মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় পবিত্র কালাম পাক উনার অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বান্দা-বান্দীদের কাজ-কর্ম সম্পাদন করার ব্যাপার তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেছেন। বরং চিন্তা-ভাবনা করে ধীরস্থিরতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ মুবারক করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْاٰنِ
অর্থ : পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করো না। (পবিত্র সূরা ত্বহা : আয়াত শরীফ ১১৪)
স্মরণীয় যে, পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের নুযূল খাছ কিন্তু হুকুম ‘আম (ব্যাপক) অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত। এছাড়া এমন অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে যা সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করে নাযিল হলেও সেসবের হুকুম প্রকৃতপক্ষে উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মূল কথা হলো, উম্মতকে সর্বকাজে তাড়াহুড়া না করে বরং সাবধানতা বা সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১০২)
এখানে যদিও শত্রুদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলা হয়েছে; কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা দায়িত্ব-কর্তব্য। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرِتْ اَبـِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ لَا يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন ব্যক্তি একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না। (বুখারী শরীফ)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আব্দুল কায়িস গোত্রপতি ‘আশাজ্জ’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার মধ্যে এমন দু’টি গুণ বিদ্যমান রয়েছে যা মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন- সহনশীলতা এবং গাম্ভীর্য। (মুসলিম শরীফ)
বর্র্ণিত রয়েছে, আব্দুল কায়েস আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্রের নাম। একবার সেই গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল গোত্রপতি হযরত মুনযির ইবনে আয়ায উরফে আশাজ্জ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন। পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছেই হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকলেই তাড়াহুড়া করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হলেন। সফরের ধুলাবালি ও ময়লাযুক্ত জামা-কাপড় ইত্যাদি কিছুই পরিবর্তন করেননি। কিন্তু হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এরূপ করলেন না, বরং তিনি প্রথমে হাত-মুখ ধুলেন, সফরের জামা-কাপড় পাল্টালেন এবং উত্তম পোশাক পরিধান করে খুব ধীরস্থিরভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন।
হযরত সাহল ইবনে সা’দ আসসায়িদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ধীরস্থিরতা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হয়ে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, চিন্তা-ফিকির করে কোন কাজ করুন। যদি এর পরিণাম উত্তম বলে বিবেচিত হয়, তাহলে উহা সম্পাদন করুন আর যদি মন্দের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা হতে বিরত থাকুন। (শরহে সুন্নাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সারজাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উত্তম চাল-চলন, ধীরস্থিরতা এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন নুবুওওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ।
এখানে নুবুওওয়াতের বিভাজ্য বলতে নুবুওওয়াতের অংশ নয়। কেননা, নুবুওওয়াতকে বিভক্ত করা যায় না। বরং এর অর্থ হলো উক্ত স্বভাবগুলো হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বভাব-চরিত্র মুবারক উনার অংশ বিশেষ।
অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক কাজই ধীরেসুস্থে করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তবে আখিরাতের আমল ইহার ব্যতিক্রম। (আবূ দাউদ শরীফ)
অর্থাৎ আখিরাতের কাজে দেরী করা উচিত নয়। তাই বলা হয়, দুনিয়ার কাজ এরূপভাবে করো যেন তুমি সর্বদা বেঁচে থাকবে। আর আখিরাতের কাজ এভাবে করো যেন তুমি কালই ইন্তিকাল করবে।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার
সেই লোকের যে স্ত্রী ছিল সেও ভাসতে ভাসতে এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সে এমন এক লোকের বাড়ীর পাশে গিয়ে পৌঁছল, যে লোকটা ছিল নেককার, দ্বীনদার, পরহেজগার, আল্লাহওয়ালা। সে সকালে যখন সেই মহিলাকে দেখলো তখন চিন্তা করলো, কোথা থেকে এই বেগানা মহিলা এখানে আসলো? পরে তারা বুঝতে পারলো, নৌকা ভেঙ্গে এখানে এসেছে। তাই সেই লোকটা মহিলাকে আশ্রয় দিল এবং কয়েক বছর ওখানে রাখলো। যখন নেককার লোকটি সংবাদ পেলো, একজন লোক, সে খুব দানশীল, গরীবকে সাহায্য করে থাকে। তখন সেই নেককার লোকটা যার অবস্থা মোটামুটি ছিল সে বললো, “আমি আর কতদিন তোমাকে লালন-পালন করবো? তুমি এক কাজ করো, আমার সাথে চল, সেই নেককার লোকের কাছে তোমাকে পৌঁছে দেই, সে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা তার কাছে সাহায্য নিয়ে আসি, তোমার চলাচলের জন্য যেন সুবিধা হয়। ”
এই বলে সেই মহিলাকে সে নিয়ে আসলো এক নৌকা দিয়ে। এনে তার ঘাটে বেঁধে সেই দানশীল লোকের কাছে সে পরামর্শ করলো কি করা যেতে পারে? সে কিছু দান-খয়রাত করলো। রাত অনেক হয়ে গেল। সে দানশীল ব্যক্তি বললো, তুমি এত রাতে যাবে কোথায়? তুমি থাক, তোমার থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন সে বললো যে, আমি তো একা নই, আমার সাথে আমার নৌকাতে একজন মহিলা রয়েছেন। যার জন্য আমি তোমার এই দান খয়রাতগুলো গ্রহণ করেছি। সে অভাবগ্রস্থা। তখন সেই পুরুষ বললো- তাহলে এক কাজ করো। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আমি লোক দিচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না। পাহারা দেয়ার জন্য লোক দিলো, সেই ছেলে দু’টাকে দিল পাহারা দেয়ার জন্য।
সেই ছেলে দু’টা এখানে এসে সৎচরিত্রবান, নেককার, পরহেজগার, দ্বীনদার এবং তাদের সততায় তারা এখানে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করে নেককার হিসেবে। যেহেতু তারা সৎচরিত্রবান ছিল সে জন্য সেই ছেলে দু’টাকে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হলো, সেই নৌকার পাশে যখন তারা গিয়ে পৌঁছল, তখন তারা পরস্পর বললো যে, “আজকে রাত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কি করবো সারা রাতে? করার তো কিছু নেই। এক কাজ কর তুমি কোথা থেকে এখানে আসলে? আর আমি বা কোথা থেকে আসলাম? আমরা পরস্পর আমাদের পিছনের জীবনের কথা আলোচনা করি, তাতে রাত্র শেষ হয়ে যাবে। ”
তখন প্রথম যে ছেলেটা সেখানে এসেছে, সে তার ইতিহাস বর্ণনা করলো যে, আমরা এরকম ছিলাম, খুব সুখে ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আমার পিতা, আমার এক ভাই, আমার মা ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আমরা, আমার দাদার ঋণ পরিশোধ করে শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যাই, সম্বলহীন হয়ে যাই। তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলাম, নৌকা ভেঙ্গে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাই। কে কোথায় গিয়েছি? তার সংবাদ আমাদের জানা নেই, আমারটা আমিই জানি।
যখন প্রথম ছেলে একথা বললো, তখন দ্বিতীয় ছেলেটা বললো, তোমার পিতার নাম কি? সে জবাব দিল। তখন সেই ছেলেটা বললো যে, দেখ তুমি তোমার যে ভাইকে তালাশ করতেছিলে আমি মনে হয় তোমার সেই ভাই। আমার জীবনের ঠিক একই ঘটনা। আমরা দুই ভাই ছিলাম এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পরিচয় হয়ে গেল। সেই মহিলা নৌকায় বসে বসে সেই ঘটনা শুনলো, শুনে সে চুপ করে রইলো, কথা সে বললো না। সকালে যখন সে পুরুষ আসলো, সে তাকে দেখলো বিমর্ষ, চিন্তিত। কি ব্যাপার? সে বললো, এখানে কথা বলা যাবে না, এখানকার এলাকার যিনি মালিক, ওনার কাছে যেতে হবে। ওনার কাছে আমার কিছু কথা রয়েছে, আমি বললে হয়তো তারা (ছেলেরা) শুনবে না।
ঠিক আছে সেই লোক অপারগ হয়ে সেই মহিলাকে নিয়ে গেল সেই লোকের কাছে। সে বলল কি? কেন নিয়ে এসেছ? জবাব দিল, সে মহিলার কিছু কথা রয়েছে। লোকটা প্রথমে একটু উত্তেজিত হয়ে গেল। কি ব্যাপার? কোন অঘটন কি ঘটিয়েছে তারা? সে মহিলা বললো যে, না ‘তেমন কিছু ঘটেনি। ’ যেহেতু তার চেহারা আবৃত করা ছিল। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। ‘তবে গত রাতে তারা একটা গল্প বলেছিল, সে গল্পটা আমি আবার শুনতে চাই। তারা যেন আবার বলে। ’
ছেলে দু’টোকে ডাকানো হলো। ডেকে বলা হলো যে, তারা যে গত রাতে কাহিনী বলেছে, সেটা আবার বলতো। পুনরায় সেই কাহিনী যখন সেই ছেলে দু’টা বলল, তখন সেই লোকটা তার আসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো যে, সত্যিই যদি এই ঘটনা সত্যই হয়ে থাকে তাহলে তো তোমরাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের পিতা। যখন সে পরিচয় দিল, তখন সেই মহিলা বললো যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কসম আমিই তাদের মাতা। ’ যেই ঘটনা বাস্তব সত্য, সেটা তাদের মুখ দিয়ে আবার শুনার জন্য আমি বলেছি তাদের বলার জন্য। অন্য কোন কারণে নয়। তখন পরিচয় হয়ে গেল। তারা আবার পরস্পর সেখানে সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলো।
তাদের প্রতি গায়েবী নেদা হলো ঐ ছেলের প্রতি, যে ছেলে তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল যে, “তুমি তোমার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলে, কষ্ট করেছো। মহান আল্লাহ পাক তোমাকে তার বদলা, জাযা-খায়ের দিয়েছেন। তোমাকে ইহকালে সুখ দেয়া হলো এবং পরকালে তোমার জন্য সুখ অপেক্ষা করতে থাকলো। ” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَا تَـجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
অর্থ: তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাকো, সেভাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করো না। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর : আয়াত শরীফ ৬৩)
ট্যাগসমূহঃ
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلٰوةُ الْـمَرْاَةِ تَفْضُلُ عَلٰى صَلَاتِـهَا فِـى الْـجَمْعِ خَـمْسًا وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً.
অর্থ : হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ার মধ্যে পঁচিশগুণ ফযীলত বেশি রয়েছে। (দায়লামী শরীফ ২য় খ-: ৩৮৯ পৃষ্ঠা)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ উনাদের উপর ভিত্তি করেই আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত খিলাফতকালে মহিলাদেরকে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিষেধ করেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّه نَـهَي النِّسَاءَ عَنِ الْـخُرُوْجِ اِلَـى الْـمَسَاجِدِ فَشَكَوْنَ اِلٰى اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَتْ اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ الصِّدِّيْقَةُ عَائِشَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ لَوْ عَلِمَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا اَذِنَ لَكُمْ فِي الْـخُرُوْجِ.
অর্থ : হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে বাইরে বের হয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। অতঃপর মহিলা উনারা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলে তিনি জাওয়াবে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি আপনাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তাহলে তিনি যে হুকুম মুবারক দিতেন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সেই হুকুম মুবারকই দিয়েছেন অর্থাৎ উনার মতো তিনিও আপনাদেরকে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিতেন না। (মুহীতুল বুরহানী)
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَا كَانَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ وَلَا يَرْغَبُوا بِأَنْفُسِهِمْ عَنْ نَفْسِهِ
অর্থ : আরব, আযম কারো জন্য জায়েয হবে না শাহিদুন নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে পিছিয়ে থাকা এবং উনার থেকে নিজেদেরকে বেশী প্রধান্য দেয়া। (পবিত্র সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১২০)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিজের পিতা-মাতা, আল-আওলাদ, ধন-সম্পদ এমনকি নিজের জানের চেয়েও বেশী মুহাব্বত করতে হবে।
কাফির মুশরিক বেদ্বীন বদদ্বীনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, তাদেরকে অনুসরণ করা ও ভাল মনে করা হারাম ও নাজায়িয
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত মুসলমানদের জন্য উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অবশ্যই তোমাদের সকলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ২১)
মুসলমানদের জন্য প্রত্যেক অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। পোষাক থেকে শুরু করে উঠা বসা, চলাফেরা, খাওয়া, ওযূ, ইস্তিঞ্জা, ঘুম অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব অবস্থায় সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। তবেই উনারা ইহকাল ও পরকালে সব অবস্থায় সব জায়গায় কামিয়াবী হাছিল করবেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার প্রিয়তম হাবীব মাহবূব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত (সন্তুষ্টি) পেতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ করো। তাহলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাখাতা ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদের প্রতি দয়ালু হবেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ৩১)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ থেকে জানা গেলো যে, যে বান্দা-বান্দী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা বা অনুসরণ অনুকরণ করবেন উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহব্বত করবেন অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু হবেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি উনাদের গুনাহখতা ক্ষমা করবেন অর্থাৎ উনারা নিষ্পাপ হয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনাদের প্রতি দয়ালু হবেন। অর্থাৎ সারা কায়িনাতের মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি দয়ালু হয়ে ইহকালে ও পরকালে গায়েবী মদদ বা সাহায্য করবেন, সন্তুষ্টি রেযামন্দি, মুহব্বত মা’রিফাত তায়াল্লুক, নিসবত, কুরবত মুবারক দান করবেন। ফলে উনারা কামিয়াবী হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ!
কাফির মুশরিক বেদ্বীন বদদ্বীন যারা রয়েছে এদেরকে কখনো অনুসরণ করা যাবে না, এদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবেনা। উঠা বসা করা যাবে না। যদি কোন মুসলমান এদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে অথবা এদের চাল-চলন অনুসরণ করে, এদের সাথে উঠাবসা করে তবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভুক্ত হবে। নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা কাফির-মুশরিকদের এবং মুনাফিকদের অনুসরণ করোনা। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, সুনানে আবু দাউদ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে কাফিরদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার তাওফিক দান করুন।