দূর্গা পূজার ছুটি নিয়ে কিছু কথা

Comments · 997 Views

দূর্গা পূজার ছুটি নিয়ে কিছু কথা

দূর্গা পূজার ছুটি নিয়ে কিছু কথা

লেখা: মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

দূর্গাপূজা উপলক্ষে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ মানুষ মুসলমান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মাত্র ১.৫%। মাত্র ১.৫% শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ৯৮% জনসংখ্যাকে বসিয়ে রাখা কতটুকু যৌক্তিক ? আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দূর্গা পূজার ছুটি হয় আরো ব্যাপক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে দূর্গা পূজার ছুটি হয় ৭-১৪ দিন। সামান্য সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর জন্য বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর পড়ালেখা বন্ধ করে রাখা হয়, যা খুবই পরিতাপের বিষয়।

এরপরও দেখা যায় পূজা আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দাবী করে, “মুসলমানরা ঈদের ছুটি ৩ দিন পেলে হিন্দুরা কেন পূজার ছুটি ৩ দিন পাবে না ? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবার জন্য সমানাধিকার নেই কেন ?”

আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ ধরনের দাবী অযৌক্তিক। কারণ বাংলাদেশে মূল ঈদের সাধারণ ছুটি ১দিন-ই হয়। বাকি যে ২ দিন ছুটি হয়, সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় ২ দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি দেয়া হয়। কারণ অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য ১ দিন ছুটি মোটেও যথেষ্ঠ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাষ্ট্র তা দিতে এক হিসেবে বাধ্য হয়। অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও সাধারণ ছুটি হিসেবে দূর্গা পূজার দশমীর দিন ১ দিন ছুটি পায়। তবে অষ্টমী ও নবমী অর্থাৎ আগের দুই দিন তারা ২ দিন ঐচ্ছিক ছুটি পায়। এছাড়া দূর্গা পূজা শুরু হয় দুই সপ্তাহ আগে মহালয়া নামক একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে, ঐদিনও তারা ঐচ্ছিক ছুটি পায়। আবার দূর্গা পূজার ৩ দিন পর হিন্দুদের লক্ষ্মী পূজা নামক আরেকটি পূজা থাকে, তখনও তারা ঐচ্ছিক ছুটি পায়। অর্থাৎ ১৭ দিনের মধ্যে পূজার জন্য মোট ৫ দিন ছুটি পায়, যেই সুবিধা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরাও তাদের দ্বীনি উপলক্ষে পায় না।

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এমন দাবি করলেও পাশ্ববর্তী হিন্দু রাষ্ট্র ভারতে এমন দাবী তারা করতে পারেনি। কারণে ভারতেও দূর্গা পূজা বা দশেরা উপলক্ষে সাধারণ ছুটি মাত্র ১দিন-ই। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকা নামক গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা তো আরো করুণ। তারা তাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্রিসমাস উপলক্ষে ছুটি ও ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিলেও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপলক্ষে বিন্দুমাত্র ছুটি দেয় না। সংখ্যালঘুরা আবেদন করে ব্যক্তিগতভাবে ছুটি নিতে পারে। কিন্তু সে সময় তাদের অফিস-আদালত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব খোলা থাকে। সমস্যা হচ্ছে, হিন্দু জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশে অধিক সুযোগ সুবিধা লাভের পরও সন্তুষ্ট হয় না, তথাকথিত গণতন্ত্র ও সমানাধিকারের কথা বলে আরো বেশি দাবী করে। কিন্তু যেসব দেশ কথাকথিত গণতন্ত্রের হোর্তা কর্তা, তাদের কিছু বলতে পারে না।

মূলতঃ বাংলাদেশের সংবিধানে সমানাধিকারের কথা যেমন বলা আছে, তেমনি একজনের বিশ্বাস অন্যজনের উপর চাপিয়ে দিতেও না করা আছে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে যেমন প্রচুর ঐচ্ছিক ছুটি পায়, তেমনি মুসলমানদেরও দ্বীনি উপলক্ষ্যগুলোতে মুসলমানদের ছুটি দেয়ার দাবী জানাই। পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গা পূজার ছুটি হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হোক। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছুটি মুসলমানদের উপর জোর চাপিয়ে দেয়া কখনই সংবিধান স্বীকৃত হতে পারে না।

Comments