একশ'জন আলেমের একশ'টা মাসয়ালার জবাব দিয়ে দিলো আল্লাহর ওলীর বাগানে কাজ করা এক মুরিদ...

হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খুব বড় ওলী। উনি কেমন করে মহান আল্লাহ পাক উনার বড় ওলী হলেন? হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খারকান প্রদেশের লোক ছিলেন। প্রথম জীবনে উনি তেমন লেখাপড়া জানতেন না। ক্ষেত-খামারে কাজ করতেন। কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। আর কি করতেন?

সুলত্বানুল আরেফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ-এ যেতেন প্রতিদিন। ইশা’র নামায পড়ে ওখানে সারা রাত্র থাকতেন। ফজর পড়ে আবার চলে আসতেন।

উনি যখন চলে আসতেন, উনি কি বলতেন জানেন? বলতেন যে, মহান আল্লাহ পাক! সুলত্বানুল আরিফীন বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনার খাছ ওলী, উনার উছীলায় আমাকে কিছু নিয়ামত দান করুন।

এভাবে হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতিদিন ইশা’র নামায পড়ে ওযূ সহ চলে যেতেন, আবার সেখানে যিকির- আযকার করে ফজর নামায পড়ে আবার প্রত্যাবর্তন করতেন প্রতিদিন। এরকম করতে করতে, কোন কোন রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে, চল্লিশ বৎসর উনি করলেন এরকম।

উনি যখন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ থেকে বাড়ীর দিকে ফিরতেন, উনি কখনো পিছন দিয়ে আসতেন না। সামনে মুখ করে পিছনে হেঁটে হেঁটে আসতেন, যতদূর পর্যন্ত মাযার শরীফ দেখা যেত। যখন আর মাযার শরীফ দেখা যেত না তখন উনি স্বাভাবিক হেঁটে বাড়ীতে চলে যেতেন। উনি পিছনে করে হেঁটে আসতেন।

যেদিন চল্লিশ বৎসর পুরা হয়ে গেল সেদিন হঠাৎ উনি দেখলেন- সেই কবরের মধ্যে, মাযার শরীফের মধ্যে একটা আওয়াজ হলো- বিরাট আওয়াজ, বিকট আওয়াজ। উনি ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন, সেই কবরটা ফেঁটে, মাযার শরীফ ফেঁটে দু’ভাগ হয়ে একজন লোক দাঁড়ায়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। উনি থেমে গেলেন। যিনি বের হয়েছেন মাযার শরীফ থেকে, তিনি ডাক দিলেন এদিকে আসুন। উনি আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে মাযার শরীফ-এর সামনে গেলেন।

মূলতঃ সেই মাযার শরীফে ছিলেন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম কি? উনি বললেন, আবুল হাসান।

থাকেন কোথায়? খারকান শহরে।

কি করেন? ক্ষেত-খামারে কাজ করি। কিছু যিকির-আযকার, কিছু তাসবীহ-তাহ্লীল করি।

এখানে কি করেন? এখানে প্রতিদিন ইশা’র পরে আসি, ফজর নামায পড়ে চলে যাই।

কি বলেন এখানে আপনি? আমি এখানে বলি, “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার ওলী সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি এখানে শায়িত আছেন উনার উসিলায় আমাকে কিছু নিয়ামত দান করুন। ”

এভাবে কতদিন হলো? আজকে ৪০ বৎসর।

এরপর হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতটা নিয়ে উনার পিঠের মধ্যে আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, আমিও সুলত্বানুল আরিফীন, আজ থেকে আপনিও সুলত্বানুল আরিফীন যান। সুবহানাল্লাহ!

হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনি যখন সেখান থেকে বাড়ীর দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন, উনার ভিতরে ইলমে লাদুন্নী প্রবেশ করতে লাগলো। সুব্হানাল্লাহ! আস্তে আস্তে উনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হয়ে গেলেন।

উনি লোকদেরকে বাইয়াত করাতে লাগলেন। উনার হাতে লোকেরা বাইয়াত হতে লাগলো। ঐ এলাকায় একটা বড় মাদ্রাসা ছিল। সেখানে কিছু উলামায়ে হক্ব ছিলেন। উনারা মনে মনে চিন্তা করলেন- আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো কোন লেখাপড়া জানতেন না, তিনি লোক বাইয়াত করান, একটু পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য উনারা একশ’টা মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার জন্য রওয়ানা হলেন।

তখন আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি উনার ঘরের বারান্দায় পায়চারী করতেছিলেন। উনার ঘরের সামনে একটা বাগান ছিল, বাগানের মধ্যে একজন মালী কাজ করতেছিল। যখন সেই সমস্ত আলেম সম্প্রদায় মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করার জন্য আসতেছিল, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই মালীর প্রতি একটা দৃষ্টি দিলেন। দৃষ্টি দেয়ার সাথে সাথে মালীটা মস্তান হয়ে গেল, মজ্জুব হয়ে গেল। সে লাফাতে লাগলো।

লাফাতে লাফাতে বলতে লাগলো, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন। এই যে আলেম সম্প্রদায় আসতেছেন, উনারা আপনাকে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করবেন। আপনি কি আর জবাব দিবেন, আমিই জবাব দিয়ে দিই।

সেই মালী এক এক করে সেই একশ’জন আলেমের নাম বলে তাদের মাসয়ালা বলে জবাব দিয়ে দিল। সুব্হানাল্লাহ! তখন সেই সমস্ত আলেম উনার কাছে গিয়ে বাইয়াত হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!

image