গান, অভিনয় আর খেলাধূলার আড়ালে নেশা, নারী ও জুয়া

গান, অভিনয় আর খেলাধূলার আড়ালে নেশা, নারী ও জুয়া

 গান, অভিনয় আর খেলাধূলার আড়ালে নেশা, নারী ও জুয়া

-গোলাম মুনজির মুহম্মদ গিয়াসউদ্দিন

 আজকাল বিনোদন বলতে মানুষ সবচেয়ে বেশি বুঝে ৩টি বিষয়কে।

১. গান-বাজনা

২. অভিনয় (নাটক, সিনেমা, মডেলিং)

৩ খেলাধূলা।

 অনেকে এদের নির্মল বিনোদনের দাবী করে। অনেকে তো বলেই ফেলে, সমাজকে অপরাধ মুক্ত করার জন্য এসব বিনোদনের দরকার।

 কিন্তু শুনতে মন্দ হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এই ৩টি বিনোদনের নামেই মানুষের মধ্যে যাবতীয় অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রবেশ করছে। ধ্বংস হচ্ছে সামাজিক কাঠামো, নষ্ট হচ্ছে নীতি-নৈতিকতা। এই তিনটি বিনোদনের নামেই মানুষের মধ্যে প্রবেশ করছে নেশা, নারী আর জুয়ার কার্যক্রম।

 উদাহরণস্বরূপ, গত কয়েকদিন আগে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো কোক স্টুডিও কনসার্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোক স্টুডিও কনসার্টের বেশ কিছু দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে স্পষ্ট দেখা, কনসার্টে আগত দর্শকরা কিভাবে গোগ্রাসে গাজা আর ইয়াবা সেবন করছে। মনে হচ্ছে, এটা গানের আসর না, গাজার আসর, যেখানে গাজা খাওয়ার পাশাপাশি ট্রেনিং দেয়া হয়। কোন নতুন ছেলে এসব আসরে গেলে ট্রেনিং পেয়ে গাজা খোর হতে বাধ্য। এতো গেলো দর্শকের কথা, কোক স্টুডিওর যে প্রধান ব্যক্তি হিসেবে এক গায়ক আছে, সেও একজন বড় মাপের নেশাখোর, যার বড় সময় কাটে নেশা নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে।

 আবার নাটক, সিনেমায় অভিনয় কিংবা মডেলিং এর কথা যদি বলেন, সেখানেও একই অবস্থা। এগুলো হচ্ছে এক ধরনের পতিতা বিজ্ঞাপন। আসলে নাটক-সিনেমা কিংবা বিজ্ঞাপন করে খুব একটা টাকা পয়সা পাওয়া যায়, তা নয়। কিন্তু একজন সাধারণ পতিতা যে পরিমাণ ইনকাম করে, সে যদি টিভি-সিনেমা কিংবা বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে পরিচিত হয়, তবে তার চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে তার ইনকামও বেড়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ। কোন সাধারণ মেয়েও যদি তাদের সাথে মিশে, তবে সেও দ্রুত এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। আবার এসব মডেল-অভিনেত্রীকে মিডিয়ায় প্রকাশ করে চাহিদা তৈরী করে সরকারী-বেসরকারী দুর্নীতিবাজদের কাছে পাঠায় কিছু অযোগ্য টেন্ডারবাজ। এসব নারীদের দিয়ে বাগিয়ে নেয় দেশের বড় বড় সব প্রজেক্ট। এতে দেশ ও জাতির উন্নয়নে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

 আবার খেলাধূলার কথা যদি বলেন, তবে খেলাধূলা মানেই জুয়া। বাস্তবে মাঠে যে পরিমাণ খেলা হয়, সেই খেলাকে কেন্দ্র করে তার থেকে অনেক বড় খেলা হয় জুয়ার আসরে। যার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খেলোয়াড়রাও অনেক সময় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ফেলে, সাজানো খেলা বা ম্যাচ ফিক্সিং, যার নাম। এছাড়া খেলাকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে চলে অনলাইন বেটিং। আপনার সন্তান যে ঘরের দরজা আটকে ঘরের ভেতর জুয়া খেলছে না, তা কিন্তু আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জে চায়ের দোকানগুলোতে খেলা কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে চলে জুয়ার আসর। এইসব জুয়ার আসরে কত তরুণ-বৃদ্ধ যে নিঃস্ব হয়েছে তা হিসেব নেই। অনেক ধার কর্য করে জুয়া খেলতে গিয়ে পরে ধার শোধ করতে না পেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বর্তমানে সমাজে জুয়ার ব্যাপক বিস্তারের জন্য দায়ী এই খেলাধূলা, যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

 এজন্য আসলে গান-বাজনা, অভিনয় কিংবা খেলাধূলাকে নির্মল বিনোদন ভাবার সুযোগ নেই। বরং সমাজকে নষ্ট করার জন্য এগুলো হচ্ছে একেকটি ব্রীজ বা সেতু, যাদের মাধ্যমে সমাজে নেশা, পতিতাবৃত্তি ও জুয়া প্রবেশ করে, ধ্বংস করে মানুষের নীতি নৈতিককতা, নষ্ট করে সমাজ, দেশ ও জাতি।

Comments