সাবধান ! আপনার সন্তান কি শিখছে খবর রাখুন
লেখক- মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান
যুগে যুগে মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংসের জন্য অনেক উপকরণ মানুষের সামনে এসেছে। তবে এর বেশিরভাগ এসেছে ‘মন্দ’ রূপে। মা নুষ জেনেছে বিষয়টি খারাপ, তবু নফসের তাড়নায় সেই অবৈধ কাজটি করেছে। কিন্তু যখন সেই অনৈতিক উপকরণ ভালো সূরতে আসে, তখনই ঘটে বিপত্তি।
বর্তমান যুগে সেরকম একটি ফিতনা হলো, সমকামীতা বা ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’, যার মাধ্যমে আমার আপনার সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তানকে হিজরা, সমকামী বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
মূলতঃ এ ধরনের অনৈতিক বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া ইহুদীদের একটি পুরাতন ষড়যন্ত্র। এ ধরনের বিষয়গুলোকে বলে, কাউন্টার কালচার (counter colture)। যেহেতু, প্রত্যেকটি সমাজ একটি সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে। ইহুদীরা চায় সমাজের সেই সংস্কৃতিটা ধ্বংস করে তাদের পছন্দমত সংস্কৃতি প্রবেশ করাতে। এ কারণে তারা বিভিন্ন ‘কাউন্টার কালচার’ প্রয়োগ করে। সমকামীতার নতুন রূপ ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’ সেরকম একটি ‘কাউন্টার কালচার’।
ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বহুদিন ধরে বাংলাদেশে এ অনৈতিক বিষয়টি বৈধতা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে। তবে বাংলাদেশ সরকার তাতে নতি স্বীকার করেনি। তবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে বাচ্চাদের ‘জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস’ এর নামে সমকামীতা বা ‘এলজিবিটিকিউ+’ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নামে একটি গল্প সংযুক্ত করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিলো ছোট শিশুদের মধ্যে সমকামীতা বা ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’ এর স্বপক্ষে সহানুভূতি তৈরী করা।
আমরা জানি, মহান আল্লাহ পাক প্রত্যেক সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। মানুষও তেমনি নারী-পুরুষ দুই ধরনের হয়। কিন্তু ৭ম শ্রেণীর বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ পাঠে ছোট বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হয় অন্যভাবে। বলা হয়, লিঙ্গ দুই প্রকার- একটি শারীরিক, অন্যটি মানসিক (বইয়ে লিখে সামাজিক)।
শারীরিক বলতে বুঝায়, কেউ জন্মের সময় নারী বা পুরুষের প্রজনন অঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়।
আর মানসিক বলতে বুঝায়, সে জন্মগত নারী বা পুরুষ যাই হোক না কেন, সে যদি নিজেকে ছেলে ভাবে তাহলে সে ছেলে, আর যদি মেয়ে ভাবে তবে মেয়ে।
এই ‘শরীফার গল্প’ কতটা ভয়ঙ্কর একবার ভেবে দেখুন। আপনি আপনার সুস্থ-স্বাভাবিক ছেলেটিকে স্কুলে পড়ার জন্য পাঠালেন। কিন্তু সেই ছেলে স্কুলে পড়ে এসে বললো- “বাবা আমি তো মেয়ে। ” মানে সে হিজরা হয়ে গেছে !
তবে আশার কথা হচ্ছে, এই বইটি প্রকাশের পর অনেকে তা নিয়ে আন্দোলন করে, প্রতিবাদ জানায়। যার ফলশ্রুতিতে সরকার বইটি ব্যান করতে বাধ্য হয়। মূলতঃ আন্দোলন-প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলো দেশের ইসলাম ধর্মীয় সংগঠনগুলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, অভিভাবকরা সে সময় নিশ্চুপ থাকে, যা সত্যিই হতাশাজনক। এ থেকে বোঝা যায়, অভিভাবকরা হয়ত বিষয়টি ঠিক মত বুঝতেই পারেনি।
আমি আমার লেখার শুরুতে একটি কথা বলেছি, অনৈতিক জিনিস যদি ‘ভালো’ হিসেবে শিক্ষা দেয়া হয়, তবে দেখা দেয় বড় সমস্যা। ইহুদীরা মূলত এ কাজটি করে। তারা ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’ শিক্ষা দিচ্ছে মানবতা, সমানধিকার, লৈঙ্গিক সমতা, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে। তারা বলে, “সমকামী বা ‘এলজিবিটিকিউ+’ তারাও তো সমাজের মানুষ। তাদেরও তো অধিকার আছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের অধিকার দিন।”
আসলে মহান আল্লাহ পাক নারী-পুরুষের যে স্বাভাবিক সম্পর্ক দিয়েছেন, এটাই হলো বৈধ। এর বাইরে অনেক মানুষের মধ্যে অনেক কুরুচি ও অনৈতিকতা লক্ষ্য করা যায়। এগুলোকে বলা হয়, বিকৃতগামী বা পার্ভারশন। যারা এমন করে তাদের আমরা বলি, কুরুচি সম্পন্ন বা পার্ভার্ট। আমরা স্বাভাবিক জিনিসকে স্বীকৃতি দেই, কিন্তু বিকৃতকে দেই না। কারণ বিকৃত মানেই মন্দ ও অস্বাভাবিক। পৃথিবীতে মানুষের মাঝে কুরুচির অভাব নেই। পশ্চিমাবিশ্ব বিকৃতগামী বা পার্ভারশনকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে অনেক কুরুচিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন- অযাচার বা পরিবাারিক নিকট সম্পর্কের মধ্যে অনৈতিকতা বা ইনসেস্ট, পশুকামীতা ইত্যাদি নাউযুবিল্লাহ। এজন্য তাদের আন্দোলনের নাম ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’, মানে প্লাস চিহ্ন আছে। তারমানে যত অনৈতিকতা আসবে, সবগুলোকে তারা একে একে স্বীকৃতি দিবে। নাউযুবিল্লাহ। লক্ষ্য করুণ- ‘এলজিবিটিকিউ+’ এর ‘এল মানে নারী-নারী অবৈধ সম্পর্ক’, ‘জি মানে পুরুষ-পুরুষ অবৈধ সম্পর্ক’, ‘বি মানে যে উভয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক’, ‘টি মানে নারী কিন্তু পুরুষ সাজে অথবা পুরুষ কিন্তু নারী সাজে’, ইত্যাদি। এভাবে অসংখ্য তাদের অনৈতিকতার বহর।
বর্তমানে বিষয়টি যে শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে তা নয়, বরং বিভিন্ন বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘এলজিবিটিকিউ+ মুভমেন্ট’ কে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধিনস্ত ৭ কলেজে চালু হয়েছে ‘ট্রান্সজেন্ডার কোটা’। তারমানে কেউ যদি পুরুষ হয়ে নারীদের মত আচরণ করে দাবী করে ‘আমি মানসিক মেয়ে’ তাহলেই সে ঢাবি বা ৭ কলেজে চান্স পেয়ে যাবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়গুলো প্রচার-প্রসারে অনেক গ্রুপ চালু হয়েছে। তারা এখন আর লুকিয়ে নয়, বরং প্রকাশ্যেই তাদের প্রচার ও সদস্য সংগ্রহ করছে। তারা মানবতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায় করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, বন্ধু-বান্ধবের কমিউনিটি বা প্রোগ্রামে তাদের কার্যক্রম বেশ লক্ষণীয়। একজন দাড়িমোছওয়ালা ছেলে শাড়ি পরে আছে, কপালে টিপ দিয়ে আছে। মহিলাদের মত অঙ্গভঙ্গী করছে। আপনি হয়ত জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে কি হিজরা ? সে উত্তরে বলবে, না আমি নন-বাইনারী (মানে সে দেহে পুরুষ, কিন্তু মনে মনে মেয়ে)। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের কারণে এবং এদের সাথে যুক্ত হলে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ কিংবা চাকুরীতে কোটা সুবিধা পাওয়া যাবে কিংবা এনজিও’র থেকে ভাতা পাওয়া যাবে, এই আশায় অনেকে তাদের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। এইসব গ্রুপগুলোতে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, সে যদি ‘এলজিবিটিকিউ+’ এর কেউ হয়েই যায়, তবে তার বাবা-মাকে কি বলে ম্যানেজ করবে, কি যুক্তি দিবে, আত্মীয় স্বজনকে কি বলে বুঝ দেবে। এছাড়া দেশ-বিদেশের বড় বড় অনুষ্ঠানের যাওয়ার লোভ দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, সমস্যায় পড়লে আইনী সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেয়া হয়। এমনকি এই সব অনৈতিক কাজে তার সঙ্গীও নির্বাচন করে দেয়া হয়।
আজকে আমার এ লেখা অভিভাবকদের জন্য। হয়ত অনেকের জন্য লেখাটি বুঝতে জটিল বা কঠিন হতে পারে। তারপরও বলবো, যেহেতু কাফির-মুশরিকদের নতুন ষড়যন্ত্র বা ফিতনা এসেছে, সেটা বুঝতে কষ্ট হলেও আপনাকে নিজ সন্তানকে বাচাতে হলে তা বুঝতে হবে। আপনার সন্তান তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কি শিখছে, বইয়ে কি পড়াচ্ছে, কোন বন্ধু বান্ধবের সাথে মিশছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন গ্রুপে সংযুক্ত হচ্ছে সে খবর আপনাকে রাখতে হবে। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নিজে সচেতন হতে হবে, সন্তানকে সচেতন করতে হবে। যদি আপনার সন্তান এসব গ্রুপের ক্ষপ্পরে পড়েই যায়, তবে তার ইহকাল ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।