হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের ঘটনা মুবারক

Comments · 105 Views

হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের ঘটনা মুবারক

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদিনাতুল মুনাওয়ারা শরীফে তাশরীফ মুবারক এবং হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের ঘটনা মুবারক:-

লেখক:- সাইয়্যিদ মুহম্মদ ছোয়াদ

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৫৭০ খৃষ্টাব্দ-এ পবিত্র মক্কাতুল মুকাররমা শরীফ উনার মধ্যে ১২ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুরিল আযম শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার পূর্বে উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহিল মুকাররাম (হযরত আব্দুল্লাহ) আলাইহিস সালাম) তিনি মহাসম্মানিত বিছাল শরীফ লাভ করেন। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী দৃষ্টিতে বয়স মুবারক ৬ বছরের বালক ছিলেন তখন উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত বিছাল শরীফ লাভ করেন। অতঃপর উনার দায়িত্ব মুবারক উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহি (হযরত আব্দুল মুত্তালিব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতঃপর উনার চাচা (সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম) তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ই গ্রহণ করেন।

যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী দৃষ্টিতে বয়স মুবারক ৪০ বছর বয়স মুবারক হলেন, তখন থেকে তিনি সম্মানিত মক্কাতুল মুকাররমা শরীফে ১৩ বছর মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে মানুষদেরকে আহবান করেন। তারপর তিনি সম্মানিত মদিনাতুল মুনাওয়ারা শরীফে হিজরত করেন। যখন হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার হিজরত মুবারক-এর কথা জানতে পারলেন তখন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুল মাগফিরাত মুবারকে (সম্মানিত হাত মুবারকে) সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন।

অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক- সম্পর্কে এবং হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের ঘটনা মুবারক বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:- আমি ইরানের (أَصْبَهَانُ) আসবাহান নামক এক স্থানের অগ্নিপূজক ছিলাম এবং আমি আগুনের বাসিন্দা ছিলাম যে আগুন আমরা জ্বালিয়ে দিতাম। এক সময় নাছারা-এদের আদেশ ও তাদের ধর্মের মধ্যে মূল যার নাম হচ্ছেন (اَلصَلَاةٌ) নামাজ। তা আমাকে আশ্চর্য করে দেয়, তারঃপর আমি তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা বললো:- আপনি (شَامٌ) সা'ম নামক এক শহরে চলে যান।

আমি সা'ম-এ গেলাম। সেখানে (اَلْأُسْقُفٌ) উসকুফ নামক এক গির্জার মালিকের কাছে থাকতে লাগলাম। আমি নামায পরতাম, খিদমত করতাম, শিক্ষা অর্জন করতাম। সে ছিলো তার ধর্মের একটা খারাপ মানুষ। এভাবে এক সময় সে ইন্তেকাল করলো। তারপর আমাকে তার লোকেরা অন্য একজনের কাছে নিয়ে যায়, তারপর যখন সে লোক মৃত্যুশায়িত হয়। তখন তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি:- আমি এখন কোথায় যাবো? আমাকে পরামর্শ দিন। অতঃপর সে বললো:- হে বৎস! আমি কাউকে আমার মতো চিনি না, তবে (اَلْمُوْصِلُ) মুসিল নামক এক জনকে ছাড়া। অতঃপর সে ইন্তেকাল করলো।

তারপর মুসিল নামক এক সে ব্যাক্তির কাছে গেলাম, কিছু দিন থাকলাম। অতঃপর সেও মৃত্যুশায়িত হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে পরামর্শ দিন কোনো ভাগ্য নির্ধারণকারী বান্দার ব্যাপারে। তার অর্থাৎ (اَلْعَابِدٌ) / বান্দার নিকট গেলাম। কিছু দিন থাকলাম, সেও মৃত্যুশায়িত হলো। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম :- আমাকে পরামর্শ দিন। সে বললো আমি (اَلْعَمُّوْرِیَةٌ) আম্মুরিয়াহ নামক এক ব্যাক্তিকেই চিনি, তার নিকট জেতে পারেন। আমি তার নিকট থাকলাম।

অতঃপর সেও মৃত্যুশায়িত হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম :- আমি কার কাছে যাবো? আমাকে পরামর্শ দিন। সে বললো:- হে বৎস! আমি কাউকে চিনি না যার নিকট আপনাকে জেতে আদেশ দিবো। তবে আমাদের এই জামানার সর্বশেষ নবী ও রসূল (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিনি ইবরাহীম হানিফা উনার দ্বীন মুবারক নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। তিনি তাশরীফ মুবারক আনবেন পবিত্র মদিনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ উনার হাররাতাইন নামক এক স্থানে বা কোনো বর্ণনায় বলা হয়, ২ মহল্লার খেজুর গাছের বাগানের মধ্যে। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিদর্শন মুবারক গোপন নেই, তার মধ্যে ৩টি বিশেষ বিশেষ নিদর্শন মুবারক হলো:- (১) তিনি ছদক্বা-উনার ভক্ষণ করেন না বা খান না। (২) তিনি হাদিয়া গ্রহণ করেন। (৩) নিশ্চয়ই উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুন নুবুওয়াত মুবারক (সম্মানিত ঘাড় মুবারক) উনার মধ্যে খতমে নুবুওয়াহ উনার মোহর মুবারক বা সিল মুবারক রয়েছে। যখনই উনাকে দেখবেন আপনি চিনতে পারবেন। অতঃপর আপনি যদি উনার নিকট জেতে সক্ষম হোন, তাহলে অবশ্যই জেতে পারেন।

আমি উনার নিকট যাওয়ার জন্য বের হলাম। আমার পাশ দিয়ে একটি কাফেলা বা আরোহী দল অতিক্রম করলো এবং আমি তাদের সাথে গেলাম। (وَادِیْ الْقُرٰی) ওয়াদিল কুর নামক এক স্থানে পৌঁছালাম তখন তারা আমাকে ঠকিয়ে বা অভিচার চালিয়ে আমাকে এক ইহুদীর নিকট বিক্রি করে দেয় এবং সে ইহুদিও (اَلْقُرَیْظَةٌ) কুরাইজা গোত্রের ইহুদীর নিকট বিক্রি করে দেয়। তারপর আমি তার সাথে পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ-এ আসলাম ও তার সাথে থাকলাম এবং তার খেজুর গাছের বাগানে কাজ করতাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ-এর কুবা নামক স্থানে তাশরীফ মুবারক নিলেন এবং অবস্থান মুবারক করলেন। আমি একদিন খেজুর গাছের মাথায় ছিলাম এবং তার নিচে সে ইহুদী বসেছিলো।

সে ইহুদীর চাচার গোত্র থেকে এক ইহুদী তার কাছে আসলো এবং কুবা-তে একজন সম্মানিত ব্যাক্তির ব্যাপারে, সে সংবাদ দিলো। সে বললো:- আমার ধারণা নিশ্চয়ই পবিত্র মক্কাতুল মুকাররমা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসেছেন।

মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি যখনই এ কথা শুনলাম, সাথে সাথেই খুব দ্রুত গতিতে গাছ থেকে নিচে নামলাম এবং বললাম:- কি হয়েছে? কি সংবাদ? -একথা শুনে সে ইহুদী দাঁড়ালো এবং তার হাত দিয়ে আমাকে আস্তে প্রহার করে বললো:- এতে তোমার কী?

যখন সন্ধ্যা হলো আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একত্রিত করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করার জন্য কুবা -তে গেলাম। তারপর আমি উনার নিকট পৌঁছালাম এবং ভিতরে প্রবেশ করে সালাম দিলাম এবং উনার সাথে কিছু সংখ্যক হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার ছিলেন। উনাকে আমি বললাম:- ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কিছু খাদ্য ছদক্বার জন্য মান্নত করেছি। নিশ্চয়ই আপনাদের এগুলো প্রয়োজন। আমি শুনেছি যে, আপনারা এ বিষয়ে অধিক হক্বদার, তাই আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি।

অতঃপর তিনি উনার হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন:- আপনারা بسم اللّٰه الرحمن الرحیم বলে খাওয়া শুরু করুন। কিন্তু তিনি খেলেন না। আমি মনে মনে বললাম:- নিশ্চয়ই তিনি ছদক্বার মাল ভক্ষণ করেন না বা খান না। আর এটাই হলো উনার ১ম নিদর্শন মুবারক, পরের দিন আবার উনার নিকট কিছু খাবার নিয়ে আসলাম। এবং উনাকে সালাম দিয়ে বললাম:- ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দেখেছি আপনি কখনও ছদক্বার মাল ভক্ষণ করেন না। আমার নিকট কিছু খাবার আছে যা আমি আপনাকে হাদিয়া হিসেবে দিতে চাই, আপনি গ্রহণ করুন। উনার সামনে সেগুলো রাখলাম তিনি গ্রহণ করলেন এবং তিনি উনার হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তিনি বললেন:- আপনারা بسم اللّٰه الرحمن الرحیم বলে খাওয়া শুরু করুন। এবং তিনিও উনাদের সাথে খেলেন। আমি মনে মনে বললাম:- মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এটি ২য় নিদর্শন মুবারক, নিশ্চয়ই তিনি হাদিয়া গ্রহণ করেন। অতঃপর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহে আমি থাকতে লাগলাম।

অনেক দিন পর আবার আসলাম। তখন আমি দেখলাম তিনি জানাযার ঘাটির পিছন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং উনার আশেপাশে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার রয়েছেন। অতঃপর উনাকে সালাম দিলাম। তারপর আমি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুন নুবুওওয়াহ মুবারক (সম্মানিত ঘাড় মুবারক) দেখতে অগ্রসর হলাম। অতঃপর আমি কি চাই সেটা তিনি বুঝতে পেলেন, তখন তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চাদর মুবারক উঠালেন। অতঃপর আমি যখন উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুন নুবুওওয়াহ মুবারকে (সম্মানিত ঘাড় মুবারক) খতমে নুবুওওয়াত মুবারক উনার সিল মুবারক দেখলাম। যেরূপ বলেছিলো সে ব্যাক্তি, ঠিক তাই হলো। অতঃপর আমি সেখানে চুম্বন করলাম এবং অনেক কান্না করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ডাকলেন এবং বসলেন আমাকেও বসতে বললেন অতঃপর উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুরুল মাগফিরাত মুবারকে (হাত মুবারক) সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলাম।

Comments