মার্কিন মোড়লদের খপ্পর থেকে বের হতে অন্যদেশগুলোকে কি করতে হবে?

মার্কিন মোড়লদের খপ্পর থেকে বের হতে অন্যদেশগুলোকে কি করতে হবে?

 মার্কিন মোড়লদের খপ্পর থেকে বের হতে অন্যদেশগুলোকে কি করতে হবে?

-মুহম্মদ এস হাবীব

 বর্তমানে দুনিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সুপার পাউয়ার বলে দাবী করে। সে চায়, সবাই তাকে শীর্ষ মোড়ল মেনে তার পলিসি মেনে চলুক। কিন্তু কেউ তার পলিসির বিরুদ্ধে গেলে সে ক্ষেপে যায় এবং নানান প্যাচে ফেলে তার পলিসি মানতে বাধ্য করে। মার্কিনীদের দেয়া রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক যে কোন পলিসি না মানলেই সে ঐ দেশটির উপর চাপ তৈরী করে। এজন্য সহসাই কোন দেশ মার্কিনীদের পলিসির বিরুদ্ধে যেতে চায় না। কারণ গেলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের হাতে থাকা বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে তাকে ঘায়েল করবে। মার্কিনীদের এ সমস্ত অস্ত্রের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হলো অর্থনৈতিক অবরোধ (economic sanctions)। কিউবা, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, মায়ানমার, সিরিয়া কিংবা ইরানকে বিভিন্ন সময় তারা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে কাবু করেছে। লক্ষ্য করে দেখবেন, বাংলাদেশকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিক অবরোধের ভয় দেখায়, উদ্দেশ্য তাদের দেয়া পলিসি যেন বাংলাদেশ মেনে চলে। এর মাধ্যমে মূলত আমেরিকা বিশ্বজুড়ে তার মোড়লগিরি ঠিক রাখে। কারণ এখন আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। তাছাড়া যুদ্ধ করে মারামারি কাটাকাটি করে ক্ষমতা খাটানোর থেকে এভাবে অবরোধ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করা সহজ ও ঝামেলামুক্ত, যা স্বল্প খরচে করা সম্ভব।

 পাঠক ! ফিলিস্তিনে মুসলিম গণহত্যার কারণে ইসরাইল বা ইসরাইলপন্থীদের পণ্য বয়কটের বিষয়টি হয়ত জানেন। এটা আসলে সাধারণ মানুষের আন্দোলন। একই বিষয়টি যখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হয়, তখন সেটাকে আর বয়কট বলে না, হয়ে যায় অর্থনৈতিক অবরোধ। এক্ষেত্রে অবরোধ আক্রান্ত দেশটি বিদেশী যে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে পণ্য বিক্রি করে, সেই ব্যাংকটিকে না করে দেয়া হয় যেন, সে ঐ দেশের সাথে আর লেনদেন না করে। আসলে সম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগতরা সারা বিশ্বে প্রায় ২০০টি দেশের ১১ হাজার ব্যাংকের মধ্যে একটি আন্তঃব্যাংক নেটওয়ার্ক তৈরী করেছে, যাকে বলা হয় সুইফট। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি দেশ সহজে বৈদেশিক লেনদেন করে। আমেরিকা বা তার অনুগতরা যখন কাউকে অর্থনৈতিক অবরোধ দিতে চায়, তখন শুধু সুইফটকে বলে দেয় যেন, ঐ দেশটিকে সুইফট যেন ব্লক করে দেয়, মানে দেশটি তার নেটওয়ার্ক ব্যবহার বৈদেশিক লেনদেন না করতে পারে। একেই মূলত বলা হয়, অর্থনৈতিক অবরোধ বা economic sanctions।

 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধকে সামাল দিতে রাশিয়া সুইফটের বিকল্প তৈরীর কিছুটা চেষ্টা করেছে। যেমন রাশিয়া এসপিএফএস (SPFS) নামক সুইফেট বিকল্প সিস্টেম তৈরী করেছে। যদিও এখনও তা খুব বেশি অগ্রগতি লাভ করতে পারনি। এজন্য মার্কিনী সম্রাজ্যবাদের ক্ষপ্পর থেকে বাচতে হলে সুইফটের বিকল্প হিসেবে বিশ্বজুড়ে ব্যাংকগুলোর কার্যকরী নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরী করতে হবে, যার মাধ্যমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয় এড়িয়ে সহজে লেনদেন করা যাবে।

 আবার মার্কিনীদের ক্ষপ্পর থেকে বাচতে তাদের সম্রাজ্যবাদকে দুর্বল করার কথা ভাবছে অনেকে। এজন্য তাদের মুদ্রা ডলার যা, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়, তার বিকল্প ব্যবহারের কথাও চিন্তা করছে অনেকে। একে বলা হচ্ছে, ডি-ডলারাইজেশন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের জন্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ভিন্ন কোন মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তোলার এই ধারণাটিই হল ডি-ডলারাইজেশন।

 লক্ষণীয় এখানে মার্কিনীদের দুটি অস্ত্র সামনে আসছে। একটি- সুইফট, অন্যটি ডলার।

মূলতঃ সুইফট দিয়ে মার্কিনীরা অন্য দেশগুলোর উপর প্রভাব খাটায়।

অপরদিকে ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার করে আমেরিকা নিজেকে স্থায়ী করে, নিজের অতিরিক্ত খরচ সারা বিশ্বের উপর চাপিয়ে দেয়।

 আসলে সারা বিশ্বের উপর খররদারি করতে অর্থের প্রয়োজন। আমেরিকা যদি নিজে সেই খরচ বহন করতো, তবে তা এককভাবে সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন মোড়লগিরি ফলাতে ইচ্ছামত খরচ করে, পরে তা মুদ্রাস্ফীতি করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। আর আমরা যেহেতু ডলার ব্যবহার করি, তাই তাদের খরচের ভাগিদার আমরাও হই। আমরা নিজেদের খরচ বাড়িয়ে তাদের খরচ বহন করি। এভাবে ডলার ব্যবহার করে আমরা মার্কিন সম্রাজ্যবাদকে আরো শক্তিশালী করি, তাদের মোড়লগিরি পাকাপোক্ত করি। এজন্য মার্কিনীদের মোড়লগিরির অভ্যাস বন্ধ করতে ডলারের বিকল্প বা ডি-ডলারাইজেশনের বিকল্প নেই।

Comments