নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ تَعَالـٰى قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُّوْرِهٖ فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَعَالـٰى

অর্র্থ: “হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম আপনার যিনি মহাসম্মানিত নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ইত্যাদি)

হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-

فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.

অর্থাৎ আপনারা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তারা (অন্য লোকেরা) ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারে তাহলে তারা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ : আয়াত শরীফ ১৩৭)

এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!



(১৯)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন আবু জাহেলকে হত্যা করতে না পারলে বাড়িতে জায়গা দেয়া হবে না!



হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি হচ্ছে একজন আনছার মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। উনার সাত ছেলে। বড় ছেলের বয়স বড়জোর ১৫-১৬ হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভাল, উঁচা-লম্বা, দাড়ি-মোচ তখনো উঠে নাই। বদর জিহাদের সময় তিনি উনার বড় ছেলে আর দ্বিতীয় ছেলের সাথে চুক্তি করলেন যে, এরকম আমরা শুনেছি যে, আবূ জাহিল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। এ জিহাদে সে আসলে তাকে হত্যা করতে হবে। উনার দুই ছেলের সাথে উনি চুক্তি করলেন। উনার বাকি ছেলেরা আরো ছোট। তিনি উনার দুই ছেলের সাথে চুক্তি করলেন যে, আপনারা জিহাদে যাবেন এবং আবূ জাহিলকে হত্যা করবেন। আপনারা যদি শহিদও হয়ে যান, এতে আমার কোনো দাবি নাই। কিন্তু আবূ জাহিলকে যদি হত্যা করতে না পারেন তাহলে আপনাদের আমার বাড়িতে জায়গা নাই, এখানে আসতে পারবেন না। তাকে হত্যা করতে গিয়ে যদি আপনারা শহিদ হয়ে যান, শহিদ হয়ে যাবেন। কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতে হবে শর্ত।

উনারা জিহাদে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেকের জিহাদে দাঁড়ানোর জায়গা ঠিক করে দিলেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুব বড় পালোয়ান, উনার দুই পাশে দুইজনকে দাঁড় করিয়েছেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই পরবর্তীতে বর্ণনা করেছেন যে, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, দেখলাম আমার দুই পাশে দুইজন ছেলে, দাড়ি নাই, মোচও নাই। এই দুই ছেলে কী জিহাদ করবে! আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, তাহলে আমার নিরাপত্তাটা কেমন হবে? আমাকে যদি আক্রমণ করে তাহলে আমি কতটুকু প্রতিহত করতে পারবো? উনি চিন্তা করতেছেন।

যুদ্ধ তখনো শুরু হয়নি। তখন ডান পাশ থেকে একজন ছেলে যিনি আসলেন, উনি এসে কানে কানে বললেন, চাচা- আবূ জাহিল কোনটা? তো উনি বললেন, আপনি আবূ জাহিল দিয়ে কী করবেন? বাচ্চা মানুষ, হ্যাঁ? আবূ জাহিল তো বড় পালোয়ান। উনি বলতেছেন- আমি আমার সম্মানিত মা উনার সাথে চুক্তি করেছি। কী চুক্তি করেছেন? যে, আবূ জাহিলকে যেভাবেই হোক হত্যা করতেই হবে। আবূ জাহিলকে হত্যা না করতে পারলে আমার বাড়িতে জায়গা নাই, আর আমি যদি শহিদও হয়ে যাই তাতেও কোনো অসুবিধা নাই, কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে। যখন তিনি এ কথা বললেন, তখন আমি ভালো করে দেখলাম উনার চেহারা-ছূরত। চিন্তা করলাম- সর্বনাশ, অনেক সাহস। উপযুক্ত ছেলে। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি থাকেন, আমি দেখিয়ে দিবো। বলে উনাকে বসিয়ে দিলেন। আবার ঠিক বাম দিক থেকে আবার আরেক ছেলে আসলেন। এসে বললেন, চাচা- আবূ জাহিল কোনটা? তো উনি আবার উনাকে বললেন, হ্যাঁ? আপনি আবূ জাহিল দিয়ে কী করবেন? আবূ জাহিল তো অনেক বড় পালোয়ান। উনি একই কথা বললেন যে, আমি আমার সম্মানিত মা উনার সাথে চুক্তি করেছি। কী চুক্তি করেছেন? চুক্তি হলো যে, আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে, তাতে আমি যদি শহীদ হয়ে যাইও তাতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু তাকে হত্যা না করতে পারলে বাড়িতে আমার যাওয়া যাবে না। তাকে হত্যা করতেই হবে আমাকে।

এটা যখন উনি বললেন, তা উনি শুনে খুব আশ্চর্য হলেন। আবার ভাল করে দেখলেন। উনি বললেন, তখন আমার মনে খুব সাহস হলো যে, হ্যাঁ, আমার দুই পাশে দুইজন উপযুক্ত লোক আছে। এত সাহসী লোক তো পাওয়া যায় না। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই যখন যুদ্ধ শুরু হলো আবূ জাহিলকে দেখা গেলো, তখন উনি ইশারা দিলেন যে, ঐযে আবূ জাহিল। উনার বক্তব্য হচ্ছে, বলার সাথে সাথে মনে হয় একটা বাজ পাখি চড়–ইকে যেভাবে থাবা দিয়ে ধরে। দুইজন এত দ্রুত গেলেন যে, কল্পনাও করা যায় না। গিয়ে ঠিকই আবূ জাহিলকে ধরাশায়ী করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের একজনকে আক্রমণ করেছিলো আবূ জাহিলের ছেলে হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান আনেননি)। উনার একটা হাত কেটে ঝুলে গেছে। অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, এটা কেটে ফেলে দিন। তিনি বললেন, না আমি এটা ফেলবো না। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে যাবো, উনি যা বলেন।

তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘটনা জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, উনি সব বিস্তারিত বললেন। উনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কাছে আসেন। উনি ধরে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। তখন উনি বলতেছেন, এতে আমার হাতটি আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

ওই জিহাদে উনাদের দুই ভাইয়ের একজন শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু আবূ জাহিলকে উনারা ঠিকই হত্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

খুব চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কেমন ছিলেন, উনাদের সম্মানিত ঈমান মুবারক কেমন ছিলো, উনাদের ছহীহ সমঝ কি রকম ছিলো! একজন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যুদ্ধে যেতে পারছেন না। কিন্তু তিনি উনার দুই কিশোর ছেলেকে জিহাদে পাঠিয়ে দিলেন। চুক্তি করলেন, আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে। যদি উনারা দুইজন শহীদ হয়ে যান, হয়ে যাক কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতে হবে। কেনো? সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবী করেছে। তাহলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বতটা কেমন ছিলো! উনারা তাহলে কতটুকু বুঝতে পেরেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান-মান মুবারক কতটুকু! যে, উনার জন্য সমস্ত কিছু কুরবান করতে হবে, সবসময় দিতে হবে, মাল দিতে হবে, জান দিতে হবে, সবকিছু দিয়ে দিতে হবে। এবং উনারা তা-ই করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

আলোকিত সম্মানিত মহিলা ছাহাবী:
হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার গৌরবজ্জল স্বর্ণালী ইতিহাসে বিশিষ্ট মহিলা ছাহাবী হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ, সাহসী এবং অবিচল ছিলেন।

ছহীহ মুসলিম শরীফ থেকে সিয়ারুছ ছাহাবীয়ায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনার আহাল পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বের কথা। তিনি একটি বৃক্ষের পূজা করতেন। হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর আহালকে নানাভাবে বুঝাতে থাকেন যে, মাটির বুক চিরে যে গাছের জন্ম হয়, তা কিভাবে খোদা হতে পারে?

হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনার দাওয়াতে ধীরে ধীরে উনার আহালের মন প্রভাবিত হয় এবং এক পর্যায়ে তিনি মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।

ছিয়ারুস ছাহাবীয়ায় উল্লেখ রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্যে অর্থ ব্যয়ে হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা অগ্রগামী ছিলেন।

ছহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, একবার হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারকে মহাপবিত্র মহাসম্মানিত মসজিদে নববী শরীফে সমবেত লোকদের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে আর্থিক সাহায্য সংগ্রহ করছিলেন। পবিত্র মসজিদের এক পার্শ্বে সমবেত সম্মানিত হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা এটা টের পেয়ে নিজেদের কানের দুল, হাতের চুড়ি এবং অন্যান্য অলঙ্কারাদি খুলে খুলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পেশ করতে লাগলেন।

মোটকথা, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রচারে হযরত মহিলা ছাহাবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা পূর্ণ উৎসাহ-উদ্দীপনা, জজবার সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি রিযামন্দী মুবারক হাছিল করার জন্য সদা সর্বদা জান ও মাল দিয়ে খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেন। উনারা নিজ নিজ আহাল, ভৃত্য, বাঁদী, গোলাম, আতœীয়-স্বজন, সাক্ষাৎপ্রার্থী ও বান্ধবীদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণে উৎসাহ দেন ও সহযোগিতা করেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দয়া দান ইহসান মুবারক করে সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার মুবারকে জান ও মাল দিয়ে খিদমত করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

চিরুনী ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক

চিরুনী হলো মাথা পরিপাটি ও সুন্দর করার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক (মহাসম্মানিত চুল মুবারক) উনার পরিচর্যার জন্য নিয়মিত চিরুনী করতেন এবং মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক (মহাসম্মানিত চুল মুবারক) বিন্যাস করতেন।

মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারকে (মহাসম্মানিত মাথা মুবারকে) অধিক পরিমাণে তেল মুবারক ব্যবহার করতেন এবং নূরুন নি‘য়ামাহ মুবারক (মহাসম্মানিত দাড়ি মুবারক) চিরুনী মুবারক দিয়ে আচড়াঁতেন।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই এবং উনাদের অনুসরণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা চিরুনী দিয়ে মাথা আচড়াতেন এবং পরিপাটি থাকতেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّه كَانَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ مَا اسْتَطَاعَ فِيْ تَرَجُّلِه وَوُضُوْئِه

অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা মুবারক করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিরুনী দিয়ে মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক (মহাসম্মানিত চুল মুবারক) আঁচরাতে ও ওযূ মুবারক করতে যথাসাধ্য ডানদিক থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ اطَّلَعَ رَجُلٌ مِنْ جُحْرٍ فِي حُجَرِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِدْرًى يَحُكُّ بِهِ رَأْسَهُ فَقَالَ ‏"‏لَوْ أَعْلَمُ أَنَّكَ تَنْظُرُ لَطَعَنْتُ بِهِ فِي عَيْنِكَ، إِنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ

অর্থ: হযরত সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক লোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন এক মহাসম্মানিত হুজরা শরীফে উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে একটা ‘মিদরা’ মুবারক বা চিরুনী মুবারক ছিল, যা দিয়ে তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত মাথা মুবারক) চুলকাচ্ছিলেন বা আঁচড়াচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের হুকুম দেয়া হয়েছে। (বুখারী শরীফ: ৬২৮১)

কোন কোন র্বণনায় হাতির দাঁতের চিরুনী ব্যবহার করার কথা উল্লেখ রয়েছে। আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

كان النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يحب التيمن طهوره وترحله وتنعله

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতা অর্জন করতে, (অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন শিক্ষা দিতে) মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত মাথা মুবারক) আচঁড়াতে ও মহাসম্মানিত না’লাইন শরীফ বা মহাসম্মানিত স্যান্ডেল মুবারক মহাসম্মানিত নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারকে) দিতে ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন।

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

كان النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يحب التيمن طهوره وترحله وتنعله

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতা অর্জন করতে, মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত মাথা মুবারক) আচঁড়াতে ও মহাসম্মানিত না’লাইন শরীফ বা মহাসম্মানিত স্যান্ডেল মুবারক মহাসম্মানিত নূরুদ দারাজাত মুবারকে (মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারকে) দিতে ডান দিক থেকে আরম্ভ করতেন।

আর চিরুণী ব্যবহার করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক।

কাজেই একথা সুষ্পষ্ট ও গ্রহণীয় যে, চিরুণী ব্যবহার করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক।

মাটির পাত্র ব্যবহার করাও মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক

মাটির ঘড়া-মাটির পাত্র বা মাটির পানির পাত্র মুবারক

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কখনো মাটির পাত্র বা মাটির পানির পাত্র মুবারক ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ মাটির পাত্রে খাদ্য খাওয়া ও পানীয় পান করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

মাটির পাত্র ব্যবহার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَت سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ رضي الله عنه أَنَّ أَبَا أُسَيْدٍ السَّاعِدِيَّ رضي الله عنه دَعَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي عُرْسِهِ، وَكَانَتِ امْرَأَتُهُ خَادِمَهُمْ يَوْمَئِذٍ، وَهِيَ الْعَرُوسُ، فَقَالَتْ أَوْ قَالَ أَتَدْرُونَ مَا أَنْقَعْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ أَنْقَعْتُ لَهُ تَمَرَاتٍ مِنَ اللَّيْلِ فِي تَوْرٍ

অর্থ: হযরত সাহল ইবনে সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হযরত আবূ উসাইদ সাইদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসর রাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দাওয়াত দিলেন। উনার নববধূ সেদিন উনাদের আহার পরিবেশন করেন। উনার আহলিয়া বলেন, আপনারা কি জানেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সেদিন আমি ছিলে-চেঁছে কি পরিবেশন করেছিলাম? রাতের বেলা আমি উনার জন্য টাটকা খেজুর একটি ‘মাটির পাত্রে’ ভিজিয়ে রেখেছিলাম। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আদাবুল মুফরাদ শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৭৫১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَت أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَقَامَ مَنْ كَانَ قَرِيبَ الدَّارِ إِلَى أَهْلِهِ، وَبَقِيَ قَوْمٌ، فَأُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ فِيهِ مَاءٌ، فَصَغُرَ الْمِخْضَبُ أَنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ، فَتَوَضَّأَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ‏.‏ قُلْنَا كَمْ كُنْتُمْ قَالَ ثَمَانِينَ وَزِيَادَةً‏.‏

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নামাযের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ি নিকটে ছিল উনারা (উযূ করার জন্য) বাড়ি চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (উনাদের কোন উযূর ব্যবস্থা ছিল না)। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য একটি ‘পাথরের পাত্রে’ পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে উনার উভয় হাত মেলে দেয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই ক্বওমের সকল লোক উযূ করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: ‘আপনারা কতজন ছিলেন’? তিনি বললেনঃ ‘আশিজন বা তারও কিছু অধিক। (বুখারী শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পানি রাখার জন্য মাটির বড় পাত্র, মাঝারি মাটির পাত্র বা মাটির পানির পাত্র এবং ক্ষেত্রবিশেষে পাথরের পাত্রও ব্যবহার করতেন এবং তা থেকে নিরাপদে পানি পান করতেন এবং ব্যবহার করতেন। সুবহানাল্লাহ!



প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক হলো, সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত সুন্নত মুবরাক উনার ইত্তেবা করা। মহাসম্মানিত সুন্নতী দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার করা। তবেই সর্বপ্রকার নিয়মত-রহমত মুবারক লাভ করা সহজ ও সম্ভব।

বান্দা-বান্দী, উম্মত যাতে মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালনের মাধ্যমে সহজেই সেই রহমত-বরকত মুবারক লাভ করতে পারে, সেজন্য খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র।

এখানে, সকল প্রকার মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্য, মহাসম্মানিত সুন্নতী পোশাক, মহাসম্মানিত সুন্নতী দ্রব্য সামগ্রী পাওয়া যায়। আমাদের দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র থেকে সকল প্রকার মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্য, মহাসম্মানিত সুন্নতী পোশাক, মহাসম্মানিত সুন্নতী দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় বা সংগ্রহ করা।

কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৩)

সুওয়াল:

বর্তমানে তথাকথিত ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ কঠিন ভয়াবহ ফিতনার সম্মুখীন হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক ফায়ছালা কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।



জওয়াব (ধারাবাহিক):

ট্রান্সজেন্ডারের ভয়াবহ পরিণাম:

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)

বিশ্বখ্যাত হানাফী ফক্বীহ্ হযরত ইমাম আবুল ফযল আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমূদ মূছেলী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

اَللِّوَاطَةُ اَنَّهَا كَالزِّنَاৃ وَقَدْ تَمَحَّضَ حَرَامًا فَيَجِبُ الْحَدُّ كَالزِّنَا وَالصَّحَابَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمْ اَجْمَعُوْا عَلٰى وُجُوْبِ الْحَدِّ فِيْهَا لٰكِنِ اخْتَلَفُوْا فِيْهِ قَالَ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقُ الْاَكْبَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يُحْرَقُ بِالنَّارِ وَقَالَ اِمَامُ الْاَوَّلِ سَيِّدُنَا حَضْرَتْ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَيْهِ حَدُّ الزِّنَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ يُحْبَسَانِ فِىْ اَنْتَنِ مَوْضِعٍ حَتّٰى يَمُوْتَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ يُهْدَمُ عَلَيْهِمَا جِدَارٌ وَقَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يُنَكَّسُ مِنْ مَّكَانٍ مُّرْتَفَعٍ

অর্থ : সমকামিতা জিনা বা ব্যাভিচারের ন্যায় জঘন্য অপরাধ। এটা সম্পূর্ণরূপে হারাম। সমকামিতার হদ বা শরঈ শাস্তি হচ্ছে জিনা বা ব্যাভিচারের শাস্তির অনুরূপ। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সমকামিতার শরঈ শাস্তি মৃত্যুদ- হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তবে কিভাবে তার শাস্তি কার্যকর হবে, সেই বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, উভয়কে আগুনে পুড়িয়ে তাদের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, জিনা বা ব্যাভিচারের শাস্তির ন্যায় শাস্তি দিয়ে উভয়ের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। উনাদের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত উভয়কে দুর্গন্ধযুক্ত জায়গায় বন্দী করে রাখা হবে। আবার উনাদের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের উভয়ের উপর একটি প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে তাদের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, তাদের উভয়কে একটি উঁচু স্থান থেকে নিক্ষিপ্ত করে শরঈ শাস্তি মৃত্যুদ- কার্যকর করা হবে। (অর্থাৎ তাদেরকে কঠিনভাবে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে শরঈ শাস্তি মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হবে।)” (আল ইখতিয়ার লি তা’লীলিল মুখতার ৪/৯১)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِىْ قَوْمٍ قَطُّ حَتّٰى يُعْلِنُوْا بِهَا اِلَّا فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ وَالْاَوْجَاعُ الَّتِىْ لَمْ تَكُنْ مَّضَتْ فِىْ اَسْلَافِهِمُ الَّذِيْنَ مَضَوْا

অর্থ : যখনই কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার সম্প্রদায়ের ফাহিসামূলক কাজ সমকামিতা ব্যাপক হবে, তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। না‘ঊযুবিল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ)

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (৩য় পর্ব)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চূড়ান্ত কবুলিয়াতে বিষয়টি পরিস্ফুটিত হয়েছে। যার কারণে উনাদের ইখতিলাফও হিদায়েতের কারণ এবং তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে উনাদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষ-ত্রুটি বা উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা (যদিও উনাদের কোন দোষ-ত্রুটি নেই), উনাদেরকে দোষারোপ করা, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।

এদের সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيَأْتِيْ قَـوْمٌ يَسُبُّـوْنَـهُمْ وَيَـنْـتَقِصُوْنَـهُمْ فَلاَ تُجَالِسُوْهُمْ وَلاَ تُـؤَاكِلُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُـوْهُمْ ,وَلَا تُـنَاكِحُوْهُمْ وَفِىْ رِوَايَةٍ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ وَلَاتَدْعُوْلَهُمْ

অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিবাহ-শাদীর ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পেছনে নামায পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না।”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَيْـتُمُ الَّذِيْنَ يَسُبُّـوْنَ أَصْحَابِيْ فَـقُوْلُوْا: لَعْنَةُ اللهِ عَلَى شَرِّكُمْ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক।” (তিরমিযী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عَنْ حَضْرَتْ عُوَيْمِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ اخْتَارَنِيْ، وَاخْتَارَ لِيْ أَصْحَابًا، فَجَعَلَ لِيْ بَيْنَهُمْ وُزَرَاءَ، وَأَنْصَارًا، وَأَصْهَارًا، فَمَنْ سَبَّـهُمْ فَـعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لا يُـقْبَلُ مِنْهُ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ"

অর্থ: “হযরত উয়াইম ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)

বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “ইসাবা” কিতাবের ১ম খ-ে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ যারআ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিম্নোক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন-

اِذَا رَاَيْتَ الرَّجُلَ يَـنْقِصُ اَحَدًا مِّنْ اَصْحَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاعْلَمْ اَنَّهٗ زِنْدِيْقٌ

অর্থ: “যখন কাউকে দেখবে যে, সে কোন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবমাননা করছে, তখন তুমি জানবে, সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির।”

ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ

হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বেমেছাল মর্যাদার অধিকারী (৭)

পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ১৩ নম্বর আয়াত শরীফ:

যিনি খ্বলিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَوْلا جَاؤُو عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاء فَأُوْلَئِكَ عِندَ اللهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ.

অর্থ : তাহলে তারা (মুনাফিক্বরা) কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করল না? অতঃপর তারা সাক্ষী উপস্থিত করতে পারেনি, (মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিচ্ছেন, মুনাফিক্ব ও কাফিরগুলো) তারাই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কঠিন মিথ্যাবাদী (হিসাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হয়েছে)।” নাঊযুবিল্লাহ!

এখনও যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলছে, চু-চেরা, কীল-কাল করছে তারাও কাট্টা মিথ্যাবাদী হবে, জালিম হবে, জাহান্নামী হবে। নাঊযুবিল্লাহ! যখন মুনাফিক ও কাফির মুশরিকরা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারকে চু-চেরা, কীল-কাল করেছিল তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অনেকেই ছিলেন, উনারা অনেকেই চুপ হয়ে গেছেন, বুঝতে পারেননি। আবার অনেকে প্রতিবাদও করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু যারা উনাদের সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছিল তারা চরম মিথ্যাবাদী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ১৪ নম্বর আয়াত শরীফ: যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَوْلا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.

অর্থ : যদি তোমাদের প্রতি ইহকাল ও পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফযল ও রহমত মুবারক না থাকতো, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, সেজন্য তোমাদেরকে কঠিন আযাব স্পর্শ করতো। নাঊযুবিল্লাহ! (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পবিত্রতা মুবারক উনার খিলাফ অপবাদ শুনার পরও প্রতিবাদ না করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে তোমাদের উপর কঠিন আযাব-গযব নেমে আসতো। নাঊযুবিল্লাহ!)”

অর্থাৎ এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যারা মুনাফিক তারা তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে এ বিষয় অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন, অনেকে চুপ ছিলেন, অনেকের বুঝতে সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। সেটাই বলা হয়েছে, যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক ইহকাল পরকালে আপনাদের উপর না থাকতো, যে আমলে আপনারা জড়িত হয়ে গেছেন, লিপ্ত হয়ে গেছেন, অবশ্যই আপনাদেরকে কঠিন আযাব-গযব স্পর্শ করতো। নাঊযুবিল্লাহ!

পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ১৫ নম্বর আয়াত শরীফ: যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِندَ اللهِ عَظِيمٌ.

অর্থ : (তোমরা জেনে রাখ) যখন তোমরা তোমাদের মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে (মুখ দিয়ে চর্চা করেছিলে)এবং তোমরা জবান দিয়ে এটা প্রচার করেছিলে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ (তোমাদের বলা উচিত ছিলো) এ বিষয় তোমাদের (অর্থাৎ আমাদের) কোন ইলিম-কালাম নেই। তোমরা এই বিষয়টিকে হাল্কা মনে করেছিলে, অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে এটি একটি অত্যন্ত কঠিন অপরাধ, কঠিন কবীরাহ গোনাহ। (তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কোন কথা বলা আমাদের উচিত নয়)।”

অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখ, তোমরা কিন্তু তোমাদের মুখ দিয়ে অনেকবার চর্চা করেছ, আলোচনা করেছ, তোমরা সেটা মানুষের কাছে বারবার বলেছ, তোমরা তোমাদের মুখ দিয়ে প্রচার করেছ, ওয়াসওয়াসা দিয়েছ। নাঊযুবিল্লাহ! যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এই শব্দ মুবারক দু’বার এনেছেন إِذْ تَلَقَّوْنَهُ অর্থ মুবারক: বারবার বলা। بِأَلْسِنَتِكُمْতোমাদের জবান দিয়ে। تَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم তোমাদের মুখ দিয়ে এটা প্রচার করেছ। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ তোমাদের বলা উচিত ছিলো, তোমাদের এ বিষয় কোন ইলিম-কালাম নেই। তোমরা কিন্তু সেটা বলোনি। নাঊযুবিল্লাহ!

image

হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানানো নিষেধ

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلاَ تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَـذَا حَلاَلٌ وَهَـذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُواْ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللّهِ الْكَذِبَ لاَ يُفْلِحُونَ

অর্থ: তোমাদের মুখ থেকে সাধারণত যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে। তেমনিভাবে তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বলো না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনোই কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ! (সূরা নাহল শরীফ: আয়াত শরীফ ১১৬)

মূলত যারা হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করবে তারা কখনোই সফলতা অর্জন করতে পারবে না। তাদের ধ্বংস অনিবার্য। নাঊযুবিল্লাহ!

image