থার্টিফাস্টে বাড়ির ছাদে গান, ডিজে পার্টি ও আতশবাজি নিষিদ্ধ করলেই কি শুধু হবে?
-মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত
কথিত থার্টিফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতিমধ্যে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান বলেছেন, ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে, বাড়ির ছাদে গান-বাজনা কিংবা ডিজে পার্টি ও আতশবাজি ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেউ যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” (তথ্যসূত্র: রাইজিং বিডি, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩)
ডিএমপির এ ধরনের নির্দেশনা যে এইবারই প্রথম তা নয়, বরং প্রতি বছরই ডিএমপি কথিত থার্টিফাস্ট নাইট আসার আগে এমন একটি নির্দেশনা দেয়। বিষয়টি অবশ্যই ভালো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন নির্দেশনা সত্ত্বেও অধিকাংশ এলাকায় নাচ-গান, ডিজে পার্টি ও আতশবাজি-পটকা ফোটাতে দেখা যায়। যার কারণে মিডিয়াতেও শিরোনাম হয়, “প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই থার্টি ফার্স্ট উদযাপন। (তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন, যমুনানিউজ, ১লা জানুয়ারী, ২০২১)
কেন ডিএমপির নির্দেশনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?
আসলে ডিএমপির নির্দেশনায় বাড়ি ছাদে ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ হলেও বাড়িওয়ালার দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ থাকে না। আবার আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ হলেও পটকা-আতশবাজি কেনাবেচার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগও থাকে না। এ কারণেই সম্ভবত নির্দেশনা থাকার পরও অনেকে তা মানেনি তার উপেক্ষা দেখা যায়।
এজন্য দুটি বিষয় করতে হবে-
এক, অনলাইন বা মাঠপর্যায়ে (দোকানে) যারা আতশবাজি বা ফানুস ক্রয়-বিক্রয় করছে তাদের গ্রেফতার করা এবং আইনত শাস্তির মুখোমুখি করা।
দুই, কোন বাড়ির ছাদে কোন আইন শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ (ফানুস উড়ানো, আতশবাজি, ডিজে পার্টি, জনসমাগম, মদ-গাজা-ইয়াবা সেবন, আগুন খেলা, উচ্চস্বরে গান বাজানো ইত্যাদি) সংঘটিত হলে তার দায় ঐ বাড়ির বাড়িওয়ালার এবং এর জন্য ঐ বাড়িওয়ালাকেই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে- এই মর্মে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা।
লক্ষ্য করবেন, বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে দেদারসে বিক্রি হয় আতশবাজি এবং সেগুলো বিভিন্ন কুরিয়ার বা পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে কাস্টমারের বাসায় পৌছে যায়। আপনাদের মনে থাকার কথা, গত ৯ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে রাজধানীর কাকরাইলে এস এ পরিবহণে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেই আগুনের মূল কারণ ছিলো, আতশবাজি ও পটকা পরিবহন। এ সম্পর্কে সংবাদে প্রকাশ, “কাকরাইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে, ভবনে পটকা-আতশবাজি বিস্ফোরণ” (সূত্র: সমকাল অনলাইন, ০৯ অক্টোবর ২০২৩); “এসএ পরিবহন ভবনে আগুন আতশবাজি থেকে” (সূত্র: ঢাকা টাইমস, ০৯ অক্টোবর ২০২৩)
আতশবাজি ও পটকাকে কেন্দ্র করে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও অনলাইনে আতশবাজি কেনা-বেচার বিরুদ্ধে এখনও প্রকাশ্য কোন আইন হয়নি। যার কারণে অনলাইনে বিভিন্ন পেইজের মাধ্যমে আতশবাজি বিক্রি ও এসএস পরিবহণের মাধ্যমে ক্যাশ অন ডেলিভারি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারা দেশে পৌছে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। যেমন, ‘আতশবাজি পাইকারি বাজার’ নামক একটি ফেসবুক পেইজের গত ৩ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখের একটি পোস্ট দেখুন-
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, আতশবাজি পাইকারি বাজার নামক একটি ফেসবুক পেইজ থেকে গত ৩ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে (এসএ পরিবহণে আতশবাজির কারণে অগ্নিকাণ্ডের মাত্র ১৫ দিন পর) ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, তাদের পেইজে আতশবাজির জন্য ইনবক্সে অর্ডার করতে, তাহলে তারা এসএস পরিবহণের মাধ্যমে সারা দেশে ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে তা পৌছে দেবে। যোগাযোগের জন্য একটি ওয়্যাটসআপ নম্বরও দেয়া আছে এবং ছবিতে এসএ পরিবহণ সার্ভিসের মাধ্যমে যে সারাদেশে আতশবাজি পৌছানো হয় তার অসংখ্য রিসিটের ছবিও দেয়া আছে।
লিঙ্ক- https://www.facebook.com/photo/?fbid=301730056091802set=a.109718515292958
আসলে বর্তমানে অনলাইনে অনেক নিষিদ্ধ বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন ও প্রচারণা হয়। যেমন- মদ ও নেশাজাতীয় দ্রব্য, নিষিদ্ধ বই, বিষ্ফোরক আতশবাজি, জুয়া বা বেটিং, পতিতাবৃত্তি, কিডনী ক্রয়-বিক্রয়, সমকামীতা ইত্যাদি। মাঠপর্যায়ে এ সমস্ত বিষয়ের প্রচার ও কেনাবেচার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও অনলাইনে এদের প্রচার, কেনাবেচার বিরুদ্ধে কোন সু-স্পষ্ট আইন নাই। আইনের এই ফাক-ফোকর কাজে লাগিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে এসব নিষিদ্ধ বস্তু এখন অনেক সহজলভ্য আকার ধারণ করেছে। এজন্য এসব নিষিদ্ধ বস্তুর প্রচার ও কেনাবেচার বিরুদ্ধে শুধু মাঠপর্যায়ে আইন থাকলে, অনলাইনেও সরাসরি আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষ করে, সাইবার নিরাপত্তা আইনে যদি অনলাইনে এ সমস্ত নিষিদ্ধ বস্তুর প্রচার, ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনকে সরাসরি ও স্পষ্ট অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তখন এ সমস্ত বিষয়কে পূজি করে অপরাধ ও দুর্ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রনালয় নজর দেবেন, এমনটাই আমাদের আশাবাদ।