বদ জ্বীনের সমস্যায় পড়লে যা করবেন
লেখা: এস হাবীব
সমাজে অনেক মানুষ পাওয়া যায়, যারা বদ জ্বীনের দ্বারা সমস্যাগ্রস্ত। বদ জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কেউ শারীরিক বা মানসিক অসুস্থ হয়ে যান, কারো স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে কেউ কেউ মানসিক সমস্যা বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেও বাস্তবে তা এড়ানো সম্ভব না, কারণ জ্বীন সরাসরি না দেখা গেলেও বদ জ্বীনের কারণে সমস্যাগ্রস্ত হওয়ার বাস্তব উদাহরণ আমাদের চারপাশে অনেক সংখ্যায় বিদ্যমান। অনেক সময় জ্বীন নিজ থেকেই কোন মানুষের উপর ভর করে সমস্যা তৈরী করে। আবার অনেক সময় একজন মানুষ আরেক মানুষের ক্ষতি সাধনের জন্য জ্বীন চালান করে।
মূলতঃ জ্বীন জাতি মানুষের মত মহান আল্লাহ পাকের একটি সৃষ্টি। মানুষের মধ্যে যেমন ভালো-মন্দ আছে, তেমনি জ্বীনের মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে। খারাপ মানুষ যেমন মানুষের ক্ষতি করতে চায়, ঠিক তেমনি খারাপ জ্বীনও মানুষের ক্ষতি করতে চায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে মানুষও জ্বীনকে বন্দি করে, তাকে দিয়ে খারাপ কাজ করায়। যেমন- একজন মানুষ কোন গুন্ডা বা সন্ত্রাসী পালে। ঐ সন্ত্রাসীকে ব্যবহার করে সে অনেক মানুষের ক্ষতি করে। ঠিক তেমনি, সমাজে কিছু কবিরাজ টাইপের লোক আছে যারা বিভিন্ন আমালিয়াত বা কুফরী কালাম করে জ্বীনকে বন্দি করে। অতঃপর সেই বন্দি জ্বীনকে ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি করে টাকা কামাই করে। দেখা যায়, অনেক সময় মানুষে-মানুষে শত্রুতা হয়। তখন মানুষ ঐ কবিরাজ টাইপের লোকের স্মরণাপন্ন হয়ে বলে- “অমুক লোকের সাথে আমার শত্রুতা, তাকে জ্বীন দিয়ে ক্ষতি করে দেন, এর বিনিময়ে আপনাকে টাকা দিবো।” তখন কবিরাজ টাইপের লোকটি টাকার বিনিময়ে বন্দি জ্বীনকে দিয়ে নির্দ্দিষ্ট মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, ঠিক যেভাবে গুন্ডা বা সন্ত্রাসী দিয়ে মানুষের ক্ষতি করা হয়।
আমাদের সমাজে কেউ বদ জ্বীনের সমস্যায় আক্রান্ত হলে সেই কবিরাজ টাইপের লোকেরই স্মরণাপন্ন হয়। তাদের ভাষায় এ লোকগুলো ‘তদবির করে’। দেখা যায় যে কবিরাজের কাছে যাওয়া হয়েছে তার কাছেও জ্বীন বন্দি আছে। অফিস-আদালতে তদবির বলতে যা বোঝায়, এখানেও ঠিক তাই হয়, মানে জ্বীন দিয়ে জ্বীনকে তদবির করা হয়। যেহেতু এরা বদ বা গুন্ডা প্রকৃতির জ্বীন, সেহেতু এক গুন্ডা দিয়ে অন্য গুন্ডাকে ভয় দেখানো হয়। এতে অনেক সময় কাজ হয়, আবার অনেক সময় সমস্যা আরো বেড়ে যায়। তবে অনেক সময় প্রাথমিক সমস্যা দূর হলেও পরে আবার সমস্যা শুরু হয়, কারণ এক গুন্ডার ভয়ে আরেক গুণ্ডা সাময়িক পালিয়ে যায় ঠিক, কিন্তু পরে সুযোগ বুঝে আবার ফিরে আসে, পূণরায় ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
তাই জ্বীনের সমস্যায় পড়লে এসব কবিরাজের কাছে না গিয়ে একজন হক্কানী ওলী আল্লাহ, বজুর্গ ব্যক্তির কাছে যাওয়া উচিত, যিনি সর্বদা কুরআন সুন্নাহ অনুসারে জীবন পরিচালনা করেন। কোন হারাম-নাজায়েজ কাজ তো করেনই না, সবর্দা নামাজ-কালাম ইবাদত বন্দেগীতে মশুগুল থাকেন এবং সুন্নতে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুসারে জীবন পরিচালিত করেন। তিনি ইলমে তাসাউফ হাসিলের মাধ্যমে কামালিয়াত অর্জন করেছেন। এ ধরনের ব্যক্তিত্বগণ এক বিশেষ ধরনের রুহানি জ্ঞানের অধিকারী হোন। উনাদের কাছে গেলে মানুষ-জ্বীন হেদায়েত প্রাপ্ত হয়, বদ কাজ করা ছেড়ে দেয়।
যেমন- একজন ওলীআল্লাহ’র কাছে গেলে একজন মানুষের হেদায়েত লাভ বা পাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি আমরা সরাসরি দেখতে পারি। ঠিক তেমনি একজন ওলী আল্লাহর কাছে গেলে জ্বীনের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। সে যদি বদ জ্বীন হয় তবে বদ কাজ ছেড়ে হেদায়েত লাভ করে। অনেক সময় সে পাপ হচ্ছে এ অনুধাবন করে ভর করা ব্যক্তিকে ছেড়ে চলে যায়। একজন ওলী আল্লাহ’র রুহানী ব্যক্তিত্ব বা কামালিয়তের কাছে সে আত্মসমর্পণ করে। অপরদিকে, কবিরাজরা তদবিরের মাধ্যমে এক জ্বীন দিয়ে আরেক জ্বীনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরানোর চেষ্টা করে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এজন্য কেউ বদ জ্বীনের ক্ষপ্পরে পরলে কবিরাজ বা তদবিরকারকদের কাছে না গিয়ে একজন হক্কানী ওলীআল্লাহ বুজুর্গ ওলীআল্লাহ’র কাছে যাওয়া উচিত। উনাদের সোহবতে গিয়ে সমস্যার কথা জানানো উচিত। তখন তিনি যে নসিহত মুবারক করেন, আদেশ নির্দেশ দেন সে অনুসারে চললে সহজেই বদ জ্বীনের প্রভাব থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ওলী আল্লাহদের শক্তি কামালিয়াতের শক্তি, যার সাথে তদবিরকারক বা কবিরাজের কর্মের তুলনা চলে না।