ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় : সর্বত্র মিলাদ শরীফ পাঠ
লেখা: মাদারাসার খাদিম
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বার বার পূর্বাভাসে বলছে, বাংলাদেশে যে কোন সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। যেমন সংবাদে আসছে,
১) “২০ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎস বাংলাদেশে” (দৈনিক প্রথম আলো, ১৬ আগস্ট, ২০২৩)
২) “বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ” (দৈনিক যুগান্তর, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
৩) “বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ” (দৈনিক যায়যায়দিন, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
৪) “বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ঢাকা, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা” (একাত্তর, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
এ সমস্ত সংবাদ শুনে মানুষ বর্তমানে ভীত সন্ত্রস্ত। এ ভীতি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রীতিমতো ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকম্পের সময় করণীয় কি- তা ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়েছে।
এহেন, পরিস্থিতিতে একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে সমাজের প্রতি আমাদের করণীয় কি ?
প্রথমত, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এসব দুর্যোগ মহান আল্লাহপাক উনার পক্ষ হতে মানুষের উপর আপতিত গযব। মানুষ যখন আল্লাহ পাককে ভুলে যায় এবং উনার আদেশ নির্দেশ সঠিকভাবে মান্য করে না, তখন মানুষের উপর এ সমস্ত দুর্যোগ গজব আকারে নাজিল হয়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেছেন- "জমিনে ও পানিতে যত ফিতনা-ফাসাদ, সব মানুষের হাতের কামাই।" (পবিত্র সূরা আর রুম, আয়াত শরীফ ৪১)
দ্বিতীয়ত, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই তথ্য পৌছাতে হবে যে, ভূমিকম্পের মত গজব থেকে বাচতে বিভিন্ন ট্রেনিং নিতে বা কৌশল করতে শরীয়তে নিষেধ নাই। তবে আযাব-গযব থেকে বাঁচার উপায় হলো- মহান আল্লাহপাক উনার রহমত হাসিল করা। কারণ আযাব-গযবের বিপরীত হলো- রহমত। হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার জামানায় মহাপ্লাবনে উনার কাফির ছেলে ‘কেনান’ সর্বোচ্চ পাহাড়ের সর্বোচ্চ গাছের শীর্ষ চূড়ায় উঠেও কিন্তু মহাপ্লাবনের গযব থেকে বাঁচতে পারলো না, পানিতে ডুবে মারা গেল। অন্যদিকে এক বৃদ্ধা মহিলা উনার নৌকায় আরোহন না করেও মহাপ্লাবনের মধ্যেও মহান আল্লাহপাক উনার খাছ রহমতে নিজ এলাকায় প্লাবনমুক্ত অবস্থায় থাকলেন, গযব থেকে বেঁচে গেলেন। সুবহানাল্লাহ।
এখন কথা হলো- মুসলমানরা মহান আল্লাহপাক উনার এই বেমেছাল খাছ রহমত হাসিল করবে কিভাবে?
হাদিস শরীফে বর্নিত আছে- হযরত আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। একদা তিনি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে হযরত আমের আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর ঘরে গিয়েছিলেন। তখন হযরত আমের আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার সন্তানদের ও উনার স্বগোত্রীয় লোকদের সাথে নিয়ে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন তথা পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠ করছিলেন এবং বলছিলেন- “এ দিনটি, এ দিনটি” তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- (হে আমের আনসারী !) নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আপনাদের জন্য- (৩টি সু-সংবাদ দিলেন) -
১) রহমতের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দিয়েছেন।
২) ফিরিশতাগণ আপনাদের জন্য মাগফেরাত (ক্ষমা) কামনা করছেন।
৩) তাছাড়া যারা আপনাদের মত আমার জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে (মীলাদ মাহফিল করবে) তারা আপনাদের মতোই নাজাত লাভ করবে। (আত্তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীরিন্নাযীর) -তথ্যসূত্র হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৫।
অর্থাৎ আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে মিলাদ শরীফ পাঠ করলে খাস রহমত নাজিল হয়।
এছাড়া তাফসিরে জালালাইন এর লিখক হযরত জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্ব-রচিত “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ করেন- “যে মুসলমানের গৃহে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ পাঠ করা হয়, সে গৃহ ও গৃহে বসবাসকারী ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। সে ঘরে যার মৃত্যু হবে সে মৃত ব্যক্তি কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর অতি সহজে দিতে পারবে। আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম, পৃষ্ঠা নং- ১৩ ও ১৪
অর্থাৎ কোন বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিলাদ শরীফ পাঠের ব্যবস্থা করলে সে স্থানে রহমত বর্ষিত হওয়ার কারণে বসবাসকারী ব্যক্তিগণ দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নি, পানি, পরনিন্দা, কুদৃষ্টি ও চুরি ইত্যাদির আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
মানুষদের এই বিষয়গুলি ভাল ভাবে বুঝিয়ে আযাব-গযব থেকে বাচার জন্য আমাদের নিজ নিজ এলাকা/মহল্লায় দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক ভিত্তিতে নিজেদের বাসায়, প্রতিবেশীদের বাসায়, বাড়ীওলাদের বাসায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, মসজিদে, মাদরাসায়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এককথায় সর্বত্র পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠের ও দুয়া-মুনাজাতের ব্যবস্থা করতে হবে। মহান আল্লাহপাক তিনি আমাদের সকলকে সমাজের সর্বত্র পবিত্র মিলাদ শরীফ জারি করার সেই রুহানী কুওওয়াত দান করুন। আমীন।