হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার মূর্তি নদী-খাল-বিলে ডুবানোয় পরিবেশ দূষণ, নির্বাক প্রশাসন

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার মূর্তি নদী-খাল-বিলে ডুবানোয় পরিবেশ দূষণ, নির্বাক প্রশাসন

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার মূর্তি নদী-খাল-বিলে ডুবানোয় পরিবেশ দূষণনির্বাক প্রশাসন

লেখা : ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান

 বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা পূজা শেষ হলে পূজার মূর্তিগুলো পুকুর, নদী-খাল-বিল বা সমুদ্রে ডুবানো হয়। কিন্তু এ ডুবানোয় মারাত্মক পরিবেশ দূষণ তৈরী হলেও এর প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

 মূলতঃ মূর্তি তৈরীতে বিপুল পরিমাণে রং ব্যবহার করা হয়, যেখানে থাকে লেড ক্যাডমিয়ামের মত বিষাক্ত ভারি ধাতু। এছাড়া মূর্তিতে ব্যবহৃত খরসহ বিভিন্ন পচনশীল বস্তু ব্যবহার করা হয়, যা পানিকে করে তুলে বিষাক্ত। এতে পানির অক্সিজেন হ্রাস পায়, মারা যায় মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী। এছাড়া বিষাক্ত ভারি ধাতু পানিতে মিশে মানুষের সংস্পর্ষে আসে, যা ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে।

 হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার মূর্তি পানিতে ডুবানোয় মারাত্মক দূষণ ঘটে এ বিষয়টি যে আমরা বলছি তা নয়, বরং খোদ হিন্দু রাষ্ট্র ভারতে এ দুষণ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোড়ন ঘটে। সংবাদে প্রকাশ, ২০১৯ সালে ভারত সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় গঙ্গা নদীতে মূর্তি ডুবানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দূর্গা পূজা, দীপাবলি, ছট ও সরস্বতী পূজায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। যেখানে বলা হয়, গঙ্গা বা তার কোনও উপনদীতে পূজার মূর্তির ডুবানো যাবে না। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। (তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বাংলা ট্রিবিউন, ০৫ অক্টোবর ২০১৯)

শুধু ভারত নয়, ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্য কোথাও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের পূজার মূর্তি নদী বা সমুদ্রে ডুবাতে পারে না। পরিবেশ দূষণ ঘটায় মূর্তি ডুবানোতে সেসব দেশে শক্ত নিষেধাজ্ঞা আছে। এজন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিকল্প পদ্ধতিতে মূর্তি পানিতে ডুবানো রীতি চালু আছে। যেমন, বালতি বা প্লাস্টিকের ছোট হাউস বানিয়ে সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজার মূর্তি ডুবিয়ে থাকে।

 অনেকে বলতে পারেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা তো সংখ্যালঘু, সামান্য মূর্তিতে কতটুকুই বা পরিবেশ দূষণ হবে?

 আসলে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যালঘু হতে পারে, কিন্তু দূর্গা পূজায় মূর্তির সংখ্যা কম নয়। যেমন, এ বছর বাংলাদেশে দূর্গা পূজার মণ্ডপের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। (সূত্র-দৈনিক সময়ের আলো, ২০ অক্টোবর, ২০২৩) একটি মণ্ডপে এক সেট এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩টি মূর্তি থাকে। যেমন- দূর্গা মূর্তি, গনেশ মূর্তি, মহিষাশুর মূর্তি, কার্তিক মূর্তি, লক্ষ্মী মূর্তি, শিবের মূর্তি, সরস্বতী মূর্তি, সিংহ মূর্তি, মহিষের মূর্তি, সরস্বতীর বাহন রাজহাস, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, কার্তিকের বাহন ময়ুর ও গনেষের বাহন ইদুর । সে হিসেবে ৩৩ হাজার মণ্ডপে মূর্তি সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ২৯ হাজার। এছাড়া অনেক মন্ডপে অতিরিক্ত মূর্তি থাকে। যেমন; বাগেটহাটে শিকদার বাড়িতে এক মণ্ডপে আছে ৫০১টি মূর্তি। সাতক্ষীরায় ঘোষপাড়া মণ্ডপে ১০১টি মূর্তি, ফরিদপুরের ধোপাডাঙ্গায় একটি মণ্ডপে তৈরী করা হয়েছে ৩ শতাধিক মূর্তি। আবার অনেক মন্ডপে মূর্তিগুলো অনেক লম্বা করে তৈরা করা হয়। যেমন- বাগেরহাটে একটি মূর্তির উচ্চতা প্রায় ৬৫ ফুট। সে হিসেবে, ৩৩ হাজার মণ্ডপে কমপক্ষে ১০-১২ লক্ষ মূর্তি তৈরী হওয়ার কথা। এই ১০-১২ লক্ষ মূর্তি বাংলাদেশের নদী, খাল, বিল, পুকুর, বা সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে, যার মাধ্যমে নদীগুলো ভরাট হচ্ছে, মূর্তিতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রং ও বিভিন্ন দ্রব্য পানিকে দূষণ করছে, মাছ মারা যাচ্ছে, সেই বিষাক্ত মাছ ও পানি ব্যবহার করে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।

 এ কারণেই বাংলাদেশে বিষয়টি সরকার প্রশাসনের নজরে আনা খুব জরুরী। বিশেষ করে নদী, খাল, বিল বা সমুদ্র দূষণ রোধে পরিবেশ মন্ত্রনালয়কে সেদিকে নজর দিতে হবে। ভারতের অনুরূপ বাংলাদেশেও আইন প্রণয়ন করতে হবে, নদী-খাল, বিল, পুকুর বা সমুদ্রে পূজার মূর্তি ডুবানোতে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে, কেউ ডুবালে শাস্তিস্বরূপ জেল-জরিমানার বিধান রাখতে হবে।

Comments