সহশিক্ষা, সহচাকরীর ভয়াবহতা: পৃথিবীজুড়ে নারী সংসদ সদস্যরা ব্যাপক হারে যৌন হয়রানির শিকার -আইপিইউ

মন্তব্য · 3842 ভিউ

পর্দার সুমহান বিধান লঙ্ঘন!

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৩৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা (মহিলারা) তোমাদের ঘরে অবস্থান কর এবং আইয়্যামে জাহিলিয়াতের ন্যায় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে রাস্তায় বের হয়ো না।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মহিলাদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করে রাস্তায় বের হতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ মহিলাদেরকে ঘর থেকে বের হতে হলে সৌন্দর্য চুপিয়ে রেখে বের হতে হবে। সেজন্য আপাদমস্তক ঢেকে বের হতে হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহিলারা পর্দায় থাকবে। যখন তারা বেপর্দা হয়, তখন শয়তান তার দিকে উঁকিঝুকি দিতে থাকে কিভাবে তাদের দ্বারা গুনাহর কাজ করানো যায়।” নাউযুবিল্লাহ!

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বেগানা পুরুষ-মহিলার কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান হারাম। এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে একাকী হলেই তাদের তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান তথা তাদের উভয়কেই গুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে।” (তিরমিযী শরীফ)

সম্মানিত পর্দার সুমহান এই বিধান লঙ্ঘনের কারণে সমাজে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সমাজে সহশিক্ষা, সহচাকরী চালু করায় সমাজ ব্যবস্থায় মারাত্মক অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকিয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, গর্ভপাত ইত্যাদি।

সম্মানিত পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে সহশিক্ষা, সহচাকুরী করায় সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি জনগণের কথিত প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ সদস্যরাও জড়িয়ে পড়ছে পরকিয়া, অবৈধ গর্ভধারণ, গর্ভপাত, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌন হয়রানীর মতো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও সমাজ বিরোধী অবৈধ কাজে।

এ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন দেশের সংসদে নারী সংসদ সদস্যদের উপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে ‘ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন’ (আইপিইউ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত অ্যাসেম্বলিতে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) হলো, মুসলিম দেশসহ বিশ্বের ১৭৮টি দেশের জাতীয় সংসদ এই ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সদস্য এবং ১২টি আঞ্চলিক সংসদও এটির সহযোগী সদস্য।

ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউর সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পৃথিবীজুড়ে নারী সংসদ সদস্যরা ব্যাপক হারে যৌন হয়রানি এমনকি সহিংসতার শিকার হচ্ছে।’

বিশ্বের ৫টি অঞ্চলের ৩৯টি দেশের ৫৫ জন সংসদ সদস্যের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে নারী সাংসদদের ৮০ শতাংশ মানসিক ও যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা বলেছে। যাদের মধ্যে ৬৫.৫ শতাংশ নারীই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুংগং বলেছে, এটি কিছুসংখ্যক নারী এমপিকে নিয়ে করা একটি জরিপ হলেও, এটা পরিষ্কার যে এই সমস্যা আরও অনেক বিস্তৃত এবং আমরা যা ধারণা করি তার চেয়েও বেশি ঘটনা খবরের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

৪৪ শতাংশ বলেছে মৃত্যুর হুমকি যেমন পেয়েছে, তেমনি সম্ভ্রমহরণ, মারধর কিংবা অপহরণের হুমকিও পেয়েছে। এমনি সন্তানদের হত্যা কিংবা অপহরণের হুমকিও এসেছে।

যৌন নির্যাতনকে তারা বর্ণনা করেছে অনেকটা ‘সাধারণ চর্চা’ হিসেবে। ২০ শতাংশ নারী এমপি তাদের সাথে যৌন নির্যাতন হয়েছে বলে জানিয়েছে এবং তার সাত ভাগের বেশি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বলেও জানায়।

আমাদের দেশেও সম্প্রতি এক পুরুষ প্রতিমন্ত্রীকে যৌন হয়রানী করার অভিযোগে মন্ত্রী সভা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য এরকম অনৈতিক ঘটনা আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে অহরহ ঘটছে। সম্মানিত পর্দা উনার বিধান লঙ্ঘন করে সহশিক্ষা ও সহচাকুরীর কারণে অবাধ মেলামেশার সুযোগ তৈরী হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই অবাধ মেলামেশার যে পরিবেশ করে দেয়া হয়েছে, তারই শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বকারীরা। এই ভয়াবহ অপরাধ থেকে বাঁচতে হলে মুসলিম অমুসলিম সকল দেশে সর্বক্ষেত্রে সম্মানিত পর্দা উনার বিধান জারী করা আবশ্যক। অন্যথায় এই অবাধ মেলামেশার মতো গর্হিত অপরাধ বন্ধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

মন্তব্য
অনুসন্ধান করুন