হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
অর্থাৎ আপনারা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তারা (অন্য লোকেরা) ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারে তাহলে তারা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ : আয়াত শরীফ ১৩৭)
এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(১৯)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন আবু জাহেলকে হত্যা করতে না পারলে বাড়িতে জায়গা দেয়া হবে না!
হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি হচ্ছে একজন আনছার মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। উনার সাত ছেলে। বড় ছেলের বয়স বড়জোর ১৫-১৬ হবে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভাল, উঁচা-লম্বা, দাড়ি-মোচ তখনো উঠে নাই। বদর জিহাদের সময় তিনি উনার বড় ছেলে আর দ্বিতীয় ছেলের সাথে চুক্তি করলেন যে, এরকম আমরা শুনেছি যে, আবূ জাহিল সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে। এ জিহাদে সে আসলে তাকে হত্যা করতে হবে। উনার দুই ছেলের সাথে উনি চুক্তি করলেন। উনার বাকি ছেলেরা আরো ছোট। তিনি উনার দুই ছেলের সাথে চুক্তি করলেন যে, আপনারা জিহাদে যাবেন এবং আবূ জাহিলকে হত্যা করবেন। আপনারা যদি শহিদও হয়ে যান, এতে আমার কোনো দাবি নাই। কিন্তু আবূ জাহিলকে যদি হত্যা করতে না পারেন তাহলে আপনাদের আমার বাড়িতে জায়গা নাই, এখানে আসতে পারবেন না। তাকে হত্যা করতে গিয়ে যদি আপনারা শহিদ হয়ে যান, শহিদ হয়ে যাবেন। কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতে হবে শর্ত।
উনারা জিহাদে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেকের জিহাদে দাঁড়ানোর জায়গা ঠিক করে দিলেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুব বড় পালোয়ান, উনার দুই পাশে দুইজনকে দাঁড় করিয়েছেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই পরবর্তীতে বর্ণনা করেছেন যে, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, দেখলাম আমার দুই পাশে দুইজন ছেলে, দাড়ি নাই, মোচও নাই। এই দুই ছেলে কী জিহাদ করবে! আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, তাহলে আমার নিরাপত্তাটা কেমন হবে? আমাকে যদি আক্রমণ করে তাহলে আমি কতটুকু প্রতিহত করতে পারবো? উনি চিন্তা করতেছেন।
যুদ্ধ তখনো শুরু হয়নি। তখন ডান পাশ থেকে একজন ছেলে যিনি আসলেন, উনি এসে কানে কানে বললেন, চাচা- আবূ জাহিল কোনটা? তো উনি বললেন, আপনি আবূ জাহিল দিয়ে কী করবেন? বাচ্চা মানুষ, হ্যাঁ? আবূ জাহিল তো বড় পালোয়ান। উনি বলতেছেন- আমি আমার সম্মানিত মা উনার সাথে চুক্তি করেছি। কী চুক্তি করেছেন? যে, আবূ জাহিলকে যেভাবেই হোক হত্যা করতেই হবে। আবূ জাহিলকে হত্যা না করতে পারলে আমার বাড়িতে জায়গা নাই, আর আমি যদি শহিদও হয়ে যাই তাতেও কোনো অসুবিধা নাই, কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে। যখন তিনি এ কথা বললেন, তখন আমি ভালো করে দেখলাম উনার চেহারা-ছূরত। চিন্তা করলাম- সর্বনাশ, অনেক সাহস। উপযুক্ত ছেলে। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি থাকেন, আমি দেখিয়ে দিবো। বলে উনাকে বসিয়ে দিলেন। আবার ঠিক বাম দিক থেকে আবার আরেক ছেলে আসলেন। এসে বললেন, চাচা- আবূ জাহিল কোনটা? তো উনি আবার উনাকে বললেন, হ্যাঁ? আপনি আবূ জাহিল দিয়ে কী করবেন? আবূ জাহিল তো অনেক বড় পালোয়ান। উনি একই কথা বললেন যে, আমি আমার সম্মানিত মা উনার সাথে চুক্তি করেছি। কী চুক্তি করেছেন? চুক্তি হলো যে, আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে, তাতে আমি যদি শহীদ হয়ে যাইও তাতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু তাকে হত্যা না করতে পারলে বাড়িতে আমার যাওয়া যাবে না। তাকে হত্যা করতেই হবে আমাকে।
এটা যখন উনি বললেন, তা উনি শুনে খুব আশ্চর্য হলেন। আবার ভাল করে দেখলেন। উনি বললেন, তখন আমার মনে খুব সাহস হলো যে, হ্যাঁ, আমার দুই পাশে দুইজন উপযুক্ত লোক আছে। এত সাহসী লোক তো পাওয়া যায় না। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই যখন যুদ্ধ শুরু হলো আবূ জাহিলকে দেখা গেলো, তখন উনি ইশারা দিলেন যে, ঐযে আবূ জাহিল। উনার বক্তব্য হচ্ছে, বলার সাথে সাথে মনে হয় একটা বাজ পাখি চড়–ইকে যেভাবে থাবা দিয়ে ধরে। দুইজন এত দ্রুত গেলেন যে, কল্পনাও করা যায় না। গিয়ে ঠিকই আবূ জাহিলকে ধরাশায়ী করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের একজনকে আক্রমণ করেছিলো আবূ জাহিলের ছেলে হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনও ঈমান আনেননি)। উনার একটা হাত কেটে ঝুলে গেছে। অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, এটা কেটে ফেলে দিন। তিনি বললেন, না আমি এটা ফেলবো না। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে যাবো, উনি যা বলেন।
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘটনা জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, উনি সব বিস্তারিত বললেন। উনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, কাছে আসেন। উনি ধরে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। তখন উনি বলতেছেন, এতে আমার হাতটি আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
ওই জিহাদে উনাদের দুই ভাইয়ের একজন শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু আবূ জাহিলকে উনারা ঠিকই হত্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
খুব চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কেমন ছিলেন, উনাদের সম্মানিত ঈমান মুবারক কেমন ছিলো, উনাদের ছহীহ সমঝ কি রকম ছিলো! একজন মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি যুদ্ধে যেতে পারছেন না। কিন্তু তিনি উনার দুই কিশোর ছেলেকে জিহাদে পাঠিয়ে দিলেন। চুক্তি করলেন, আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে। যদি উনারা দুইজন শহীদ হয়ে যান, হয়ে যাক কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আবূ জাহিলকে হত্যা করতে হবে। কেনো? সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে বেয়াদবী করেছে। তাহলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুহব্বতটা কেমন ছিলো! উনারা তাহলে কতটুকু বুঝতে পেরেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান-মান মুবারক কতটুকু! যে, উনার জন্য সমস্ত কিছু কুরবান করতে হবে, সবসময় দিতে হবে, মাল দিতে হবে, জান দিতে হবে, সবকিছু দিয়ে দিতে হবে। এবং উনারা তা-ই করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!