ট্রান্সজেন্ডার পাঠ, একজন জামিল সাহেবের গল্প

Comments · 1484 Views

ট্রান্সজেন্ডার পাঠ, একজন জামিল সাহেবের গল্প

ক্লাস-৭ এ ট্রান্সজেন্ডার পাঠ, একজন জামিল সাহেবের গল্প

 

জামিল সাহেবের একটি মাত্র ছেলে, নাম তার শুভ। বিয়ের দেড় যুগ পর ৫০ বছর বয়সে ছেলের বাবা হয়েছেন। বহু শখের সন্তান, তাই পুত্রের চাওয়া-পাওয়ায় কোন কমতি রাখেন না। নিজে কষ্ট করে হলেও সন্তানের সব ইচ্ছা পূরণ করেন, ভর্তি করিয়েছেন রাজধানীর নামকরা স্কুলে। ইচ্ছা একমাত্র ছেলে মানুষের মত মানুষ হবে। ছেলেকে ভালো স্কুলে ভর্তি করতে পেরে জামিল সাহেব ও তার স্ত্রী বেশ খুশি। অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন, যাক এবার ছেলের একটা ভালো ভবিষ্যত হবে। ছেলেকে সময়মত স্কুলে আনা নেয়া স্বামী-স্ত্রী মিলেই করেন। ছেলে ক্লাস-৭ এ পড়ে, তারপরও একা একা ছাড়েন না, হাজার হোক একটা মাত্র সন্তান, কত সখ আল্হাদ আর আশা জড়িয়ে আছে সন্তানকে ঘিরে।

 

হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরে সন্তানে আচরণে কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলেন জামিল সাহেব। দুপুরেও ঠিক মত খায়নি শুভ, রাতেও না। শুধু আয়নার দিয়ে কেন যেন বার বার চেহারা দেখে। জামিল সাহেব ভাবেন, এই বয়সে বাচ্চারা একটু এমন করতে পারে, এতে চিন্তার কিছু নেই। হঠাৎ একদিন শুভ বাবাকে বলে বসে, “বাবা! বাবা! আমি কিন্তু একজন মেয়ে। ” এ কথা শুনে তাজ্জব হয় জামিল সাহেব। এটা আবার কেমন কথা বাবা? শুভ বলে- “আমাদের ক্লাসে আজ স্যার পড়িয়েছেন, আমাদের বইয়ে লেখা আছে, শরীফ থেকে শরীফার হওয়ার গল্প। আমরা পড়েছি, শরীরে ছেলেও হলেও মনে মনে মেয়ে হওয়া সম্ভব। শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়ে ছেলে-মেয়ে নির্ধারিত হয় না, মন দিয়ে হয়। মেয়েরা যেসব জিনিস পছন্দ করে, যেমন খেলাধূলা করে, আমার মধ্যেও তেমন স্বভাব আছে, তাই আমি এখন থেকে একজন মেয়ে।”

 

জামিল সাহেব শুভর কথা ঠিক বুঝে ‍উঠতে পারেন না। ভাবেন, ছেলে বোধহয় নতুন কিছু শিখছে। পরক্ষণের মনকে শান্ত করেন, স্কুলের বইয়ে যেহেতু আছে, স্যার যখন পড়াচ্ছেন, তাই সেখানে ভুল থাকার কথা না, নিশ্চয়ই ঠিকই আছে। খুব শিঘ্রই হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। জামিল সাহেব ছেলেকে বলেন, তোমার এত চিন্তা করার দরকার নাই। বইয়ে যা আছে, স্যার যা পড়াচ্ছেন, সেগুলো মনেযোগ দিয়ে পড়, পরীক্ষায় ভালো করলেই হবে। এই বলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলেন জামিল সাহেব।

 

দিনে দিনে শুভর আচরণ আরো পরিবর্তন হতে থাকে। মেয়েদের মত করে চুল আচড়ানো, হাটার ভঙ্গিমায় পরিবর্তন আনা, নরম সুরে কথা বলা এসব আচরণ যেন প্রকট হতে শুরু করেছে তার মধ্যে। বায়না ধরেছে মেয়েদের পোশাক কিনে দিতে হবে। স্কুলে যাওয়ার আগে মায়ের মেককাপ, লিপিস্টিকও ব্যবহার শুরু করছে সে। ছেলের আচরণে এমন পরিবর্তন দেখে চিন্তায় পরে যায় জামিল সাহেব ও তার স্ত্রী। হাজার হোক তাদের একমাত্র সন্তান, হঠাৎ করে কি হলো? সে তো শারীরিকভাবে পুরোপুরি পুরুষ। তাছাড়া এখন বয়ঃসন্ধী কাল, এখন তো ছেলের আরো পুরুষালী আচরণ স্পষ্ট হওয়ার কথা, কিন্তু সেটা না হয়ে হিজরাদের মত আচরণ শুরু করছে কেন?

 

স্কুলে ছেলেকে আনতে গিয়ে জামিল সাহেবের স্ত্রী ভাবীদের থেকে জানতে পারলেন, অনেক বাচ্চাই নাকি এখন এমন আচরণ শুরু করেছে। বাসায় তাদের এমন অসংলগ্ন আচরণে অভিভাবকরা বিরক্ত। প্রথমে বিষয়টি দুষ্টুমি হিসেবে নিলেও পরবর্তীতে অনেকের সমস্যা মিলে যাওয়াতে তারা এখন চিন্তায় পরে গেছেন। পরে খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, স্কুলের পাঠ্যবইয়েই নাকি এমনটা আছে। ক্লাসের শিক্ষকরা তাও পড়িয়েছেন, আর সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিছু শিক্ষার্থীর এমন আচরণ।

 

আবার শুধু শিক্ষকরাই পড়িয়ে শেষ হয়নি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে গ্রুপ ডিসকাশন করতে দেয়া হয়েছে। ফলে শিশু শিক্ষার্থীরা একজন অন্যজনকে ইচ্ছামত বিপরীত লিঙ্গ বানিয়ে দিচ্ছে। এতে অনেক বাচ্চা মানসিক অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নাচুনি বুড়ির মধ্যে ঢোল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কিছু শিক্ষক, যারা বাস্তব অভিজ্ঞতার নাম দিয়ে হিজরা সেজে শিক্ষার্থীদের এসব ট্রেনিং দিচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী এখন নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার, হিজরা বা তৃতীয় লিঙ্গ ভাবা শুরু করেছে।

 

বিষয়টি যে এতদূর গড়াবে তা ভাবতে পারেনি জামিল সাহেব ও তার স্ত্রী। কিছু বুঝে উঠার আগে শুভর উৎপাত আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। ক্লাসে তার কয়েকজন সঙ্গীও জুটেছে, যারা নিজেদের মেয়ে ভাবছে। সালোয়ার কামিজ পরা, চুলে মেয়েদের মত বেণী করা, ঠোঁটে লিপিস্টিক দেয়া, মাথায় টিপ দেয়া, অনুষ্ঠানে শাড়ি পরায় তারা গ্রুপ বেঁধেছে। ইতিমধ্যে তারা ফেসবুকে এমন কিছু গ্রুপের সাথে সংযুক্ত হয়েছে, যারা তাদের মতই। ক্লাসের শিক্ষকও বিষয়টি বেশ এপ্রিশিয়েট করেছেন, হিজরা বেশ ধরায় সেসব শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ত্রিভুজ পাচ্ছে খুব সহজে।

 

এদিকে শুভ আরেক বিপদে ফেলেছে, তার মেয়েরূপী একটা ছবি ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে আপলোড করে দিয়ে। এখন সব আত্মীয়-স্বজন ফোন করা শুরু করেছে, বলছে- “কিরে জামিল তোর একমাত্র ছেলে কি হিজরা হয়ে গেছে? তোর বংশ রক্ষা করবে কে এখন?” জামিল সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছেন না। সন্তানকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু সে বুঝতে চায় না। শুভ’র এক কথা, “আমি বইয়ে পড়েছি মনে মনে মেয়ে হওয়া আমার অধিকার। মাই বডি মাই চয়েজ। আমার বিষয়ে কথা বলার তোমরা কে?” সন্তানের এমন বেপরোয়া কথা শুনে আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরে জামিল সাহেবের। আর তাছাড়া শুভ মেয়েদের মত পোশাক পরে রাস্তায় প্রতিদিন এমন সব উদ্ভট ও অশ্লীল আচরণ করে, যার কারণে তিনি এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না। সবাই তাকে ছি ছি করে।

 

শুভ যত বড় হচ্ছে, সমস্যা তত প্রকট হচ্ছে। সে এখন ক্লাস-৯ এ পড়ে। জামিল সাহেব শুভর এক বন্ধুর থেকে খবর পেয়েছেন, পাশের এলাকা থেকে কয়েকটা হিজরা ও ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি নাকি শুভর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। কয়েকটা ছেলে নাকি শুভ’র সাথে কাপল বা জুটি বেধেছে। তাদের সাথে নাকি শুভ’র নাকি অনৈতিক সম্পর্ক। ট্রান্সজেন্ডার হলে নাকি এসব অনৈতিক কাজ করতে হয়।

 

একমাত্র পুত্রের এমন অধঃপতনের কথা শুনে জামিল সাহেবের স্ত্রী হার্ট অ্যাটাক করে তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করেন। জামিল সাহেবও অসুস্থ। বেঁচে থাকা তার কাছে এখন অর্থহীন মনে হয়। ভাবেন, কত শখ ছিলো একটা মাত্র ছেলে নিয়ে। কিন্তু তার এই অধঃপতন। মৃত্যুর পর সবার সন্তান বাবা-মার জন্য দোয়া পাঠাবে, আর আর আমার সন্তান আমার মৃত্যুর পর দোয়া নয়, পাপের বোঝা পাঠাবে, এই ভেবে তিনি কাঁদতে থাকেন। ভাবেন, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এসব অনৈতিক ও কুৎসিত বিষয় শিক্ষা দেয়ায় আজ তার সন্তানের এ অবস্থা। সন্তানকে তিনি স্কুলে দিয়েছিলেন, মানুষের মত মানুষ করার জন্য, কিন্তু সেই স্কুলে পাঠ্যবই থেকে এমন জঘন্য বিষয় পড়ানো হয়েছে যে, তার সন্তান মানুষ না হয়ে অমানুষ ও পশু হয়ে গেছে। মনের অজান্তেই পাঠ্যবই প্রণেতাদের জন্য বদ দোয়া আসতে থাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে অবিরাম অভিশাপ দিতে থাকেন তিনি।

 

উপরের গল্পটি কাল্পনিক। কিন্তু অবশ্যম্ভাবী। বর্তমান পাঠ্যবইয়ে কোমলমতি শিশুদের যেভাবে ট্রান্সজেন্ডার বা মানসিক জেন্ডার শেখানো হচ্ছে, তাতে শিশুদের বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। একটা কোমলমতি শিশু এসব আজগুবি কথা পড়ে যদি নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বা বিপরীত লিঙ্গ ভাবা শুরু করে, তবে তার দায় নেবে কে? সে যদি মানসিক বিকৃত হয়ে সমকামী হয়ে যায়, তবে তার দায় নেবে কে? তাই অভিভাবকদের বলবো, সময় থাকতে সচেতন হোন, আপনার সন্তানকে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে কি পড়ানো হচ্ছে তার খবর নিন, পাঠ্যবইয়ে কুৎসিত পাঠের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, একত্র হয়ে দাবী তুলুন, আমাদের সন্তানের পাঠ্যবইয়ে এসব কুৎসিত পাঠ থাকতে পারবে না। অবশ্যই বাদ দিতে হবে।

Comments