বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক

Comments · 625 Views

বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক

বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক

  • মুহম্মদ আরিফুল খবির

 গত ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে পালিত হলো বিশ্ব আরবী ভাষা দিবস। জাতিসংঘের ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতি ১৮ই ডিসেম্বর এই দিবসটি পালিত হয়। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ ও সেন্টার ফর অ্যারাবিক টিচিং ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ এর উদ্যোগে বেশ কিছু কার্যক্রম হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ।

 উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাতৃভাষা বাংলার পর ইংরেজী ভাষাকে বাধ্যতামূলক ভাষা হিসেবে শেখানো হয়। তবে আরবী ভাষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশীদের জন্য আরবী ভাষায় শিক্ষা অত্যন্ত দরকার ছিলো। দ্বীনি কারণ তো অবশ্যই, দুনিয়াবী কারণেই আরবী ভাষা বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক করা জরুরী। কারণ বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির একটা বড় অংশ হয় আরবী ভাষাভাষী মাধ্যপ্রাচ্যে এবং বিদেশ থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রার সিংহ ভাগ আসে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরাত ও ওমান থেকে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরবী ভাষাকে বাধ্যতামূলক ভাষা হিসেবে শিক্ষা দেয়া হতো, তবে বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি আরবীতে অভ্যস্ত হতো। এতে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া জনশক্তি অনেক বেশি দক্ষ হতো এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স অনেক বাড়তো। কিন্তু সে হিসেব করে স্কুল-কলেজে আরবী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ থেকে বুঝা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার কোন সংযোগ নেই।

 কিছুদিন আগে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এক বক্তব্যে বলেছিলেন, “ভারতীয়রা বাংলাদেশীদের থেকে ভালো আরবী ভাষা পারে।”  আমরা জানি, ভারতেরও রেমিটেন্সের এক বড় উৎস হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয়রা ভালো কিছু পদ দখল করে রেখেছে। তারমানে বুঝা যাচ্ছে, ভিন্ন ধর্মের হওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয়রা আবরী ভাষায় দক্ষতার কারণে উপরে উঠতে পারছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আরবি ভাষাকে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরত্ব না দেয়ায় ভারতীয়দের সাথে ভাষার দক্ষতায় পেরে উঠছে না, বাড়াতে পারছে না রেমিটেন্স প্রবাহ।

 উল্লেখ্য বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে ইংরেজী ভাষাকে যে পরিমাণে গুরুত্ব দেয়া হয়, ইংরেজী ভাষা সেই পরিমাণ গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য কি না, সেটা আলোচনার বিষয়। গুরুত্ব দেয়ার একটা কারণ সম্ভবত বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল ইউনিভার্সিটির অনেক পাঠ এখনও ইংরেজী ভাষায় রয়েছে। কিন্তু সেই পাঠগুলো যদি বাংলায় অনুবাদ করা হতো, তবে স্কুল-কলেজে ইংরেজী ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব অনেকটাই হ্রাস পেতো। আসলে বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঠিক, কিন্তু সেই অনুসারে আমরা নিজেদের মাতৃভাষাকে ঠিকমত গুরুত্ব দিতে পারেনি, নিজ দেশের উচ্চশিক্ষাকে মাতৃভাষায় সরবরাহ করতে পারিনি, বরং ইংরেজদের রেখে যাওয়া ভাষাকেই মাথায় তুলে রেখে দিয়েছি।

 অনেকে অবশ্য ইংরেজীকে গুরুত্ব দিতে বলে, আন্তর্জাতিক ভাষার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সকল রাষ্ট্রে ইংরেজী ভাষার প্রচলন নেই। এমনকি খোদ ইউরোপের অনেক রাষ্ট্রে ইংরেজী ভাষা নেই। এছাড়া চায়না, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়াতে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা ঐ দেশের ভাষা শিখে যায়। সে হিসেবে ইংরেজী ভাষী কোন রাষ্ট্রে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীরা ইংরেজী ভাষা আলাদা করে শিখে নিতে পারে।

 তবে যদি কর্মক্ষেত্রের বিবেচনাই করতে হয়, তবে ইংরেজীর থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব পাওয়ার দাবী রাখে আরবি ভাষা। কারণ আরব বিশ্বের ২৫টি দেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশে তা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ দেশগুলোতেই বাংলাদেশীদের যাতায়াত সবচেয়ে বেশি এবং রেমিটেন্সও আসে বেশি। তাই দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতেই বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে আরবী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা সময়ের দাবী।

Comments