান কিন্তু এক জিনিস না। বিজ্ঞান হচ্ছে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। অপরদিকে বিজ্ঞানমনষ্ক বলতে বোঝায় এক প্রকার দার্শনিকতা, যা যুক্তিবাদ ও চেতনা নির্ভর। সে হিসেবে বিজ্ঞানমনষ্কতা কোনভাবেই বিজ্ঞান বা সাইন্স নয়, বরং আর্টস বা মানবিক বিভাগের একটি সাবজেক্ট। সম্ভবত কোন বিশেষ গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের মতাদর্শ ‍ও চিন্তা চেতনা ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরী করেছে, যেখানে পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞান বা সাইন্সকে খাটো করে তার বদলে বিজ্ঞানমনষ্কতা নামক দর্শন ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সাইন্সে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়বে, যার প্রভাব ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে তো অবশ্যই, বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ছিটকে দেবে।

 আরেকটি কথা না বললেই না, অঙ্কন সাবজেক্ট ছোটবেলায় আমাদেরও ছিলো। আমাদেরকে আঁকতে দেয়া হতো নদীর ছবি, ফুলের ছবি, আনারসের ছবি, গ্রামের ছবি, আমের ছবি ইত্যাদি। কিন্তু আমাদেরকে প্রাণীর ছবি বিশেষ করে মানুষের ছবি কখনই আঁকতে দেয়া হতো না। কারণ প্রাণী ছবি আঁকা ইসলামে শক্ত নিষেধ আছে। হাদীস শরীফে আছে,

১. "কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা (প্রাণীর) ছবি বানায় (আঁকে)।” [সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬ – ইফা]।

২. “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করবে, কিয়ামতের দিন তাকে ঐ ছবিতে রূহ দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে তাতে রূহ দিতে সক্ষম হবেনা” (মুসলিম, অধ্যায় : প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম। হাদীছ নং- ২১১০)

৩. “প্রত্যেক চিত্র অঙ্কনকারীই জাহান্নামী। চিত্রকর যতটি চিত্র অঙ্কন করবে, তার প্রতেকটির বদলে একটি করে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে। এর মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে”। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম। হাদীছ নং- ২১১০)

 অথচ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের বাচ্চাদের দিয়ে বিভিন্ন ক্লাসে প্রচুর পরিমাণে প্রাণীর ছবি আকানো হচ্ছে। আমরা আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাচ্ছি পড়ালেখা করে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য, জাহান্নামী হওয়ার জন্য না। আর যে লেখাপড়া করে আমার এত আদরের বাচ্চাকে জান্নাতি হওয়ার বদলে জাহান্নামী হওয়া শিখায়, সেই লেখাপড়া কখনই লেখাপড়া না।

 সুতরাং স্কুলে বাচ্চাদের দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন বন্ধ হওয়া উচিত।

Comments