হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (৩য় পর্ব)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চূড়ান্ত কবুলিয়াতে বিষয়টি পরিস্ফুটিত হয়েছে। যার কারণে উনাদের ইখতিলাফও হিদায়েতের কারণ এবং তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে উনাদের যে কাউকে, যে কোন ব্যক্তি, যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি হিদায়েত লাভ করবে বা হিদায়েতের উপর থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দোষ-ত্রুটি বা উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা (যদিও উনাদের কোন দোষ-ত্রুটি নেই), উনাদেরকে দোষারোপ করা, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
এদের সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيَأْتِيْ قَـوْمٌ يَسُبُّـوْنَـهُمْ وَيَـنْـتَقِصُوْنَـهُمْ فَلاَ تُجَالِسُوْهُمْ وَلاَ تُـؤَاكِلُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُـوْهُمْ ,وَلَا تُـنَاكِحُوْهُمْ وَفِىْ رِوَايَةٍ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ وَلَاتَدْعُوْلَهُمْ
অর্থ: হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “শীঘ্রই একটি দল বের হবে, যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করবে, উনাদেরকে নাকিছ বা অপূর্ণ বলবে। সাবধান! তোমরা তাদের মজলিসে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে বিবাহ-শাদীর ব্যবস্থা করবে না। অন্য রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে, তাদের পেছনে নামায পড়বে না এবং তাদের জন্য দোয়া করবে না।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَيْـتُمُ الَّذِيْنَ يَسُبُّـوْنَ أَصْحَابِيْ فَـقُوْلُوْا: لَعْنَةُ اللهِ عَلَى شَرِّكُمْ
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষারোপ করতে দেখবে, তখন তোমরা বলো, এ নিকৃষ্ট কাজের জন্য তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত বর্ষিত হোক।” (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ عُوَيْمِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللهَ اخْتَارَنِيْ، وَاخْتَارَ لِيْ أَصْحَابًا، فَجَعَلَ لِيْ بَيْنَهُمْ وُزَرَاءَ، وَأَنْصَارًا، وَأَصْهَارًا، فَمَنْ سَبَّـهُمْ فَـعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لا يُـقْبَلُ مِنْهُ يَـوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ"
অর্থ: “হযরত উয়াইম ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)
বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “ইসাবা” কিতাবের ১ম খ-ে প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ হাফিয আবূ যারআ রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিম্নোক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন-
اِذَا رَاَيْتَ الرَّجُلَ يَـنْقِصُ اَحَدًا مِّنْ اَصْحَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاعْلَمْ اَنَّهٗ زِنْدِيْقٌ
অর্থ: “যখন কাউকে দেখবে যে, সে কোন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবমাননা করছে, তখন তুমি জানবে, সে ব্যক্তি নির্ঘাত যিন্দিক তথা কাফির।”